ত্রিপুরাসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গ্যাস পৌঁছে দিতে পরিবহন খরচ অনেক বেশি পড়ায় বাংলাদেশের কাছ থেকে গ্যাস নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল ভারত। সেই প্রস্তাবে বাংলাদেশ সাড়া দিয়ে এলপিজি রফতানিতে রাজি হয়।
বাংলাদেশ থেকে আমদানির ফলে গ্যাস পরিবহনের খরচ ব্যাপকভাবে কমে গেছে ভারতের। আগে পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া বন্দর থেকে গ্যাস সরবরাহে পরিবহনের খরচ পড়তো অনেক বেশি।
সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদপত্র দ্যা হিন্দু এমনই এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এর আগে আসাম, ত্রিপুরা, মনিপুরসহ ভারতীয় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যে রান্নার জন্য পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া বন্দর দিয়ে রপ্তানির পর সড়ক পথে এলপিজি পাঠানো হতো। এতে পরিবহন খাতে প্রচুর অর্থ খরচ হতো। সে খরচ কমাতেই বাংলাদেশ থেকে গ্যাস আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।
ভারতে প্রতি বছর ২৫ মিলিয়ন টন এলপিজির প্রয়োজন হয়। এর অর্ধেকই দেশটিকে অন্য দেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
রান্নার গ্যাস গ্রাহকদের কাছে ভারতে বিশেষ ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ করা হয়। এই ভর্তুকি দেওয়া মূল্যেই উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যের গ্রাহকদের গ্যাস সরবরাহ করতে গিয়ে পরিবহনের জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হয় দেশটির। এ ব্যয় কমাতেই বাংলাদেশ থেকে এলপিজি আমদানি করছে ভারত।
২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় উভয়দেশের মধ্যে এক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। সমঝোতা স্মারক অনুয়ায়ী বাংলাদেশ ত্রিপুরার ইন্ডিয়ান করপোশেনের বিশালগড় বটলিং প্লান্টে ট্যাংকারে করে এলপিজি সরবরাহে সম্মত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সমঝোতা অনুসারে বাংলাদেশের ব্যক্তি মালিকানার ওমেরা পেট্রোলিয়াম এবং বেক্সিমকো পেট্রোলিয়ামের মাধ্যমে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর জন্ এলপিজি আমদানি করছে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন। এর মাধ্যমে হলদিয়া থেকে শিলিগুড়ি পার হয়ে আগরতলায় তরল গ্যাস পরিবহনের ১৬৪০ কিলোমিটার পথের বদলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর এলপিজি সরবরাহ করতে মাত্র ২৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে।
প্রতিদিন ১৮ টন ধারণক্ষমতার দু’টো ট্যাংকারে করে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশনের বিশালগড়ের প্লান্টে এলপিজি নিয়ে আসা হয়। কিন্তু গ্যাসের চাহিদা দিন দিন বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এটি পাঁচ থেকে ছ’টি ট্যাংকারে নিয়ে আসার চিন্তা করা হচেছ।
এর আগে ২০১৬ সালে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এলপিজির টার্মিনাল স্থাপনের বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। স্মারক অনুযায়ী চট্টগ্রামে এ টার্মিনাল স্থাপনের কথা থাকলেও এ বিষয়ে এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় গ্যাস আমদানির কোনো উদ্যোগ এখনোও সফল না হলেও বাংলাদেশি বেসরকারি ব্যক্তি মালিকানার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই বর্তমানে দেশটি নিজেদের গ্যাসের চাহিদা পূরণ করছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২০
এবি/এজে