উদ্যোক্তারা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই উদ্যোগের ফলে অনলাইনে (ডিজিটাল প্লাটফর্মে) প্রচারের জন্য সবধরণের আর্ন্তজাতিক বিল পরিশোধ স্বচ্ছ হয়েছে। ফলে এখন থেকে অবৈধ চ্যানেলের পরিবর্তে বৈধ চ্যানেলে বিল পরিশোধ করতে পারবে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির বাংলানিউজকে বলেন, দেশে ডিজিটাল প্লাটফর্মে (ফেসবুক, গুগল এবং গুগলের অন্যান্য সেবা) বিজ্ঞাপনের বিল পরিশোধের জন্য এটি প্রথম উদ্যোগ।
ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠান আজকেরডিল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফাহিম মাশরুর বলেন, প্রথমবারের মত আমরা ডিজিটাল প্লাটফর্মে বিজ্ঞাপনের বিল পরিশোধের সুযোগ পেয়েছি।
বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর বলেন, সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের বিল পরিশোধের স্বচ্ছতার মাধ্যমে আমাদের শিল্পকে সহায়তা করবে।
‘তথ্য ও প্রযুক্তি এবং দেশের সফটওয়্যার খাতের বিদেশে অর্থ পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ সম্প্রতি একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এই প্রজ্ঞাপন জারির আগে উদ্যোক্তারা বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে ব্যাংকিং চ্যানেলে সফটওয়্যার ও হোস্টিং সেবা ও ডোমেইন হোস্টিংয়ের বিল পরিশোধ করতে পারতো বছরে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রজ্ঞাপন জারি করে ১০ হাজার ডলার বাড়িয়ে ৪০ হাজার ডলার করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মূদ্রা নীতি বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বেসিস সদস্য সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে আর্ন্তজাতিক কার্ডের মাধ্যমে এই অর্থ পরিমান পাঠাতে পারবেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন থেকে ৬ হাজারের পরিবর্তে প্রতিবার ৮ হাজার ডলার রিচার্জ করতে পারবে। ’
বেসিস সদস্যরা বেসরকারিখাতের ব্র্যাক ব্যাংক এবং ইস্টার্ন ব্যাংক থেকে দুটি কার্ড নিতে পারবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১২ সালে প্রথম কার্ড ইস্যুর সময় অনুমতি দেয় বছরে ১০ হাজার ডলার ব্যবহারের শর্তে। পরবর্তীতে চার দফায় অর্থের পরিমান আরও বৃদ্ধি করা হয়।
ফাহিম মাশরুর বলেন, ৪০ হাজার ডলার পরিমানে অনেক বেশি হলেও একটি বড় কোম্পানির জন্য যথেষ্ট নয়।
‘দেশে সোশ্যাল মিডিয়ার বাজার সুত্রে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো (ফেসবুক, গুগল, ইমো, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ, স্কাইপি) প্রতি বছর ২ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে আয় করছে এবং অধিকাংশ অর্থ অবৈধ চ্যানেলে নিয়ে যাচ্ছে। ’
ফাহিম মাশরুর বলেন, আমার মতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন এই প্রজ্ঞাপন পরিশোধ প্রক্রিয়া আরও সহজ হবে এবং অধিকাংশ পরিশোধ ব্যাংকিং চ্যানেলের আওতায় চলে আসবে।
বেসিসের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান (ডিজিটাল কমার্স) সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, আমরা এই অর্থের পরিমান ৫৫ হাজার ডলার করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক বৃদ্ধি করে ৪০ হাজার ডলার করেছে। এখন এটি পরিমানে খুব কম নয়।
আর্ন্তজাতিক লেনদেন সেবা প্রতিষ্ঠান মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল আরও বলেন, এখন থেকে ই-কমার্স কোম্পানিগুলো সহজেই তাদের প্রচারনার কাজ চালাতে পারবেন। একই সঙ্গে ডিজিটাল প্লাটফর্মে প্রচারের জন্য সরকারের রাজস্ব আয়ও নিশ্চিত হবে।
বর্তমানে বেসিসের ১৩২৭ জন সদস্য থাকলেও সীমিত সুবিধার কারণে মাত্র কয়েকজন এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করেন। ডিজিটাল প্লাটফর্মে বিজ্ঞাপন প্রচারের সুযোগ বৃদ্ধির ফলে বিজ্ঞাপন প্রচারনা আরও বাড়বে।
বেসিসের সদস্য নয় এমন ই-কমার্স এবং অন্যান্য ডিজিটাল কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত উদ্যোক্তারাও এধরণের সুবিধা প্রয়োজন বলে মনে করেন।
এবিষয়ে বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, বেসিস সদস্যের বাইরে উদ্যোক্তাদের নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি তবে সুবিধার বিষয়টি নিয়ে টিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এসব কোম্পানির সত্যতা যাচাই করার জন্য একটি প্রক্রিয়া গ্রহন করে পরবর্তীতে সীমিত আকারে কার্ড ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।
এই ধরনের সুবিধা প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)।
জানতে চাইলে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, আমাদের সদস্যদের বিশেষ কার্ড দিতে চাই। তবে বেসিস একটি বড় সংস্থা হিসেবে যারা সদস্য না তাদের যাচাই করার প্রক্রিয়া তৈরি করতে পারে।
বর্তমানে ই-ক্যাবের সদস্য সংখ্যা প্রায় ১ হাজার। প্রায় ২০ হাজার ফেসবুক ও ই-কমার্স ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যাদের ব্যবসা প্রসারের জন্য প্রচার চালানো দরকার বলে মনে করেন তমাল।
বাংলাদেশ সময়: ০২৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২০
এসই/এমএমএস