রোববার (১ ডিসেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, খেলাপি ঋণ বাড়ছে এটা সত্য, কিন্তু কেন বাড়লো তাহলে এটা বলবো অসত্য।
তিনি বলেন, আমরা একটি জায়গায় শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারিনি, সেটা হচ্ছে এনপিএল। এনপিএল বাড়ার একটি কারণ হলো আমাদের সুদহার অনেক বেশি। আমাদের মতো এত ‘হাই ইন্টারেস্ট রেট’ পৃথিবীর আর কোনো দেশে নেই। এনপিএল কমাতো পৃথিবীর অন্য দেশের মতো সুদহার কমাতে হবে। আমরা সবাই বসেছিলাম কীভাবে সুদহার কমানো যায় অথবা কমপিটিটিভ একটা এনভায়রনমেন্টে আনা যায়। সবাই আমরা একবাক্যে স্বীকার করেছি যে, সুদহার কমাতেই হবে। সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে আনতে হবে। সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে আনলে আমাদের এনপিএল অনেক কমে যাবে। সুদহার কমলে আমাদের সঙ্গে বিদেশিরা ব্যবসা করে শান্তি পাবে, কোনো প্রশ্ন করবে না। বিদেশিরা আমাদের এলসিগুলো গ্রহণ করবে।
ব্যাংক প্রসঙ্গে মুস্তফা কামাল বলেন, আমরা চাই যে উদ্দেশ্যে সরকার ব্যাংকগুলোকে অনুমোদন দিয়েছে সেই জায়গা থেকে তারা কাজ করবে। এনপিএল কমাতে হবে এবং সুদহারও কমাতে হবে। আমাদের বেসরকারি ব্যাংক অনেক এলাকা কাভার করে। আমাদের দেশের উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। এগুলো সম্ভব হয়েছে আমাদের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কারণে।
ব্যাংকঋণে সুদহার কমানো প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, সুদহার কমানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হবে। যত জন মেম্বার তিনি (গভর্নর) মনে করেন, কমিটিতে তত জন থাকবে। যারা রিপ্রেজেন্ট করবে ব্যাংককে, রিপ্রেজেন্ট করবে প্রাইভেট-পাবলিক খাতকে। তাদের সবাইকে নিয়ে গভর্নর একটি কমিটি গঠন করে দেবেন। কমিটি সব বিষয়ে নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেবে কারণ খুঁজে বের করে। আগামী সাতদিনের মধ্যেই তারা এই কাজ করবেন। কীভাবে আমরা সুদহার কমাবো এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য থাকবে। আমি বিশ্বাস করি আমাদের সুদহার কমবে, পাশাপাশি খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়বে না।
তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমদিন থেকে বলে এসেছি, খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়বে না। খেলাপি ঋণ যদি বাড়ে তবে কোথা থেকে বাড়ে। এদেশের সব নাগরিকের কাছ থেকেই খেলাপি ঋণ বাড়ে। তাদের সবার কষ্টার্জিত টাকা। আমি তাদের পক্ষ নিয়েই বলেছিলাম, খেলাপি ঋণ বাড়বে না। আমরা সঠিকভাবে সঠিক কাজ করতে পারলে সব কিছুই সম্ভব।
অর্থমন্ত্রী বলেন, সুদহার সিঙ্গেল ডিজেট করলে অনেক উপকার হবে। কোর্টের যে অর্ডার ছিল সেটি কিন্তু এখন আর নেই। রায়টি আমরা যেভাবে প্রত্যাশা করেছিলাম সেভাবেই পেয়েছি। কোর্টের অর্ডার বাস্তবায়িত হলেই ঋণখেলাপি কমে যাবে। আমরা বিশ্বাস করি, ৩১ ডিসেম্বর তারিখে আপনারা এর প্রতিফলন দেখতে পাবেন। ঋণখেলাপি বাড়বে না, বরং কমের দিকে আসবে। এর আগে টাকা দেওয়া বন্ধের কারণেই ঋণ খেলাপি বেড়েছিল।
উল্লেখ্য, ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুযোগ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারের ওপর হাইকোর্টের স্থিতাবস্থার আদেশ শর্তসাপেক্ষে দুই মাসের জন্য স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ফলে দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্টে নয় শতাংশ সুদে ১০ বছরে খেলাপি ঋণ পরিশোধের যে সুযোগ বাংলাদেশ ব্যাংক ওই সার্কুলারে দিয়েছিল, তা আপাতত কার্যকর থাকছে। তবে আপিল বিভাগ বলেছেন, কোনো ব্যবসায়ী এই সুবিধা নিলে দুই মাসের মধ্যে তিনি আর অন্য কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবেন না।
এসময় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৯
এমআইএস/একে