ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বিনিয়োগ বাড়লেও ইপিজেডে কমেছে জনবল

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০২০
বিনিয়োগ বাড়লেও ইপিজেডে কমেছে জনবল

ঢাকা: বর্তমান সরকার শিল্পখাতের দ্রুত বিকাশের লক্ষ্যে দেশে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) স্থাপনের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করাসহ শিল্পখাত বিকাশে সার্বিক সহযোগিতা করে আসছে। বাংলাদেশে মোট ৮টি ইপিজেড রয়েছে। ইপিজেডগুলো চট্টগ্রাম, ঢাকা, মোংলা, ইশ্বরদী, উত্তরা (নীলফামারী), আদমজী ও কর্ণফুলীতে অবস্থিত। ইপিজেডের আওতায় ৪৭০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে মোট ৫ লাখ ১৪ হাজার ২৬২ জনবল রয়েছে। অথচ ২০১৮ সালে মোট জনবল ছিল ৫ লাখ ২০ হাজার ১৩। জনবল কমলেও বিনিয়োগ ৫ শতাংশ বেড়েছে। 

বিবিএস সূত্র জানায়, বর্তমানে ইপিজেডগুলোতে মোট বিনিয়োগ হয়েছে ৪৮৮ দশমিক ৫ কোটি ডলার। ২০১৮ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৪৬৮ দশমিক ১ কোটি ডলার।

একই সময়ে গার্মেন্টসে বিনিয়োগ হয়েছে ১৮০ দশমিক ০৮ কোটি ডলার, ২০১৮ সালে এর পরিমাণ ছিল ১৭২ কোটি ডলার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।    
এর মধ্যে ১১৬ গার্মেন্টসে মোট জনবলের পরিমাণ ৩ লাখ ৫ হাজার ১৭৩। এর পরেই টেক্সটাইল শিল্পে ২৭ হাজার ৭০৯ জনবল রয়েছে। মোট কর্মরত জনবলের ৬০ ভাগ গার্মেন্টসে বাকি ৪০ ভাগ অন্য শিল্প প্রতিষ্ঠানে। ইপিজেডে শতকরা ২৫ শতাংশ গার্মেন্টস, ২০ ভাগ গার্মেন্টস আনুষঙ্গিক প্রতিষ্ঠান, ৮ ভাগ টেক্সটাইল, ৭ ভাগ নিটওয়্যার, ৬ ভাগ পাদুকা ও চামড়া এবং ১৯ ভাগ অন্য পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ইপিজেডের ভূমিকা বেশি। গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল খাতে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ চলমান। গার্মেন্টস, টেক্সটাইল, ছাড়াও রয়েছে নিটওয়্যার, কৃষি ও সেবা সামগ্রী। বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশে রফতানি আয়ের সিংহভাগ আসে গার্মেন্টস থেকে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি রপ্তানি খাত। গার্মেন্টস সেক্টরে বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি ১৮০ কোটি ডলার, যা পূর্ববর্তী বছর থেকে ৫ শতাংশ বেশি। শিল্প প্রতিষ্ঠানে সরকারের বিনিয়োগে গার্মেন্টস খাত এগিয়ে। এছাড়া গার্মেন্টস আনুষঙ্গিকে ৬৬ দশমিক ৮, টেক্সটাইলে ৬৬ ও নিটওয়্যারে ৩১ দশমিক ৫ কোটি ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে। শ্রমিক কমলেও বেড়েছে রফতানি আয়।  

ইপিজেডে ৩৯টি টেক্সটাইল, ৩১টি নিটওয়্যার, ২৮টি পাদুকা-চামড়া, ১৯টি ইলেকট্রনিকস,  ১২টি তাওয়াল, ১১টি ধাতব, ১৩টি প্লাস্টিক, ১৪টি তাবু, ৬টি টুপি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়াও কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান, সেবা, সার উৎপাদন, আসবাবপত্র, কাগজজাত, দড়ি, ক্রীড়া, মাছ ধরার রিল ও খেলনা উৎপাদন শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

ইপিজেডের আওতায় ২০০৫ সালে ২২১টি শিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদনরত ছিল। বর্তমানে ৪৭০টি প্রতিষ্ঠান উৎপাদনরত রয়েছে এবং ১০১ শিল্প প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। চট্টগ্রামে ১৬১, ঢাকায় ১০২, মোংলায় ৩০, ঈশ্বরদীতে ১৮, কুমিল্লায় ৪৭, নীলফামারিতে ১৮, আদমজিতে ৫২ এবং কর্ণফুলী ইপিজেডে ৪২টি শিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদনরত রয়েছে।

অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অটোমেশন হচ্ছে, ফলে শ্রমিক কমছে। এ জন্য বেশি বেশি শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দক্ষতা অর্জনের দিকে নজর দিতে বলছেন অর্থনীতিবিদরা।                

বিশ্বব্যাংকের (ঢাকা অফিস) সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বিনিয়োগ বাড়লে সাধারণত উৎপাদন বাড়ে। উৎপাদন বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়ার কথা। সাধারণত অনেকে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তির দিকে ছুটছে। ফলে কর্মসংস্থান কমছে। কর্মসংস্থান কমলে সমাজে বৈষম্য বাড়ে। তাই সরকারের উচিত বেশি বেশি শিল্প প্রতিষ্ঠান বাড়ানো। এর পাশাপাশি দক্ষ ও প্রযুক্তি নির্ভর জনবল তৈরি করা যাতে করে বাইরে থেকে লোক ভাড়া করে না আনতে হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০২০
এমআইএস/এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।