ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

করোনা: পোশাক কারখানাগুলোতে বাড়তি সতর্কতা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২০
করোনা: পোশাক কারখানাগুলোতে বাড়তি সতর্কতা

সাভার (ঢাকা): বিশ্বজুড়ে দ্রুত গতিতে ছড়াচ্ছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯)।  আতঙ্ক সৃষ্টিকারী এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশেও ১৪ জনের শরীরে ধরা পড়েছে এ ভাইরাস এবং বুধবার (১৮ মার্চ) ভাইরাসটিতে প্রথম একজন মারাও গেছেন।
 

এ নিয়ে দেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তবে এ ভাইরাসের উপস্থিতি টের পেয়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা সাভার ও আশুলিয়ার অধিকাংশ পোশাক কারখানায় নেওয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা।

পোশাক কারখানাগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাভার অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার কারণে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এদিকে লক্ষ্য রেখে আগে থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এখানকার স্বাস্থ্য বিভাগ ও পোশাক কারখানার কর্তৃপক্ষ। কারখানার পক্ষ থেকে দিনে দুইবার স্যাভলন পানি দিয়ে ফ্লোর মোছা হচ্ছে। এছাড়া শ্রমিকদের নানাভাবে করা হচ্ছে সচেতন।  

সোমবার (১৬ মার্চ) দুপুরে শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ার নাবা নিটওয়ার লিমিটেড এবং এমকে অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানাসহ কয়েকটি পোশাক কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, কারখানার শ্রমিকদের বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করে মাস্ক বিতরণ করছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া শ্রমিকরাও কারখানা কর্তৃপক্ষের দেওয়া মাস্ক পড়ে কারখানায় কাজ করছেন এবং কাজ শেষে বাসায় যাওয়া-আসার পথেও তারা মাস্ক ব্যবহার করছেন। একইসঙ্গে নিয়মিত হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে সতর্ক থাকার চেষ্টাও করছেন শ্রমিকরা।  

পোশাক শ্রমিকরা বাংলানিউজকে জানান, মাস্ক আর হ্যান্ড ওয়াশ বিতরণ ছাড়াও সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে কারখানাগুলোতে। ফলে শ্রমিকরা আতঙ্কিত না হয়ে উৎপাদন স্বাভাবিক রেখেছেন।  

নাবা নিটওয়ার লিমিটেড কারখানার খাইরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, কিভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হয় সে জন্য গত সপ্তাহ থেকেই কারখানার ভেতরে আমাদের সঙ্গে সকাল-বিকেল আলোচনায় করা হচ্ছে। আর সকালে কারখানায় প্রবেশে করতে হলে মাস্ক বাধ্যতামূলক। মাস্ক ছাড়া কাউকে কারখানায় ঢুকতে দেওয়া হয়না। যাদের শরীরের তাপমাত্রা বেশি তাদের চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়।  

এমকে অ্যাপারেলস কারখানার অপারেটর বিলকিস আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কারখানায় সকালে সবাইকে করোনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয় এবং সবাইকে প্রতি সপ্তাহে দু’টি করে মাস্ক দেওয়া হয়। একইসঙ্গে কাজের ফাঁকে ফাঁকে প্রতি এক ঘণ্টা পর পর হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত ধুয়ে আসতে হয়। তাছাড়া আমাদের কারখানার গেটের সামনে প্রতিটি শ্রমিকের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হয়।  

এদিকে কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশে করোনা ভাইরাস রোগী শনাক্ত হওয়ার পর পরই তারা তাদের কারখানায় শ্রমিকদের জন্য বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় শ্রমিকদের কারখানার পক্ষ থেকে বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে মাস্ক। একইসঙ্গে কারখানার ওয়াশ রুমে হ্যান্ড ওয়াশসহ সাবান রাখা আছে, যেন শ্রমিকরা সকালে কারখানায় কাজে যোগ দিতে এসে সেগুলো দিয়ে হাত মুখ ভালভাবে ধুয়ে কাজ যোগ দেন।

নাবা নিটওয়ার লিমিটেড নামে পোশাক কারখানার ম্যানেজার আদম বাংলানিউজকে বলেন, করোনায় প্রভাবে দেশের পোশাক খাতের কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি হয়েছে অনেক আগেই। তবে কারখানায় উৎপাদনের চাকা স্বাভাবিকভাবেই ঘুরছে। শ্রমিকদেরকে মাস্ক আর হ্যান্ড ওয়াশ ব্যবহারে জোর দেওয়া। আর সচেতনতামূলক প্রচারণা সব সময় কারখানায় করা হচ্ছে। সরকারের দেখিয়ে দেওয়া পথেই হাটছি আমরা।

শ্রমিকনেতা খাইরুল ইসলাম মিন্টু বাংলানিউজকে বলেন, অনেক কারখানায় দেখেছি শ্রমিকদের মাস্ক ও হ্যান্ড ওয়াশ দেওয়া হয়েছে। এটি খুব ভালো একটি উদ্যাগ। তবে কারখানার ভেতরেই শুধু পরিষ্কারক-পরিচ্ছন্ন থাকলে হবে না। শ্রমিকরা যে কলোনিতে থাকে সে কলোনিগুলোও পরিস্কার রাখতে হবে। শ্রমিকদের স্বাস্থের কথা ভেবে কারখানা কর্তৃপক্ষ ও স্থানী প্রশাসনের উচিৎ শ্রমিকদের বাসস্থান পরিষ্কারের জন্য সচেতনতা তৈরি করা। তবে আতঙ্কিত না হয়ে বিভিন্ন সতর্কতা গ্রহণ করে সচেতন হওয়ার জন্য নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।  

এ বিষয়ে সাভার উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচও) ডা. মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা বাংলানিউজকে বলেন, শিল্প কারখানা থাকায় সাভার ও আশুলিয়ায় অনেক ঘনবসতি।  আর দেশের অন্য সব উপজেলা থেকে সাভার উপজেলাতে জনগণ বেশি থাকায় এখানে করোনা আক্রান্ত হতে পারে খুবই তারাতারি। তাই কারখানাগুলোর কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে বলা হয়েছে তাদের শ্রমিকদের করোনা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে।  

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সাভার ও আশুলিয়ায় করোনার কোনো উপসর্গ পাওয়া যায়নি। তবে বিদেশ ফেরত ৮ প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। আমিন বাজার ২০ শয্যার বিশিষ্ট স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রকে কোয়ারেন্টিন হিসেবে তৈরি রাখা হয়েছে। পাশাপাশি সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসোলেশনে ৬ জন রোগী রাখার মতো ব্যবস্থা করা হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২০
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।