বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব জানান, ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার কেরানীগঞ্জের পানগাঁওয়ে গড়ে ওঠা বিটুমিন প্ল্যান্ট আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করতে যাচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ। এটিই দেশের প্রথম বিটুমিন প্ল্যান্ট।
বিটুমিন জ্বালানি তেলের একটি বাই-প্রোডাক্ট পণ্য। এটি মূলত রাস্তাঘাট নির্মাণে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে বছরে বিটুমিনের চাহিদা কয়েক লাখ টন। এর পুরোটাই আমদানিনির্ভর। এর মধ্যে বিপিসির নিয়ন্ত্রণাধীন ইস্টার্ন রিফাইনারি ৭০ হাজার টন উৎপাদন করে। বাকি বিটুমিন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। তবে প্রায়ই বিদেশ থেকে নিম্নমানের বিটুমিন আমদানি করে সড়কে ব্যবহারের কারণে সড়ক টেকসই হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় দেশেই সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন বিটুমিন উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়ে নতুন প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা গ্রুপের বিটুমিন প্ল্যান্ট থেকে বছরে সাড়ে ৮ লাখ টন বিটুমিন ও পিচ উৎপাদন হবে।
বসুন্ধরা গ্রুপের চিফ মার্কেটিং অফিসার (সিমেন্ট সেক্টর) খন্দকার কিংশুক হোসাইন জানান, দেশের উন্নয়নের জয়যাত্রায় অংশীদার হতেই বসুন্ধরা গ্রুপ বিটুমিন প্ল্যান্ট চালু করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, বিশেষ করে সড়ক ও মহাসড়ক নির্মাণে বিটুমিনের চাহিদা পূরণে এই প্ল্যান্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পর আমরা উৎপাদিত উচ্চমানের বিটুমিন বিদেশে রপ্তানি করার পরিকল্পনা করছি। দেশের চাহিদা বাড়লে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর ব্যবস্থাও রয়েছে বসুন্ধরা বিটুমিন প্ল্যান্টে।
তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে বিটুমিনের চাহিদা প্রায় ৫ লাখ টন, এর ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। বাকি ১০ শতাংশ বিটুমিন সরবরাহ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্টার্ন রিফাইনারি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহারের কারণে বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল অনুযায়ী টেকসই হচ্ছে না। এতে দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশে প্রতি মাসে বিটুমিনের চাহিদা প্রায় ৪২ হাজার টন। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্প্রসারিত হওয়ায় প্রতি বছর এর চাহিদা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। সড়কে ব্যবহারের জন্য পেনেট্র্যাশন গ্রেডের বিটুমিন উৎপাদন ছাড়াও বসুন্ধরা বিটুমিন প্ল্যান্টে প্রিমিয়াম মানের পিচ উৎপাদনের সক্ষমতাও রয়েছে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী কাটব্যাক, ইম্যুলসিফাইড, অক্সিডাইজড ও পলিমার (এসবিএস, রাবার পাউডার) উৎপাদন ও সরবরাহ করা সম্ভব হবে। সাধারণ পেনেট্র্যাশন গ্রেড (৬০-৭০/৮০-১০০) ও উন্নত গ্রেডের বিটুমিন চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন ও সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের অধীনে ২২ হাজার কিলোমিটার সড়ক ও মহাসড়ক রয়েছে, এর বড় অংশই সম্প্রসারিত হচ্ছে। সরকার দেশের প্রতিটি জাতীয় মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। এছাড়া জেলা পর্যায়েও সড়ক সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সারাদেশে স্থানীয় সরকারের অধীনে ৩ লাখ ৫৪ হাজার কিলোমিটার রাস্তা হয়েছে, এর মধ্যে এক লাখ পাঁচ হাজার কিলোমিটার পিচঢালা পাকা রাস্তা। ভবিষ্যতে স্থানীয় সরকারের পুরো রাস্তাই পাকা করার পরিকল্পনা আছে সরকারের। ফলে দিন দিন বাংলাদেশে বিটুমিনের চাহিদা বাড়বে।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২০
এএটি