মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইফতেখার হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, বুধবার হাতিরঝিল এলাকায় অবস্থিত বিজিএমইএ ভবন ভাঙা হবে। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ভবন ভাঙার কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হাতিরঝিলের বিজিএমইএ ভবন ভাঙার বিষয় নিয়ে কিছুটা জটিলতার সৃষ্টি হয়। ওই ভবন থেকে লিফট, এসিসহ মূল্যবাণ সামগ্রী নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয় কর্তৃপক্ষ। এখন যেহেতু লিফট, এসিসহ অনেক মূল্যবান সামগ্রী নেই, সেহেতু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আগে তাদের দেওয়া দর কমানোর দাবি জানায়। তাদের দাবি অনুযায়ী, এক কোটি দুই লাখ টাকায় ভবনটি ভাঙায় সায় দেয় কর্তৃপক্ষ।
২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্ট এক রায়ে বিজিএমইএ’র বর্তমান ভবনটিকে ‘হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যানসারের মতো’ উল্লেখ করে রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে বিজিএমইএ লিভ টু আপিল করে, যা ২০১৬ সালের ২ জুন আপিল বিভাগে খারিজ হয়। রায়ে বলা হয়, ‘ভবনটি নিজ খরচে অবিলম্বে ভাঙতে আবেদনকারীকে (বিজিএমইএ) নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে। এতে ব্যর্থ হলে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজউককে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হলো। ’ পরে ভবন ছাড়তে উচ্চ আদালতের কাছে সময় চায় বিজিএমইএ। এরপর ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় ভবনটিতে তালা ঝুলিয়ে দেয়৷
এরপর রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবনটি ভাঙার দরপত্র আহ্বানের পর সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ভবনটি ভাঙতে কাজ পায় ‘সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের দরপত্র ছিল এক কোটি ৭০ লাখ টাকার। সে অনুযায়ী তাদের কার্যাদেশও দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে ভবন ভাঙার কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ায় সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স। শেষ মুহূর্তে সরে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে ১০ শতাংশ হারে টাকা কেটে নেয় রাজউক। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান ‘ফোর স্টার’ গ্রুপকে কাজ দেয় রাজউক। তাদের দরপত্রে টাকার পরিমাণ ছিল এক কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এখন তারা এক কোটি দুই লাখ টাকায় ভবনটি কাজ শুরু করবে।
সর্বশেষ গত বছরের ১২ এপ্রিলের মধ্যে তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ভবন সরিয়ে নিতে সময় দেন সর্বোচ্চ আদালত। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সময় পার হওয়ার পর নির্দেশনা বাস্তবায়নে গত ১৬ এপ্রিল মাঠে নামে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এরপর বিজিএমইএ ভবনে অভিযানে আসে রাজউক। প্রথম দিনই ভবনে থাকা বিভিন্ন অফিসের মালামাল সরিয়ে নিতে সুযোগ দিয়ে পরে ভবনটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। পরে অবশ্য আরও কয়েক দফা সুযোগ দেওয়া হয় মালামাল সরানোর জন্য।
২০০৬ সালের দিকে হাতিরঝিলে আড়াআড়িভাবে বিজিএমইএ ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়। জলাশয়ে ভবনটি নির্মাণ করায় শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছিলেন পরিবেশবাদীরা। পরে বিষয়টি আদালতে গড়ায়। বিজিএমইএ ভবন অপসারণে আপিল বিভাগের দেওয়া এক বছর সময় শেষ হয় গত ১২ এপ্রিল। ২ এপ্রিল সর্বোচ্চ আদালত ভবনটি অপসারণে বিজিএমইএকে এক বছর ১০ দিন সময় দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২০
জিসিজি/এফএম