করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্টদের বিশেষ স্বাস্থ্যবীমার ঘোষণা দিয়েছেন প্রদানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৭ এপ্রিল দেশব্যাপী জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, পদমর্যাদা অনুযায়ী ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার স্বাস্থ্যবীমা হবে। দায়িত্ব পালনকালে কেউ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে তার সার্বিক চিকিৎসা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ইন্স্যুরেন্স ৫ গুণ বৃদ্ধি করে দেওয়া হবে।
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সরকার চলতি বছরের ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। এ সময়ে জরুরি সেবার আওতায় সীমিত আকারে সকাল ১০টা থেকে দুুপুর ১টা পর্যন্ত লেনদেন করা হচ্ছে ব্যাংকগুলোতে। অধিকাংশ শাখা বন্ধ থাকায় খোলা থাকা শাখাগুলোতে গ্রাহকের উপচেপড়া ভিড় লেগে যাচ্ছে। এতে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
এ কারণে ছুটির সময়ে ব্যাংক বন্ধ রাখার জোরালো দাবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার ঝড়ও তুলেছেন । এরইমধ্যেই দায়িত্ব পালনের সময় ৮ এপ্রিল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখার এক কর্মকর্তা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে আতঙ্ক বিরাজ করছে ব্যাংকারদের মধ্যে। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর চিকিৎসকদের মতাে ব্যাংকারদের অবদানের স্বীকৃতি প্রদান ও চিকিৎসকদের জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত বীমা সুবিধা অন্তর্ভুক্তির জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদের মহাসচিব মাহবুব হোসেন বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে আমরা সপ্তাহে দু'দিন ব্যাংক খোলা রাখা, ব্যাংকারদের পিপিই প্রদান, যাতায়াতের ব্যবস্থা করা, সংকটকালীন সময়ে দায়িত্ব পালনের জন্য অতিরিক্ত ভাতা প্রদানের দাবি জানিয়েছি।
রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার ও জনসংযোগ কমকতা এহতেশামুজ্জামান বলেন, সাপ্লাই চেইনের সঙ্গে জড়িত বড় বড় প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের তালিকা করে শুধুমাত্র আমদানি-রপ্তানির কাজে কয়েকটি এলাকা চিহ্নিত করে তাদের সেবা দেওয়া হোক সপ্তাহে দু'দিন।
এছাড়া ঋণের কিস্তি আদায়, সঞ্চয় হিসাবে জমা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল পরিশোধ বন্ধ রাখলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে।
ইসলামী ব্যাংকের সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল ইসলাম খলিফা বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে সবধরনের গ্রাহককে টাকা তোলা ও জমা দেওয়ার জন্য এটিএম ও সিডিএম ব্যবহার, শুধমাত্র বৈদেশিক লেনদেনের জন্য ব্যাংকে যাওয়া, দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তাদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করা, প্রয়োজনী পিপিই প্রদান ও যারা এ সময়ে কাজ করছেন তাদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হোক।
এদিকে করোনা ভাইরাসের কারণে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির সময়ে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা আবারও সীমিত করা হয়েছে। রোববার (১২ এপ্রিল) থেকে লেনদেন চলবে আড়াই ঘণ্টা, অর্থাৎ সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত।
এর আগে গত ৫ থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন ব্যাংক লেনদেন সময়সীমা ছিল সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। তবে আনুসঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করার জন্য ব্যাংক খোলা থাকবে দুপুর ২টা পর্যন্ত। দুপুর ২টা পর্যন্ত ব্যাংক খোলা থাকলেও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করা যাবে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত। সাধারণ ছুটিতে খোলা থাকা ব্যাংকের শাখায় আসা দশর্নাথী, গ্রাহক ও ব্যাংকারদের নিরাপদ দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা নিতে হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ব্যাংকে লেনদেন সীমিত করা হয়েছে। চলমান করোনা ভাইরাসের সংকট মোকাবিলয় আমদানিসহ অন্যান্য লেনদেন সম্পন্ন করতে ব্যাংক খোলা রাখার বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২০
এসই/আরবি