ঘরদোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজে জুড়ি নেই পাহাড়ি ফুলঝাড়ুর। গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহর বন্দরের প্রায় সর্বত্রই রয়েছে এর কদর।
জানুয়ারি-এপ্রিল বান্দরবানের বিভিন্ন পাহাড় থেকে স্থানীয় নারী ও পুরুষরা এ ফুলঝাড়ু সংগ্রহ করে বাজারে নিয়ে আসে বিক্রির উদ্দেশ্যে। জুমে উৎপাদিত বিভিন্ন প্রকার কৃষি পণ্যের সঙ্গে এই ফুলঝাড়ু হয়ে ওঠেছে তাদের বাড়তি উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম।
এদিকে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো এই ফুলঝাড়ুর ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষজন।
এ কাজে নিয়োজিত শ্রমিক নকিব বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবছরই আমরা এই দুই-তিন মাস ফুলঝাড়ুর কাজে জড়িত হই এবং দৈনিক ৫০০ টাকা বেতনে কাজ করি। শ্রমিক নকিব আরো বলেন, এই মৌসুমটা আমাদের জন্য অত্যন্ত ভালো, কেননা এই দুই-তিন মাস (জানু-এপিল) আমাদের প্রতিদিনই কাজ করতে হয়, আর টাকাও ভালো পাওয়া যায়।
ফুলঝাড়ু শ্রমিক সেলেমান বলেন, এ কাজে আমাদের তেমন কষ্ট হয় না। আমরা ফুলঝাড়ুগুলো নেড়ে নেড়ে রোদে শুকাই আর পরে আটি বেঁধে ট্রাকে বোঝাই করি। জেলা সদর ছাড়াও লামা, আলীকদম, রোয়াংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকেও পাইকাররা ভিন্ন ভিন্ন দামে সংগ্রহ করে থাকেন গৃহস্থালি কাজের অন্যতম প্রয়োজনীয় এই ফুলঝাড়ু। আর সংগ্রহের পর খোলা আকাশের নিচে রাখা হয় শুকানোর জন্য। তারপর ৪ থেকে ৫ ফুট লম্বা করে কাটা ১০ থেকে ১২টি ফুল দিয়ে তৈরি করা হয় প্রতিটি ঝাড়ু। এরপর জিপ কিংবা ট্রাকে করে পাঠানো হয় ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন পাইকারদের কাছে।
এদিকে বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকার পাহাড়ের ঢালে প্রাকৃতিক ভাবে জন্মানো এই ফুলঝাড়ু এখন স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশর নানা প্রান্তে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানের পাশাপাশি বিদেশে ও হচ্ছে রপ্তানি। তাছাড়া ফুলঝাড়ু সংগ্রহ ও বিক্রি করে বাড়তি উপার্জন করতে পেরে খুশি ব্যবসায়ীরা।
বান্দরবানের ফুলঝাড়ু ব্যবসায়ী সাহাবউদ্দিন সিকদার বাংলানিউজকে বলেন, আমরা প্রতি বছরই এ ফুলঝাড়ুর ব্যবসা করে থাকি। এই ব্যবসা করে আমাদের সংসার বেশ ভালো চলে। আমরা প্রথমে পাহাড় থেকে বিভিন্নজনের কাছ থেকে এই ফুলঝাড়ু সংগ্রহ করি, তারপর সব এক জায়গায় সংগ্রহ করে শুকিয়ে আটি বেঁধে ট্রাকে করে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করি। এক ট্রাক ফুল ঝাড়ুর বিক্রি করে আমাদের ১৫-২০ হাজার টাকা লাভ হয়। পাহাড়ের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলা এই ফুল ঝাড়ু সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের নেই কোনো পরিসংখ্যান, তবে সঠিকভাবে সংরক্ষণ আর পরিচর্যা করা গেলে পাহাড়ের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে এ প্রাকৃতিক সম্পদটি- জানালেন কৃষি ও বন কর্মকর্তারা।
বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক বলেন, এ ফুল ঝাড়ুর সঠিক তথ্য কোনো বিভাগের কাছে নেই। প্রতিবছর এ সময়ের দুই-তিনমাস বান্দরবানের কয়েকজন ব্যবসায়ী বান্দরবান থেকে এই ফুলঝাড়ু দেশের নানান প্রান্তে সরবরাহ করে লাভবান হয়। তিনি আরো বলেন, এই ঝাড়ু বান্দরবানের পাহাড়ে কোনো যত্ন ছাড়াই বেড়ে ওঠে, আর পাহাড়ের কিছু জনসাধারণ তা সংগ্রহের পর বাজারে বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছে।
বান্দরবানের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. ফরিদ মিঞা বলেন, এ শুকনো মৌসুমে বান্দরবানে ফুলঝাড়ুর দেখা মেলে। প্রাকৃতিগতভাবে এ ফুলঝাড়ু উৎপাদিত হয় বান্দরবানে। বন কর্মকর্তা মো. ফরিদ মিঞা আরো বলেন, বান্দরবান থেকে এ ঝাড়ু পরিবহন করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে নেওয়া হয়। আর এই পরিবহনের অনুমতি জন্য সরকারিভাবে আমরা রাজস্বগ্রহণ করে থাকি।
তিনি আরো বলেন, প্রতি ফুলঝাড়ুর ব্রোম ৩৫ পয়সা করে রাজস্ব সরকারের ফান্ডে জমা হয়। যার হিসেবে প্রতিটি ট্রাকে আমরা ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত রাজস্ব সরকারের তহবিলে জমা দিচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০২০
এসএইচ