ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা, নজরদারি চান ব্যবসায়ীরা

গৌতম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২০
চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা, নজরদারি চান ব্যবসায়ীরা

ঢাকা: ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার পরও দফায় দফায় বাড়ছে সব ধরনের চালের দাম। গত এক মাসে প্রতি কেজি চালের দাম পাইকারি ও খুচরা বাজারে ৩ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে মিনিকেট চালের দাম। আর মোটা চাল কেজিতে ৩ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

চালের বাজারের এ অস্থিরতা রোধে বাজার নিয়ন্ত্রণে মিল মালিকদের ওপর নজরদারিতে গুরুত্বারোপ করেছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

অন্যদিকে বেঁচে থাকার জন্য জরুরি এ খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ক্রেতারা।

তবে চালের এ দাম বৃদ্ধিকে স্বাভাবিক মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, প্রতি বছর এসময় বিশেষ করে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে ধানের সরবরাহ কম থাকে। তাই সব ধরনের চালের দাম বেড়ে যায়। আবার এপ্রিলে যখন নতুন ধান আসে তখন আগের দামে ফিরে আসে। তবে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় পেছনে যদি এর বাইরে অন্য কোনো কারণ থাকে সেটা মিল মালিকরাই বলতে পারবেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানির পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে  জাত ও মানভেদে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল (সাধারণ) বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকায়, মিনিকেট (উত্তম) বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪৮ থেকে ৫৫ টাকা। নাজিরশাইল প্রতিকেজি (ভালো) ৬০ থেকে ৬২ টাকা, সাধারণ ৫৪ থেকে ৫৮ টাকায়, মাঝারিমানের পাইজাম ও লতা ৪২-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা আগে বিক্রি হতো ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। মোটা স্বর্ণা ও ইরি চাল ৩২-৩৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৩২-৩৫ টাকা।

পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট মানভেদে ৫০ টাকা। যা গত মাসে বিক্রি হয়েছিল ৪৫ টাকা, আর গত সপ্তাহে ৪৮ টাকা। নাজিরশাইল ৪৭ থেকে ৫১ টাকা। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৪৭ থেকে ৪৯ টাকা। গত সপ্তাহে ২৮ চাল প্রতিকেজি ৩২ থেকে ৩৪ টাকা বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে বেড়ে ৩৬ থেকে ৩৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইজাম ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৩২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা স্বর্ণা প্রতিকেজি ২৫ টাকা থেকে বেড়ে ২৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে মিলগেইটে গত দুই সপ্তাহে চালের দাম কেজিতে ২ টাকা বেড়েছে। প্রতিকেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৯ টাকা, যা আগেছিল ৪৭ টাকা। নাজিরশাইল প্রতিকেজি ৪৬ টাকা থেকে বেড়ে ৪৮ টাকা। ২৮ প্রতিকেজি ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৩২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইজাম প্রতি কেজি ২৮ টাকা থেকে বেড়ে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্বর্ণা প্রতি কেজি ২৫ টাকা থেকে বেড়ে ২৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।  

এবিষয়ে বাবুবাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি নিজাম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বছর এ সময় চালের দাম একটু বেশি থাকে। তাই এটা স্বাভাবিক বিষয়। কারণ এখন কোনো ধানের মৌসুম নয়। ধানের সংকটের জন্যই দাম বেড়েছে। আর পুরনো চাল প্রায় শেষ। নতুন চাল আসতে আসতে আরো দুই মাস লাগবে। তাই এপ্রিলের আগে আর চালের দাম কমবে না। এখানে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কোনো হাত নেই। তবে দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারকে  মিল মালিকদের ওপর নজরদারি বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, মিলগেইটে এক টাকা দাম বাড়লে তার প্রভাব খুচরা বাজারে ৫ থেকে ৭ টাকা পড়ে। মিল থেকে বেশি দামে কিনে আমাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।  

বাবুবাজারের পাইকারি চাল বিক্রেতা ও সরকার ট্রেডিং এজেন্সির মালিক মো. ইব্রাহিম বাংলানিউজকে জানান, গত এক মাসে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মিনিকেট চালের দাম।

বাবুবাজারের পাইকারি আড়তদার দয়াল ভাণ্ডারের ম্যানেজার সাঈদ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, এখন ধানের মৌসুম শেষ তাই মিলাররা কারসাজি শুরু করেছে। তারা সব ধরনের চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের কাছে চালের অর্ডার দিলে তারা বাড়তি রেট আমাদের জানিয়ে দিচ্ছে। তাই সে দামেই আমাদের আনতে হচ্ছে। বিক্রিও করতে হচ্ছে বাড়তি দরে।

এ প্রসঙ্গে সূত্রাপুর বাজারের চাল বিক্রেতা মো. আনিস ও আবুবক্কর বাংলানিউজকে জানান, গত এক মাসে চালের দাম ৫ থেকে ৬ টাকা বেড়েছে। মিল মালিকরা দাম বাড়িয়ে দেওয়ার কারণে পাইকারিতে দাম বাড়ছে। আর এ কারণেই খুচরা বিক্রেতাদের বেশি দাম দিয়ে চাল কিনতে হচ্ছে এবং বিক্রি করতে হচ্ছে।

বাজারে আসা বেসরকারি কর্মকর্তা দিপু রায়হান বলেন, প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে জীবনযাপন করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। একটি পণ্য কিনলে আরেকটি কেনার বাজেট থাকছে না। সরকারি নজরদারি বা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দুর্বলতার জন্য ব্যবসায়ীরা দফায় দফায় দাম বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিংয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।  

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রপ্তানির অনুমোদন দেওয়ার পর চালের দাম এক দফা বেড়েছিল। গত ৩১ জানুয়ারি চালের রপ্তানি মূল্যের ওপরে ১৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার পর দাম ফের বাড়তে শুরু করে। চলতি সপ্তাহে চালের দাম আবারো আরেক দফা বেড়েছে। মূলত রপ্তানির অনুমতি নিতে আসা প্রতিষ্ঠানগুলো সরু ও সুগন্ধী চাল রপ্তানির অনুমোদন চেয়েছে। তাই চাল রপ্তানি শুরু হলে দাম আরো বেড়ে যেতে পারে। এতে দাম হাতের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ারও ঝুঁকি আছে। এ পরিস্থিতিতে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে চাল রপ্তানির ব্যাপারে আপত্তি তোলা হয়। এ কারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আপাতত রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া থেকে বিরত রয়েছে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত এক মাসে শুধু সরু চালের দামই ৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। সাধারণমানের নাজির ও মিনিকেট কেজি ৫০-৫২ টাকা, উত্তমমানের নাজির ও মিনিকেট ৫৫-৬০ টাকা, মাঝারি চাল ৪২-৫০, পাইজাম ও লতা (সাধারণ মানের) ৪২-৪৫, পাইজাম ও লতা (উত্তমমানের) ৪৬-৫০ এবং স্বর্ণা ও চায়না ইরিখ্যাত মোটা চাল ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, সরকারি গুদামে বর্তমানে ১৩ লাখ ৬৫ হাজার টন চাল মজুদ আছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২০
জিসিজি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।