জানা গেছে, জামালপুরে প্রায় ৪৯টি বিড়ি কোম্পানি নামে বেনামে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করলেও মূলত তিন কোম্পানির বৈধতা রয়েছে। বাকি ৪৬টি বিড়ি কোম্পানি বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই বললেই চলে।
সরকার প্রতিটি ব্যান্ডরোলের ট্যাক্স সাত টাকা ৮৩ পয়সা নির্ধারণ করেছে, আর প্রতিটি বিড়ির প্যাকেটে ন্যূনতম ১৪টা শলাকা বিক্রি জন্য বলা হলেও নামে বেনামের এসব ভুয়া কোম্পানিগুলো নকল ব্যান্ডরোলের বিড়ি প্যাকেট বিক্রি করছে মাত্র সাত থেকে আট টাকা করে। আর এসব অসাধু ব্যবসায়ী ও কোম্পানির কারণে জামালপুর থেকে প্রতিমাসে চার কোটি ও বছরে ৫০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। জামালপুর সদরসহ, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ, সরিষাবাড়ি উপজেলার বিভিন্ন বাজারে আবাদ বিড়ি, বাদশা-২ বিড়ি, আজিম বিড়ি, জামাল বিড়ি, যমুনা বিড়ি, নবাব বিড়ি, পাখি বিড়ি, আফিজ বিড়ি, মিজান বিড়ি, সাথী বিড়ি, রাঙ্গা বিড়ি, আলম বিড়ি, স্বাধীন বিড়ি, সাইফ বিড়ি, কমল বিড়ি, রবি বিড়ি, আনার বিড়ি, বাদশা বিড়ি-১, ফ্রেস বিড়ি, রেড়িও বিড়ি, তার বিড়ি, রতনা বিড়ি, ময়না বিড়ি নামে প্রতিটি হাট-বাজারে নকল ব্যান্ডরোল ও ব্যান্ডরোলবিহীন বিড়ি বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা করে আসছে।
জামালপুর দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিম বাংলানিউজকে জানান, এসব অসাধু বিড়িব্যবসায়ী ও কোম্পানির কারণে জেলা থেকে প্রতিমাসে চার কোটি ও বছরে প্রায় ৫০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এসব দুর্নীতি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এসব কোম্পানির ক্রেতাদের অধিকার ক্ষুণ্ন করে বিড়ি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে বাজারে নকল ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে ব্যবসা করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার পাশাপাশি জনগণের সঙ্গেও প্রতারণা করে আসছে।
জামালপুর সার্কেল-১ ও সার্কেল-২ এর বিভাগীয় দপ্তরের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আব্দুল কুদ্দুস বাংলানিউজকে জানান, সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে যেসব নকল ব্যান্ডরোল ও ব্যান্ডরোলবিহীন বিড়ি কোম্পানি তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জামালপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ এনামুল হক বাংলানিউজকে জানান, নকল ব্যান্ডরোল ব্যবহারকারী ও কোম্পানিগুলো বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করে অসাধু কোম্পানি ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ সরকারের রাজস্ব আয় ও জনগণের স্বার্থে কাজ করা হবে।
সবমিলিয়ে নাম সর্বস্ব কোম্পানির বিড়ির ধূমপান করলে স্বাস্থ্যের যেমন চরম ঝূঁকি তেমনি সরকারের কোটি কোটি রাজস্ব আদায়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে সরকার এমনটি প্রত্যাশা সবার।
জামালপুরের রাঙামাটিয়ার মেসার্স আবুল বিড়ি মালিক হারুন-অর-রশিদ বলেন, আমারা সরকারি ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে তা বাজারজাত করি। ভোক্তাকে ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
আবাদ বিড়ির মালিক আব্দুল ওহাব মুন্সি বলেন, আমি প্রতিমাসে ৪২ হাজার টাকার ব্যান্ডরোল ক্রয়ে করে তা ব্যবহার করি। আমাদের বিড়ি বাজারের অন্তত প্রয়োজন প্রিয়। তাই আমাদের ব্র্যান্ডের ঈর্ষান্বিত হয়ে একশ্রেণীর মানুষ অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জামালপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া বলেন, রাজস্ব ফাঁকি বিষয়টি জেলা রাজস্ব বিভাগ দেখে, তামাক নিয়ন্ত্রণে আমাদের কোনো কাজ নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৯
এএটি