সম্প্রতি বৈশ্বিক মহামারির রূপ নেওয়া নভেল করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) বিস্তাররোধে সারাবিশ্বে এখন কনট্যাক্টলেস বা ‘স্পর্শহীন আর্থিক লেনদেন বাড়ানোর ওপর যেহেতু গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে, সেটি সহজ করার জন্যই সময়োপযোগী এ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে মাস্টারকার্ড।
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো তাদের নাগরিকদের সুরক্ষায় সম্প্রতি কঠোর নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
স্পর্শহীন লেনদেনের জন্য কার্ডে পর্যাপ্ত ব্যালান্স থাকার কারণে দরকারি জিনিসপত্র কেনাকাটা করতে কার্ডধারীদের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে হাত দেওয়া, পিন বাটনে চাপ দেওয়া, নগদ অর্থ লেনদেন করা কিংবা কলম স্পর্শ করতে হচ্ছে না। ব্যবসায়ী এবং গ্রাহকদের এটি জেনে রাখা প্রয়োজন যে, কার্ডে পেমেন্ট করার জন্য এখন আর স্বাক্ষর করা লাগছে না, যা আর্থিক লেনদেনে গতি আনার পাশাপাশি স্পর্শের ঝুঁকিও কমিয়ে দিয়েছে।
ট্যাপ করে তারা কেনাকাটা করতে পারছেন কি-না, সেটি কেবল কার্ডের সামনে বা পেছনের স্পর্শহীন প্রতীকটি দেখেই জানতে পারবেন কার্ডধারীরা। এক্ষেত্রে ক্রয় সীমার কোনো পরিবর্তন মোবাইল ডিভাইসে আর্থিক লেনদেন কিংবা গ্রাহকের ব্যক্তিগত সুরক্ষায় প্রভাব রাখবে না। কারণ আঙুলের ছাপ, নিজের চেহারা স্ক্যান বা পিন কোড প্রদানের কাজটি কার্ডধারী নিজেই করছেন এবং যেখানে এটি করা হচ্ছে, সেটিও কেবল তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে।
মাস্টারকার্ডের এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রোডাক্টস ও ইনোভেশনের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট সন্দীপ মালহোত্রা বলেন, এখনকার মতো অস্বাভাবিক সময়েও সরাসরি লেনদেনের প্রয়োজন আছে। তাই স্পর্শের বাইরে থেকে যতটা পারা যায় দ্রুততর আর্থিক লেনদেনের সুযোগ তৈরি করে সাধারণ মানুষকে সাহায্য করতে হবে, যাতে তারা সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্য বাঁচিয়ে রাখার পাশাপাশি দরকারের সময় নিজের জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সামাজিক দূরত্ব বজায়, দূর থেকে কাজ করা, ঘরে থাকাসহ প্রয়োজনীয় যাবতীয় প্রচেষ্টাকে মাস্টারকার্ড পুরোপুরিভাবে সমর্থন করে। ভেতরের খবরাখবর ও পরামর্শ দেওয়া ছাড়াও গ্রাহকদের সচেতন করে তোলার মাধ্যমে প্রত্যেক বাজারে নিজের সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে গোটা শিল্পকে একত্রিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মাস্টারকার্ড, যাতে একে অন্যকে সহায়তা করা যায়।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ব্যতিত মাস্টারকার্ডের মোট কেনাকাটার প্রায় ৫০ শতাংশ sগ্লোবাল কার্ডের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে।
এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্পর্শহীন লেনদেন সামগ্রিকভাবে দ্রুত সম্প্রসারিত হতে দেখা যাচ্ছে। তবে অঞ্চলভেদে এ প্রবণতায় তারতম্য রয়েছে- যেমন: অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, নিউজিল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ায় উচ্চহারের এ লেনদেন দেখা যাচ্ছে। ভারতে ধীরে হলেও স্পর্শহীন লেনদেন বাড়ছে এবং চীন, জাপান, ইন্দোনেশিয়া এবং ভিয়েতনামে লেনদেন বাড়ানোর এ হার বর্তমানে স্থির রয়েছে। প্রত্যেক বাজারের আভ্যন্তরীণ পরিবেশ এবং কার্ডধারীদের প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করে অঞ্চলভেদে লেনদেনের সীমাও পরিবর্তিত হচ্ছে।
সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, হংকং, তাইওয়ান এবং জাপানসহ কয়েকটি বাজারে ইতোমধ্যে পেমেন্টের উচ্চ সীমা দেওয়া হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডও তাদের পেমেন্ট লিমিট বাড়িয়েছে, যেটা গত ৯ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। ফিলিপাইন আগামী ১ জুলাই থেকে পেমেন্ট লিমিট বাড়িয়ে দেবে। এছাড়া অন্য বাজারগুলোতে আলোচনায় চলছে। প্রাথমিক আলোচনার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে মাস্টারকার্ড প্রস্তুত রয়েছে।
এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে স্পর্শহীন লেনদেনের এ সম্প্রসারণকে প্রযুক্তিগত লেনদেনের প্রতি মাস্টারকার্ডের বিশ্বব্যাপী চালানো জোর প্রচেষ্টারই প্রতিফলন বলা যায়। ইউরোপে শিল্প অংশীদারদের পাশাপাশি ভোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের পক্ষে সমর্থন অব্যাহত রেখেছে মাস্টারকার্ড। কারণ, ২৯টি দেশ সম্প্রতি স্থায়ী কিংবা অস্থায়ীভাবে স্পর্শহীন অর্থ আদান প্রদানের সীমা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া কানাডায় কিছুদিনের মধ্যেই স্পর্শহীন পেমেন্টের উচ্চ সীমা নিশ্চিত করা হবে।
কেনিয়া, তানজানিয়া, উগান্ডা এবং মরিশাসে পেমেন্ট লিমিট বাড়ানো হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকাজুড়েও ‘লিমিট’ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান দেশগুলোতে ‘লিমিট’ বাড়ানোর জন্য শিল্প উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে মাস্টারকার্ডের বিস্তৃত সমর্থন: অর্থ প্রদানের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ ছাড়াও প্রয়োজনের সময় গ্রাহক, ব্যবসায়ী এবং ভোক্তাদের সহায়তায় অসংখ্য পদক্ষেপ নিচ্ছে মাস্টারকার্ড।
স্থানীয় পর্যায়ে জনগোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা করার জন্য মাস্টারকার্ড গ্রাহকদের সঙ্গে অনলাইনে ছোট ছোট দোকানগুলোর মধ্যে সমন্বয় করছে। দোকানীদের সাহায্যর্থে ডিজিটাল পেমেন্টের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে কাজ করছে মাস্টারকার্ড। ‘মাস্টারকার্ডের সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ গ্রোথ’ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, স্বল্পদক্ষ শ্রমিক এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর ওপর প্রভাব নির্ধারণের জন্য কাজ করছে।
কোভিড-১৯ এর চিকিৎসার বিকাশ এবং স্কেলিংকে ত্বরান্বিত করতে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, ওয়েলকাম ট্রাস্ট এবং মাস্টারকার্ডের একটি যৌথ অংশীদারিত্ব ১২৫ মিলিয়ন ডলার তহবিলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এছাড়া বিশ্বজুড়ে মাস্টার কার্ডের কর্মীরা নিজেদের সময়, অর্থ ও চিকিৎসা সহায়তা দিয়ে যার যার জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করছে। এটি মাস্টারকার্ডের ‘ভালো কাজের মাধ্যমে সকলের ভালো’ প্রত্যয়েরই প্রতিফলন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২০
আরআইএস/