মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) ফেনী শহরের কয়েকটি স্থানে ঘুরে ক্ষুদ্র-মাঝারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বললে এ তথ্যই উঠে আসে।
ফেনী শহরের জেলরোড এলাকার ব্যবসায়ী আজগর হোসেন।
তিনি বলেন, এ এক মাসে আয়তো নেই, উল্টো এতগুলো টাকা খরচ করে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। এভাবে আরও কয়েক মাস চললে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হবে।
শুধু আজগর হোসেন নয়, চলমান বৈশ্বিক বিপর্যয়ের কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ফেনী শহরের প্রায় সব ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। দোকানের আয়ে যাদের পরিবার চলে, সেসব ব্যবসায়ীরা সীমাহীন কস্টে দিন পার করছেন। ব্যবসায়ীরা জানান, একেতো দোকান বন্ধ তার ওপর মাস শেষে দোকান ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে থাকলেও লোকলজ্জার কথা চিন্তা করে সহায়তা চাইছেন না তারা। কয়েকজন মাঝারি ব্যবসায়ী জানান, এভাবে চলতে থাকলে তাদেরকেও ত্রাণ চাইতে হবে।
শহরের আমিন টাওয়ারের আলমগীর হোসেন নামে আরেক ব্যবসায়ী জানান, গত দুই মাস তার দু’টি দোকান বন্ধ, তবু প্রতিমাসে ভাড়া ও অনান্য খরচ বাবদ গুণতে হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এমন অবস্থায় দোকান ভাড়া নিয়ে দিশেহারা তিনি। তিনি বলেন, কোন রকমে আগের সঞ্চয় থেকে সংসার চলছে। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসাটা টেকানো অসমম্ভব হয়ে পড়বে।
শহরের আপ্যায়ন আফরোজ টাওয়ারে চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ফেনীয়ানের মালিক রাজেশ মজুমদার বলেন, প্রতিমাসে দোকান ভাড়া ২৫ হাজার। সব মিলিয়ে ২ লাখের ওপর খরচ। কিন্তু ব্যবসাতো আর হচ্ছে না। এভাবে আর কতদিন? ব্যবসায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজেশ মজুমদার ব্যবসায়ীদের বিষয়টি মার্কেট মালিককে ভেবে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন।
ফেনী শহরের বেকারিজাত খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান টেস্টিফুডের সত্ত্বাধিকারী আতিয়ার সজল জানান, ‘ব্যবসায়ীরা খুব খারাপ সময় পার করছে। একেতো দোকান বন্ধ তার ওপর মাস শেষে ভাড়া। মাস শেষে ভাড়া পরিশোধ করাটা গলাটা কাঁটায় পরিণত হয়েছে।
শহরের ফায়ার সার্ভিসের বিপরীতে, রামপুর রাস্তার মাথা এলাকার ব্যবসায়ী ওসমান গণী রাসেল। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঘরবাড়ি নির্মাণ সুপার শপ। তিনি বলেন, গত একমাসেরও বেশি সময় ধরে আমার দোকান বন্ধ। মাসিক ভাড়া বিদ্যুৎ বিলসহ ৩০ হাজার টাকা আসছে।
এ ব্যবসায়ী বলেন, মালিকপক্ষ বা ব্যবসায়ী সমিতিকে অনুরোধ করবো একমাসের ভাড়া মওকুফের ব্যবস্থা করার জন্য। কারণ এখন মধ্যবিত্ত পরিবার নিজেদের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। যদি পুরো ভাড়া মওকুফ সম্ভব না হলে নূন্যতম ৫০ শতাংশ নেওয়ার অনুরোধ করছি।
শহরের রাজাঝির দিঘী, স্টেশন রোড় ও পৌর হকার্স মার্কেট এলাকায় গিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এরই মধ্যে অর্থ সঙ্কটে পড়েছেন।
আমিন আহম্মদ নামের এক চা দোকানি বলেন, ১৫ দিন ধরে দোকান খুলতে পারছি না। কোন আয় নেই, পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। কোন রকম একবেলা খেয়ে বেচে আছি। লজ্জা ভুলে মানুষের কাছে হাত পেতে সংসার চালাতে হচ্ছে।
ফেনী জেলা মুদ্রণ শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিক আরিফুল আমিন রিজভী বলেন, ‘ফেনীতে দোকান ভাড়া অস্বাভাবিক বেশি। নিয়মিত কার্যক্রম চললে তা সহনশীল থাকলেও বর্তমানে ভয়াবহ চিত্র ধারণ করেছে। মালিকপক্ষের সবাই ঋণমুক্ত নন। ভাড়ায় ব্যাংকের পাওনা মেটান। নিয়মিত লেনদেন না থাকায় সবাই পুঁজি হারাতে বসেছে। যে বকেয়া রয়েছে তা ফিরে না পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদেরও কিছুদিন পর ত্রাণ সহায়তা নিয়ে বাঁচতে হবে। প্রত্যেক ব্যক্তির স্বল্পসুদে ঋণ নিশ্চিত করা গেলে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে হলেও পরিবর্তন আসবে।
ফেনী শহর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পারভেজুল ইসলাম হাজারী বলেন, বৈশ্বিক বিপর্যয়ের এ সময়ে ক্রান্তিকাল পার করছে ব্যবসায়ীরা। একেতো দোকান বন্ধ তার ওপর মাস শেষে মোটা অংকের ভাড়া। এ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা।
এ ব্যবসায়ী নেতা জানান, তাদের পক্ষ থেকে দোকান মালিকদের আহ্বান জানানো হয়েছে ব্যসায়ীদের এক মাসের দোকান ভাড়া মওকুপের জন্য। ওনারা সদয় হলে ব্যবস্থা নেবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২০
এসএইচডি/ওএইচ/