একইসঙ্গে প্রায় ২৪ হাজার ১১৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে আরও নয়টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে একনেকে।
একনেকের চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার (১০ মার্চ) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
এসময় পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক কলেবর বাড়ছে। এ জন্য বিদ্যমান সমুদ্রবন্দরগুলো দিয়ে চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। তাই মাতারবাড়ীতে চতুর্থ বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর হবে। চট্টগ্রাম, পায়রা ও মোংলা বন্দরের পরে এটাই হবে সবচেয়ে বড় সমুদ্রবন্দর। এছাড়া মাতারবাড়ীতে আমাদের অনেক সম্ভাবনাও রয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের কাজ দ্রুত শুরু করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। বাকি দুই হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল এবং দুই হাজার ২১৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সংযোগ সড়কের সক্ষমতা বাড়ানো হবে। একইসঙ্গে কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। যা থেকে ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চাহিদা মেটানো এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে দ্রুত বন্দর সেবা দেওয়া সম্ভব হবে বলে প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্পটির প্রথম পর্যায়ে বন্দর নির্মাণে স্বল্প হলেও খুব কম সুদে তহবিল পাওয়া যাবে। তাই এটি আর্থিকভাবে লাভজনক হবে। এক্ষেত্রে জাইকা শূন্য দশমিক ০১ শতাংশ হারে প্রকৌশল সেবা দেবে। এছাড়া শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ হারে মূল প্রকল্পের ঋণ দেবে। প্রকল্পটির প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হবে। তাই এটি উল্লেখযোগ্যভাবে লাভজনক হবে।
পায়রা বন্দরে চারলেন রাস্তা নির্মাণে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় ৬০ কোটি টাকা হলেও এ প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটারে ১৬০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। যা আবার অত্যাধিক বলে প্রতীয়মান হয়।
বর্তমানে দেশে যে কয়টি সমুদ্রবন্দর রয়েছে, তার কোনোটিই গভীর সমুদ্রবন্দর নয়। ফলে ডিপ ড্রাফটের ভেসেল এসব বন্দরের জেটিতে ভিড়তে পারে না। তাই ডিপ ড্রাফট ভেসেলের জেটি সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য মাতারবাড়ীতে সমুদ্রবন্দর নির্মাণ বিষয়ে অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প নেওয়া হয়।
একটি গভীর সমুদ্রবন্দরের পাশাপাশি আধুনিক কনটেইনারবাহী জাহাজ, খোলা পণ্যবাহী জাহাজ ও তেলবাহী ট্যাংকারের জেটিতে ভেড়ার সুযোগ সৃষ্টি করা, চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমানোর সঙ্গে সঙ্গে দেশের ক্রমবর্ধমান আমদানি-রপ্তানি চাহিদা পূরণ এবং মাতারবাড়ী ও মহেশখালী অঞ্চলে গড়ে ওঠা শিল্পাঞ্চলগুলোতে পণ্য পরিবহনে সহায়তা করাই এ বন্দর প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য।
জাইকার সার্ভে অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দরে একটি জাহাজ সর্বোচ্চ দুই হাজার টিইইউএস কনটেইনার নিয়ে ভিড়তে পারে। অথচ পার্শ্ববর্তী কলম্বো, জওহরলাল নেহরু, করাচি ও চেন্নাই বন্দরে তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ ভিড়তে পারে। মাতারবাড়ীতে অধিক ড্রাফটের জাহাজের সমুদ্রবন্দর নির্মাণ বাংলাদেশের জন্য উত্তম বিকল্প। এই সমুদ্রবন্দরে ৩০০ ও ৪৬০ মিটার দৈর্ঘ্যরে দুটি টার্মিনাল থাকবে।
এসব টার্মিনালে ১৬ মিটার ড্রাফটের আট হাজার টিইইউএস কনটেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দরে ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের বেশি সক্ষমতার জাহাজ ভিড়তে পারে না।
ফলে মাদার ভেসেলগুলো বন্দরের জেটিতে আসতে পারে না। ফিডার জাহাজে করে কনটেইনার আনা-নেওয়া করতে হয়। প্রতিদিন ৩৫০০ থেকে ৩৮০০ টিইইউএস আমদানি পণ্য কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়ে থাকে।
এ দিন অনুমোদন পাওয়া অন্যান্য প্রকল্প হলো- 'লেবুখালী-রামপুর-মির্জাগঞ্জ সংযোগ সড়ক নির্মাণ', 'কচুয়া-বেতাগী-পটুয়াখালী-লোহালিয়া-কালাইয়া সড়কের ১৭তম কিলোমিটারে (জেড ৮০৫২) পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ', 'স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ফায়ারিং রেঞ্জের আধুনিকায়ন', 'জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা কার্যালয়ের ২০তলা ভিত বিশিষ্ট দুইটি বেইজমেন্টসহ ১০ তলা (সংশোধিত ২০ তলা) প্রধান কার্যালয় নির্মাণ কাজ (দ্বিতীয় সংশোধিত)', 'পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন', 'বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন', 'জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার পাকেরদহ ও বালিজুরি এবং বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার জামথল এলাকা যমুনা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা' এবং 'ঢাকা স্যানিটেশন ইমপ্রুভমেন্ট'
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২০
এমআইএস/টিএ