‘এরই মধ্যে ওই অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ৫০০ একর জমি অধিগ্রহণ চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। অবশিষ্ট ৫০০ একর জমি অধিগ্রহণও চূড়ান্ত পর্যায়ে।
এছাড়া এ এলাকায় আরও কিছু অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠছে। এখানে বিদ্যুৎ-গ্যাসের চাহিদা মেটাতে নতুন গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ করবে সরকার। কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর বাখরাবাদ গ্যাসক্ষেত্র থেকে নারায়ণঞ্জের নিউ হরিপুর পাওয়ার প্লান্ট পর্যন্ত ৪২ ইঞ্চি ব্যাসের ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন গ্যাস পাইপলাইন স্থাপন করা হবে।
বাখরাবাদ-মেঘনাঘাট-হরিপুর গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় এ কাজ সম্পন্ন করা হবে। প্রকল্পের মোট প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৪২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। চলতি সময় থেকে ডিসেম্বর ২২ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বিদ্যুৎ শিল্পাঞ্চল ও মেঘনাঘাট এই এলাকায়।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়, নানা কারণে প্রকল্পটি হাতে নিতে যাচ্ছে সরকার। মেঘনাঘাট পাওয়ার হাব এলাকায় বেসরকারি খাতে নির্মিত ৭৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ৫৮৪ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ৫৮৩ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। অর্থাৎ মোট চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রায় ৪০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এছাড়াও হরিপুর, সিদ্ধিরগঞ্জ ও আড়াইহাজার এলাকায় শিল্প, বাণিজ্য ও অন্যান্য গ্রাহকদের গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে কুমিল্লা জেলার বাখরাবাদ থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলার মেঘনাঘাট হয়ে হরিপুর পর্যন্ত ৪২ ইঞ্চি ব্যাসের ১০০০ চাপ সম্পন্ন গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে। এই পাইপলাইনের দৈনিক সঞ্চালন ক্ষমতা এক হাজার মিলিয়ন কিউবিক ফিট।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের উপ-প্রধান (পরিকল্পনা) ড. মো. রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা এলাকায় অনেক উন্নয়নমূলক প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ অর্থনৈতিক অঞ্চলে গ্যাসের প্রয়োজন মেটাতে ৫০ কিলোমিটার নতুন গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় গ্যাসের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) মাধ্যমে বাখরাবাদ থেকে মেঘনাঘাট হয়ে হরিপুর পর্যন্ত ৪২ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইনের ফলে পদ্মা বহুমুখী সেতু হয়ে জাজিরা-টেকেরহাট-খুলনা পর্যন্ত পাইপলাইন নির্মাণ করার মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রকল্পের আওতায় ১০৭ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ২২৬ একর ভূমি অধিযাচন, পাইপলাইন সরঞ্জামাদি কেনাসনহ ৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে। হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ (এইচডিডি) পদ্ধতিতে নয়টি নদী ক্রসিং করা হবে। গড়ে এসব নদীর দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ৮ কিলোমিটার ও তিনটি রেগুলেটিং অ্যান্ড মিটারিং স্টেশন স্থাপন করা হবে।
নানা কারণে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে। দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাস চাহিদা পূরণ ও ভবিষ্যত জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকার বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বর্তমানে মহেশখালীতে স্থাপিত প্রতিটি ৫০০ এমএমএসসিএফডি ক্ষমতার দুটি লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি), ফ্লোয়েটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রি গ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) টার্মিনালের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে আমদানিকৃত গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। আমদানিকৃত গ্যাস চট্টগ্রাম ও ঢাকা অঞ্চলে সরবরাহের লক্ষ্যে মহেশখালী-আনোয়ারা ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প চলমান আছে।
দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যেই মেঘনাঘাট, হরিপুর, সিদ্ধিরগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠছে। বিশেষ করে জাপান অর্থনৈতিক অঞ্চল, কুমিল্লা অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ পরিকল্পনা রয়েছে। আড়াইহাজার উপজেলায় জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের জন্য জিটিসিএল বাখরাবা থেকে মেঘনাঘাট পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় মেঘনাঘাট থেকে হরিপুর পর্যন্ত গ্যাস লাইন সম্প্রসারণের জন্য জিটিসিএল প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে। জিটিসিএল-এর দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে বর্তমানে সর্বমোট ১ হাজার ৬৯৪ এমএমএসসিএফডি গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। গ্যাসের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যেই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২০
এমআইএস/এজে