বাংলানিউজকে মনোজ মণ্ডল বলেন, গত ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে আমি মৌ চাষ শুরু করি। তবে প্রথম বছর তেমন লাভ করতে পারিনি।
তিনি বলেন, সে বছর আমি ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৪টি মৌ বাক্স স্থাপন করি। তা থেকে ৪০ কেজি মধু সংগ্রহ করি। আর তা স্থানীয়ভাবে ৭শ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি। এ বছর আরও ১৬টি মৌ বাক্স সংযুক্ত করে মোট ২০টি মৌ বক্সের মাধ্যমে প্রায় ৩শ কেজি মধু সংগ্রহ করেছি।
আর চলতি বছরে আমার মৌ চাষে যোগ হয়েছে ফরিদপুর জেলার শ্রীরামপুরের একটি ধনিয়া ও কালোজিরা ক্ষেত। এছাড়া উপজেলার শাঁখারীকাঠীর মৃগেন বড়ালের কুল বাগানও রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, চলতি বছরে ২০টি মৌ বাক্স থেকে এ পর্যন্ত ৩শ কেজি মধু সংগ্রহ হলেও বাকি সময়ে মোট সাড়ে ৩ হাজার কেজি মধু সংগ্রহ করার আশা রয়েছে। আর এ মধু ৬ থেকে ৭ শত টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি।
মনোজ বলেন, চলতি মৌসুমে আমার মোট খরচ হবে প্রায় ২ লাখ টাকা আর প্রাকৃতিক কোনো বিপর্যয় ছাড়া যথাযথভাবে মধু সংগ্রহ করতে পারলে তা বিক্রি করে প্রায় ২১ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব হবে।
সরেজমিনে উপজেলার শাঁখারীকাঠীর তারাবুনিয়ার একটি কুল ক্ষেত ও ফরিদপুরের শ্রীরামকান্দির একটি আম বাগানের মৌ খামারে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার মো. রফিকুল ইসলাম ও নাজিরপুরের মনোজ মণ্ডল যৌথভাবে এ খামার পরিচালনা করছেন। দুই চাষির যৌথভাবে প্রায় ১৮০টি মৌ বাক্স রয়েছে।
মৌ চাষি মনোজ মণ্ডল বলেন, নাজিরপুরে মৌ চাষের যে সম্ভবনা আছে সেখানে কম হলেও একশ বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে।
মৌ চাষের পদ্ধতি: সরেজমিনে মৌ চাষি মনোজ মণ্ডলের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, কাঠের প্রতিটি বাক্সে ১টি করে রাণী মৌমাছি থাকে। তাকে ঘিরে মৌমাছি স্থানীয় বিভিন্ন ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহ করে। প্রতিটি সিঙ্গেল বাক্সে ৮ থেকে ১০টি ফ্রেম থাকে। আর ওই বাক্স থেকে স্বাভাবিকভাবে ১০ থেকে ১৫ কেজি মধু উৎপাদন হয়। আর ফসলের পূর্ণ পরাগায়নের সময় এ মাত্রা বেড়ে ২০ থেকে ২২ কেজি পর্যন্ত হয়। আর ডাবল চেম্বারের একটি বক্স থেকে প্রায় ২৫ কেজি মধু সংগ্রহ হয়। এজন্য প্রায় ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে।
মৌ চাষ থেকে পাওয়া: মনোজ আরও বলেন, প্রতিটি মৌচাক থেকে মধু, মোম, রয়েল জেলি, ভিভ্যান (আঠা), পপুলিস, মৌ বিষ ও পরাগরেণু এ ৭টি উপাদান পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েল জেলিটির স্বাভাবিক বাজার আমাদের দেশে নেই। এটা সংগ্রহ করার জন্য বেশ কিছু সরঞ্জাম প্রয়োজন। তবে স্বাভাবিকভাবে প্রতি ১০ গ্রাম রয়েল জেলি কম হলেও আমরা ২ থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি করি। তবে দেশের বাইরে এর দাম খুব বেশি।
পরাগরেণুর কেজি প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। আর ডিজিটাল মৌ বাক্স থেকে মৌ বিষ নামের একটি উপাদান উৎপাদন করা হয়। যা খুবই মূল্যবান বলে তিনি জানান। মৌমাছি তার বাক্সে ঢুকলে বৈদ্যুতিক শকের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট স্থানে ওই বিষ ছেড়ে দেয়।
মধু সংগ্রহ পদ্ধতি: মৌ বাক্স থেকে ফ্রেমগুলো বের করে হালকা ধোঁয়া দিয়ে মাছি ঝেরে তা থেকে মৌ নিস্কাশন যন্ত্রের সাহায্যে মধু সংগ্রহ করা হয়। আর পরে সংগৃহীত মধু বোতলজাত করে বিক্রি করা হয়।
মনোজ মণ্ডল বলেন, সরকারি সাহায্যের অভাবে আমাদের উৎপাদিত মধু পরীক্ষাগারে (ল্যাব) পরীক্ষা করে এর মান যাচাই ছাড়াই বিক্রি হচ্ছে। আর এ কারণে আমরা এর যথাযথ দাম পাচ্ছি না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দ্বীগ বিজয় হাজরা বাংলানিউজকে জানান, নাজিরপুরের বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রতিবছর প্রায় ৪৫ হেক্টর জমিতে সরিষা, ১৫ থেকে ২০ হেক্টর জমিতে সূর্যমূখী, ৫০ থেকে ৬০ হেক্টর জমিতে মাল্টা, ৩০ হেক্টর জমিতে লিচু, ২০ হেক্টর জমিতে বরই ও প্রায় ৫ থেকে ৬ হেক্টর জমিতে ধনিয়া চাষ হচ্ছে। এ সব শষ্যের ফুল থেকে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন চাষি মৌ চাষ করতে পারবেন। তিনি আরও জানান, এখানে মৌ চাষের মাধ্যমে স্থানীয় শিক্ষিত বেকার যুবকদের স্বাবলম্বী করা সম্ভব।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২০
আরএ