ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

করোনা আতঙ্কে দাম বেড়েছে নিত্যপণ্যের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০০ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২০
করোনা আতঙ্কে দাম বেড়েছে নিত্যপণ্যের .

ঢাকা: বাজারে ক্রেতা নেই তবু চড়া সবজি, মাছ, মাংস, চাল, ডাল, ভোজ্যতেলের বাজার। সপ্তাহের ব্যবধানে সবজিভেদে কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। চড়া দাম রয়েছে শাকের বাজারেও। কেজিতে সাত থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি রয়েছে চালের বাজারে। এছাড়া ১০ থেকে ২০ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন প্রকারের প্রতিকেজি ডাল।

লিটারে তিন থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বাড়তি রাখা হচ্ছে খোলা ভোজ্যতেলের দাম। চড়া রয়েছে মাছের বাজারও।

কেজিতে ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন প্রকারের মাছ।

তবে গরুর মাংসের দাম বাড়লেও কমেছে মুরগি ও ডিমের দাম। এছাড়া আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন মসলার বাজার। তবে অপরিবর্তিত আছে পেঁয়াজ ও রসুনের দাম।

এদিকে নিত্যপণ্যের বাজার চড়া নিয়ে ভিন্ন মত দেখা গেছে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে। বিক্রেতারা বলছেন, করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে বাজারে মালমালের সরবরাহ কম হওয়ায় পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে পণ্যের। আর ক্রেতারা বলছেন, করোনা ভাইরাস আতঙ্ক নয়, বেশি মুনাফার আশায় সংকটকালীন সময়ে দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

শুক্রবার (২৭ মার্চ) রাজধানীর মালিবাগ, মালিবাগ রেলগেট, খিলগাঁও, মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি বাজার, ফকিরাপুল কাঁচা বাজার, শান্তিনগর কাঁচা বাজার ও সেগুনবাগিচা কাঁচা বাজার ঘুরে এসব চিত্র উঠে এসেছে।

.
এসব বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে আকারভেদে আলু বিক্রি হচ্ছে ২৮ থেকে ৩৫ টাকা, চিচিঙ্গা ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, সিম ৫০ থেকে ৬০ টাকা, টমেটো ৪০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১০০ থেকে ১২০ টাকা, করলা ১০০ থেকে ১১০ টাকা, উস্তা ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ১০০ টাকা, গাজর বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, বড় কচু ৬০ থেকে ৮০ টাকা, বিট ৫০ থেকে ৮০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৮০ টাকা, সিমের বিচি ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে প্রতি আঁটিতে (মোড়া) তিন থেকে পাঁচ টাকা বেড়ে এখন প্রতি মোড়া কচু শাক ১২ থেকে ১৫ টাকা, লাল শাক ১৫ টাকা, মূলা ১৫ থেকে ২০ টাকা, পালং শাক ১৫ টাকা থেকে ২০, লাউ ও কুমড়া শাক ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

এছাড়া ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, প্রতি পিস বাঁধাকপি-ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বাঁধা কপি (গ্রিন) ৮০ থেকে ১০০ টাকা।

বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংসে ২০ টাকা বেড়ে বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা। এছাড়া আগের চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে মহিষ ও খাসির মাংসের দাম। মহিষের মাংস ৬০০ টাকা, খাসির মাংস ৮০০ টাকা, বকরি ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

গরুর মাংসের দাম বাড়লেও কমেছে মুরগির দাম এসব বাজারে প্রতিকেজি বয়লার ১০ টাকা কমে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা, লেয়ার ২০০ টাকা থেকে ২১০ টাকা, সাদা লেয়ার ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, সোনালি ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা কেজিদরে। লাল ডিম প্রতি ডজন ৯৫ থেকে ১০৫ টাকা, দেশি মুরগি ১৫০ টাকা, সোনালি ১৪০, হাঁস ১৩০ টাকা, কোয়েল প্রতি ১০০ পিস ২০০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

.
সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দাম রাখা হচ্ছে মাছের বাজারে। এসব বাজারে বর্তমানে প্রতি এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, ৭৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৭০০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা, ছোট ইলিশ আকারভেদে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে।

এছাড়া প্রতিকেজি কাঁচকি ৪০০ টাকা কেজি, মলা ৪০০ টাকা, ছোট পুঁটি (তাজা) ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৭৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, চিংড়ি (গলদা) ৫০০ থেকে ৮৫০ টাকা, বাগদা ৪৫০ থেকে ১ হাজার টাকা, দেশি চিংড়ি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, রুই (আকারভেদে) ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, মৃগেল ২২০ থেকে ৩৫০ টাকা, পাঙাস ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা, তেলাপিয়া ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, কৈ ২০০ থেকে ২২০ টাকা, কাতল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

অপরিবর্তিত রয়েছে পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দাম। এসব বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে (মানভেদে) ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিদরে, প্রতিকেজি রসুন দেশি (মানভেদে) ৭০ থেকে ১০০ টাকা, চায়না ১৩০ থেকে ১৫০, তিন কোয়া রসুন ১৮০, আদা ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজিদরে।

এসব বাজারে খোলা সয়াবিন (লাল) বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা লিটার, খোলা সাদা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ৯৬ টাকা লিটার। অপরিবর্তিত রয়েছে সরিষার তেলের। খোলা সরিষার তেল বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা লিটার।

খুচরায় সাত থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি চাল। এসব বাজারে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে মিনিকেট (নতুন) চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি, মিনিকেট পুরান ৬২ টাকা, বাসমতী ৬৫ থেকে ৬৬ টাকা, কেজিতে আট টাকা বেড়ে প্রতি কেজি আটাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকা, কেজিতে সাত টাকা বেড়ে এক সিদ্দ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকা, পাইজাম ৪২ টাকা, কেজিতে তিন টাকা বেড়ে প্রতি কেজি পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকা কেজিদরে।  

কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে বাজারে প্রতিকেজি ডাবলী (অ্যাঙ্কর) বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকা, প্রতিকেজি প্রায় ১৫ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি দেশি মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা।

আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন মসলা। এসব বাজারে প্রতিকেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৬০০ থেকে ৫ হাজার ৫০০ টাকা, জয়ত্রী ৩ হাজার ৫০০ টাকা, ৩ হাজার ৬০০ টাকা, জায়ফল ৮০০ টাকা।

মালিবাগ বাজারের বিক্রেতা হবি বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক কাজ করছে সবার মধ্যে। এ আতঙ্কে সবজির বাজার ও পাইকারি বাজারে সব মালামালের ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। তাই আমরা বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করছি। একই কথা জানান এ বাজারের মাছ বিক্রেতা ইউনুস।

তবে বিক্রেতাদের সঙ্গে একমত নন মালিবাগ বাজারের ক্রেতা হামিদা খাতুন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে মালামালের কোনো ঘাটতি নেই, ক্রেতাও তেমন নেই, এরপরও বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীপণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। মালামালের ঘাটতি না থাকলেও দাম বাড়ার কোনো কারণ হতে পারে না। এটা ব্যবসায়ীদের কারসাজি।

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২০
ইএআর/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।