ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান উপক্ষো করে খুলনায় বাণিজ্যমেলা শুরু

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২০ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২০
প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান উপক্ষো করে খুলনায় বাণিজ্যমেলা শুরু

খুলনা: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সবাইকে জনসমাগম এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে জনসমাগম হয় এমন আয়োজন করা থেকেও বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। একই কারণে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানও সীমিত করা হয়েছে। 

কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সে আহ্বান উপেক্ষা করে বুধবার (১১ মার্চ) খুলনায় উদ্বোধন করা হয়েছে বাণিজ্যমেলার। খুলনা চেম্বারের আয়োজনে দুপুরে খুলনা বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে ওই মেলার উদ্বোধন করেছেন মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খুলনা চেম্বারের সভাপতি কাজি আমিনুল হকের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির (বিপিএম-সেবা), ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার (খুলনা) রাজেশ কুমার রায়না, খুলনার পুলিশ সুপার এস এম সফিউল্লাহ (বিপিএম)।

এরআগে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের পর মঙ্গলবার (১০ মার্চ) দুপুরে খুলনা সার্কিট হাউজের সম্মেলনকক্ষে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন। প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক।

সেই সভায় ওয়াজ মাহফিল বা নামযজ্ঞের ন্যায় ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দূর হওয়ার পর আয়োজনের জন্য সর্বসাধারণকে পরামর্শ দিতে উপজেলা নির্বাহী (ইউএনও) কর্মকর্তাদের নিদের্শ দেন সভাপতি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান উপেক্ষা করে খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজনে ১৯তম খুলনা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার উদ্বোধন করা হয়েছে।

খুলনায় বিনোদনের স্থান কম থাকায় প্রতি বছরই বাণিজ্যমেলাতে প্রচুর লোকসমাগম হয়ে থাকে। এ বছর করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সবাইকে জনসমাগম এড়িয়ে চলার জন্য সরকারি আহ্বান রয়েছে। তাই বাণিজ্যমেলায় যাবেন কিনা এ নিয়ে সাধারণ মানুষ ও সচেতন মহলে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

কেউ কেউ বলছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান কাটছাঁট করা হয়েছে। ১৭ মার্চ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠেয় মূল অনুষ্ঠানটি ওই দিন হচ্ছে না। করোনা ভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জনস্বার্থে ও জনকল্যাণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে সরকার। কিন্তু এ পরিস্থিতিতেও খুলনায় বাণিজ্যমেলা শুরু হলো।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) খুলনা জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই খোদা বাংলানিউজকে বলেন, বাণিজ্যের কাছে প্রশাসন জিম্মি। যার কারণে হয়তো বাণিজ্যমেলা শুরু করা হয়েছে। সরকার যেখানে বড় বড় অনুষ্ঠান বাতিল করেছে। সেখানে বাণিজ্যমেলার প্রশ্নই উঠে না। বাণিজ্যমেলায় হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। করোনা আতঙ্কের মধ্যে এ জনসমাগম সবার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে।

করোনা আতঙ্কের মধ্যে কেন বাণিজ্যমেলা শুরু হলো এমন প্রশ্নের জবাবে মেলা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ মেসার্স চামেলী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. রাসেল মিয়া বলেন, এ বিষয়ে খুলনা চেম্বার, মেয়র, বিভাগীয় কমিশনার ভালো বলতে পারবেন। মেলা তারা উদ্বোধন করেছেন। আমি ছোট মানুষ।

মঙ্গলবার করোনার প্রাদুর্ভাব দূর হওয়ার পর ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলেও আজ কেন বাণিজ্যমেলার উদ্বোধন করা হলো এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, ওয়াজ মাহফিল বা নামযজ্ঞের ব্যাপক লোকসমাগম হয়। বাণিজ্যমেলায় যার ইচ্ছা সে যাবে।

অন্যদিকে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতি, সম্মানিত অতিথি, প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিরা তাদের বক্তব্যে মেলার সফলতা কামনা করে বলেন, খুলনায় বিনোদনের জায়গা কম। তাই এ বাণিজ্যমেলা অনুষ্ঠিত হলে খুলনাসহ এতদাঞ্চলের মানুষের মধ্যে এক প্রাণচাঞ্চল্যতা ফিরে আসে। দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীরা এ মেলার মাধ্যমে তাদের পণ্য সামগ্রী প্রদর্শন ও ক্রয়-বিক্রয়সহ ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের এক বিরাট সুযোগ পায়, যা খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য তথা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখে।

বাণিজ্যমেলার সফল বাস্তবায়নের পেছনে খুলনার রাজনৈতিক বিশিষ্ট নেতা ও সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের আন্তরিক সহযোগিতার জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সভাপতি।

অতিথিরা মেলার মাঠ পরিদর্শন করে সুসজ্জিত এবং ব্যাপক সংখ্যক দেশি-বিদেশি প্যাভিলিয়ন ও স্টল চালু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।

মেলার মাঠে একটি ডিজিটাল ফোয়ারসহ প্রায় শতাধিক দেশি-বিদেশি স্টল ও প্যাভিলিয়ন দেখা যাবে। মেলা প্রাঙ্গণে শিশুদের জন্য শিশুজোন, পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য পৃথক নামাজের স্থান, ওজু খানা, টয়লেট ও ফ্রি ওয়াই-ফাই জোনের ব্যবস্থাসহ সম্পূর্ণ মেলা প্রাঙ্গণ সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে। খুলনা চেম্বার প্রত্যাশা করে এবারের বাণিজ্যমেলা খুলনাবাসী সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারবে এবং কড়া নিরাপত্তা বেষ্টিত বাণিজ্যমেলায় মহিলা ও শিশুসহ দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দে কেনা-কাটা করতে পারবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২০
এমআরএম/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।