সকল অপচয় কমিয়ে চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) সর্বোচ্চ বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। কেননা এর মাধ্যমেই দেশের উন্নয়ন বাজেটের প্রধান অংশটি খরচ করা হয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, সরকারি অপচয় কমিয়ে কীভাবে প্রকল্পের আওতায় জনগণকে সর্বোত্তম সেবা দেওয়া যায় সে বিষয়ে সবাই একমত পোষণ করেন। প্রকল্পের আওতায় সব ধরনের অহেতুক সফর বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে, প্রয়োজন অনুযায়ী অবশ্যই শিক্ষাসফর করে প্রকল্প প্রস্তুত করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাতে হবে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্রিন সিটি আবাসন প্রকল্পে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার জন্য বিছানা, বালিশ ও আসবাবপত্র অস্বাভাবিক মূল্যে ক্রয় দেখানোর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। রূপপুর বালিশকাণ্ডের ঘটনায় ৩৬ কোটি ৪০ লাখ ৯ হাজার টাকার গরমিল পাওয়া গেছে। এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেজন্য প্রকল্পের আওতায় আর থোক বরাদ্দ থাকছে না। প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি পণ্যের প্রচলিত বাজারমূল্য উল্লেখ করতে হবে। বাজারমূল্য নির্দিষ্ট করার পরেই প্রকল্পের আওতায় টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে। নামকাওয়াস্তে আর থোক বরাদ্দ থাকবে না। এছাড়া, প্রকল্পের খাতগুলোর পরিমাণ ও সংখ্যাও উল্লেখ করতে হবে।
বৈঠক প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দেশের সব সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সফল বৈঠক হয়েছে। আমরা অপচয় কমিয়ে শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন করে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে চাই। অনেক সময় দেখা যায়, প্রকল্পের টাকা খরচ করে ২২ ঘণ্টা উড়ে এক ঘণ্টার বিদেশ সফর করি। এমন অহেতুক সফর পরিহার করার কথা বলা হয়েছে। বালিশকাণ্ড যাতে আর না ঘটে, সেজন্য থোক বরাদ্দ আর থাকছে না।
তিনি বলেন, প্রকল্পের আওতায় দেখা যাচ্ছে বৈদেশিক ঋণের টাকা কম খরচ হচ্ছে। এটা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। আমরা শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন চাই অর্থবছর শেষে। অনেকে চার মাসে ভালো করেছে, অনেকে খারাপ করেছে। সার্বিক বিষয় নিয়ে একটা সফল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সূত্র জানায়, বৈঠকে সীমিত সম্পদের সুষ্ঠু ও বাস্তবভিত্তিক ব্যবহার নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। বিনা কারণে যেন প্রকল্প সংশোধন করে সময় না বাড়ানো হয়। কারণ সময় বাড়লেই প্রকল্পের ব্যয় বাড়ে ও জনগণের টাকা অপচয় হয়। ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্পের আবার মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব বিবেচনায় নেওয়া যাবে না। সংশ্লিষ্টদের প্রকল্পের বাস্তবায়ন মনিটরিং জোরদার করতে বলা হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুন থেকে অক্টোবর) এডিপি বরাদ্দের বিপরীতে মোট বাস্তবায়ন অগ্রগতির হার ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। এর মধ্যে সরকারি অর্থ ১৬ দশমিক ৯৭ , বৈদেশিক অর্থ ১০ দশমিক ৬৪ ও নিজস্ব অর্থায়ন ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ সময়ে এডিপির বাস্তবায়ন হার ছিল ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের হার গত অর্থবছরের তুলনায় কিছুটা বেশি।
তবে বৈদেশিক অর্থ খরচ কমেছে। চলতি অর্থবছরে মোট এডিপি বরাদ্দ ২ লাখ ১৫ হাজার ১১৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে চার মাসে ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণের অর্থ খরচ কমেছে। একই সময়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১০ দশমিক ৮২, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১২ দশমিক ১৫, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৮ দশমিক ৪০, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ খরচের হার ছিল ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
বৈঠকে সরকারের একমাত্র প্রকল্প তদারকি সংস্থা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্র জানায়, চলতি বছরের চার মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এক শতাংশও এডিপি বাস্তবায়ন করতে পারেনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ রয়েছে ১২১ কোটি ৪৭ লাখ ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের বরাদ্দ রয়েছে ৫৯৭ কোটি ৮২ লাখ।
অন্যদিকে চার মাসে চার শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করতে পারেনি রেলপথ, শিল্প, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পযর্টন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, আইন ও বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ।
চার মাসে ২০ শতাংশের উপর এডিপি বাস্তবায়ন করেছে নয়টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। সেগুলো হলো সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, সেতু বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৯
এমআইএস/একে