বুধবার (০৪ মার্চ) রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ‘জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা-২০২০’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে পাস করে শুধু চাকরির পেছনে ছুটে না বেড়িয়ে ঋণ নিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে সরকারের বিনা জামানতে ব্যাংক ঋণ কর্মসূচির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কর্মসংস্থান ব্যাংকের মাধ্যমে বিনা জামানতে ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়া হচ্ছে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সেভাবে অর্থ নিতে পারেন। এসএমই ফাউন্ডেশন থেকেও ঋণ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
ঋণে সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার উদ্যোগ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ঋণে সুদের হার অত্যন্ত বেশি, সেই সুদের হার কমিয়ে আনারও আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। সিঙ্গেল ডিজিটে আমরা নামিয়ে আনতে চাইছি। যাতে করে আমাদের উদ্যোক্তারা ঋণ নিয়ে তা সহজে বিনিয়োগ করতে পারে। সেই সুবিধাটা আমরা সৃষ্টি করে দিচ্ছি।
শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জনের তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ-বিদেশে সবখানেই সবাই দক্ষ জনশক্তি চায়। সেই দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির আমরা উদ্যোগ নিয়েছি।
দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে এতদিন সবাই শুধু সস্তা শ্রমের দেশ হিসেবে গণ্য করতো। আমরা সেই ক্ষেত্রে আপনারা জানেন যে ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি, শিক্ষার ব্যবস্থা করেছি। আমরা চাইছি যে আমাদের দেশের মানুষ উপযুক্ত হয়ে গড়ে উঠুক। যাতে আমাদের ওভাবে সস্তা শ্রমের দেশ হিসেবে আর মনে না করে। আমাদের স্কিলড লেবার তৈরি করতে হবে। দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করতে হবে। সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।
প্রযুক্তি শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহার ধীরে আরও বাড়ছে। শ্রমঘন শিল্প থেকে এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা আসছে। সেখানেও দক্ষ জনশক্তি ব্যবহারের কথা আসছে। সেখানে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করা সেখানেও ট্রেনিংয়ের ব্যাপার, আমরা সেদিকেও বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে যাচ্ছি।
পণ্য উৎপাদন, বাজারজাত, নতুন বাজার সৃষ্টিসহ সব ক্ষেত্রে গবেষণার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই ক্ষেত্রেও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। গবেষণাটাও একান্তভাবে প্রয়োজন। গবেষণার মধ্য দিয়ে আমরা যেন পণ্য চাহিদা, পণ্য উৎপাদন, পণ্য বাজারজাতকরণ নিশ্চিত করতে পারি। সেটা আমরা করবো।
এসএমই ফাউন্ডেশনকে গবেষণায় গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, আশা করি এসএমই ফাউন্ডেশন এ ব্যাপারেও উদ্যোগ নেবে।
শেখ হাসিনা বলেন, নিজস্ব বাজার সৃষ্টি করতে হবে। সেই সঙ্গে নতুন নতুন বাজার খুঁজতে হবে। কোথায় আমরা নতুন বাজার পেতে পারি, কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা বেশি সেটা খুঁজে বের করা এবং সেই ধরনের পণ্য উৎপাদন করা। সেই উদ্যোগ নিতে হবে।
পণ্য বাজারজাতকরণে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধান করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাজারজাত করা একটা সমস্যা। এই বাজারজাত করার ব্যবস্থা যদি আমরা না নিতে পারি, উদ্যোক্তারা পণ্য উৎপাদন করে সে পণ্য নিয়েতো ঘরে বসে থাকতে পারে না। সেজন্য বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা নিতে হবে। একইসঙ্গে কাঁচামাল প্রাপ্তিও নিশ্চিত করার কথা বলেন তিনি।
ফ্যাশন ডিজাইন এবং পণ্য উৎপাদনে ঋতু বৈচিত্র্যের বিষয়টি মাথায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এসএমই পণ্যের মান সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশের এসএমই খাতে উৎপাদিত অনেক পণ্য বিশ্বমানের। এগুলোর সঙ্গে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও জড়িত।
এসএমইখাত উন্নয়নে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঐতিহ্যবাহী পণ্যের পাশাপাশি উন্নত বিশ্বে ভোক্তাদের চাহিদা-নির্ভর শতভাগ রপ্তানিমুখী পণ্য উৎপাদনে মনোনিবেশ করতে হবে। দেশজ কাঁচামাল ব্যবহার করে ভারি শিল্পের পরিপূরক পণ্য এসএমই শিল্পের মাধ্যমে প্রস্তুত করতে হবে। এসএমই শিল্পের মাধ্যমে সুনীল অর্থনীতির বিকাশ ঘটাতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আমির হোসেন আমু।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ এসএমই উদ্যোক্তাদের হাতে সনদ ও পুরস্কার তুলে দেন।
মেলায় সারাদেশ থেকে বাছাই করা তিনশ এসএমই প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০২০
এমইউএম/জেডএস