বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) আসন্ন রমজান উপলক্ষে ভোক্তা সাধারণের জন্য নিরাপদ ও মানসম্মত খাদ্য পণ্য নিশ্চিতকরণ, শিল্পখাতের জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ যথাযথ বাস্তবায়ন ও করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কার্যকর কৌশল নির্ধারণ বিষয়ক সভায় তিনি এই নির্দেশনা দেন।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, রমজান উপলক্ষে বিভিন্ন সুপার শপ এবং চালু থাকা খাদ্যপণ্যের দোকানগুলোতে সার্ভিলেন্স বাড়িয়ে নিরাপদ খাদ্য পণ্যের যোগান নিশ্চিত করতে হবে।
রমজান উপলক্ষে ইফতার ও সেহরিতে অধিকাহারে ব্যবহৃত যেসব পণ্যের নমুনা ইতোমধ্যে বাজার থেকে সংগ্রহ করে বিএসটিআইয়ের ল্যাবরেটরিতে টেস্টিং চলছে, সেগুলোর ফলাফল দ্রুত প্রকাশ করে গণমাধ্যমের সহায়তায় ভোক্তা সাধারণকে জানিয়ে দেওয়া নির্দেশনা দেন তিনি।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, পবিত্র রমজান উপলক্ষে ভোক্তা সাধারণের সুবিধার্থে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরের সুপার শপগুলোতে আখ থেকে উৎপাদিত দেশীয় গুণগতমানের চিনি সহজপ্রাপ্য করতে হবে।
একইসঙ্গে এসব সুপার শপে চিনিকলগুলোতে উৎপাদিত মসুর ডাল, কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ভিনেগার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও ‘সোনার দানা’ জৈব সার বিপণনের জন্য তিনি বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের প্রতি নির্দেশনা দেন মন্ত্রী।
করোনার ফলে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন উল্লেখ করে শিল্পমন্ত্রী বলেন, এসব উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রয় ও বাজারজাতকরণে সর্বাত্মক সহায়তা দেওয়া হবে। এসএমই শিল্পোদ্যোক্তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে অর্থাৎ ই-কমার্স এর মাধ্যমে তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়ে সহযোগিতা বাড়াতে এসএমই ফাউন্ডেশনকে নির্দেশনা দিচ্ছি।
শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, ক্ষুদ্র মাঝারি ও কুটির শিল্পের জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ যাতে শুধু ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তারা পান সেটি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে কোনো প্রকার দুর্নীতি হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
সভায় জানানো হয়, বর্তমানে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের আওতাধীন ১৫টি চিনিকলে ৬৫ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি চিনি মজুদ রয়েছে। এছাড়া বিসিআইসির আওতাধীন সার কারখানা ও গোডাউনসমূহে বর্তমানে মোট ৯ লাখ ৩৬ হাজার ২৭৩ মে. টন ইউরিয়া সার মজুদ রয়েছে। গত বছর একই সময়ে ইউরিয়া সারের মোট মজুদের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৬০ হাজার ৭৬৯ টন। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে ইউরিয়া সারের মোট চাহিদা ২৫ লাখ ৫০ হাজার টন। ইতিমধ্যে প্রায় ২২ লাখ ৬৯ হাজার ৭১১ মে. টন সার কৃষকদের নিকট সরবরাহ করা হয়েছে।
দেশে এখন লবণেরও পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। করোনার প্রকোপের মাঝেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে লবণ মাঠ এবং লবণ মিলগুলোতে উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। চলতি লবণ মৌসুমের ২০ এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার লবণ চাষি ১২ লাখ ৮৩ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন করেছে, যা গত মৌসুমের এই সময়ের চেয়ে ৭০ হাজার মেট্রিক টন বেশি। এ বছর লবণের মোট চাহিদা ছিল ১৮ লাখ ৪৯ হাজার মেট্রিক টন। ২২ এপ্রিল, ২০২০ পর্যন্ত জাতীয় চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে দেশে ১১ লাখ ৮৪ হাজার মেট্রিক টন লবণ মজুদ রয়েছে।
শিল্পসচিব মো. আবদুল হালিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি), বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি), বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) এবং বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসসি) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) ও বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্রের (বিটাক) মহাপরিচালক, এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২০
জিসিজি/এইচএডি