রেল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতি আরও দীর্ঘায়িত হলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে। যা অর্থবছর শেষে রেলের লোকসানের পাল্লাকে আরও ভারী করবে।
তথ্য মতে, সরকারের লোকসানী সেবা খাত রেলওয়ে। অনিয়মের কারণে প্রতিবছরই হাজার হাজার কোটি টাকা লোকসান গুণতে হয় এ খাতকে। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে মাসখানেক ধরে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত এ পরিবহন সংস্থার লোকসানের পাল্লা আরও বেড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্টি পরিস্থিতিতে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আয় হবে না রেলওয়ের। ফলে রাজস্ব আয় না হলেও কলেবর বেড়ে যাবে। এতে পরিচালন ব্যয় তুলনামূলক বেশি হবে। ফলে অর্থবছর শেষে রাজস্ব আয় ও পরিচালন ব্যয়ে বড় ধরনের পার্থক্য তৈরি হবে।
দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সেই হিসেবে ২৬ এপ্রিল ট্রেন চলাচল বন্ধের একমাস পূর্ণ হবে। এ হিসেবে এক মাস যাত্রী পরিবহন থেকে কোনো আয় হচ্ছে না রেলের।
রেলওয়ের পরিচালন শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, একমাস ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রী, মালামাল, পার্সেলসহ বিভিন্ন খাতে প্রায় ১৭০ কোটি টাকা আয়বঞ্চিত হচ্ছে রেলওয়ে। বছর শেষে এটি রেলওয়ের মোট আয়ের ওপর প্রভাব ফেলবে, যা রেলের লোকসানের পরিমাণকে আরও বাড়িবে দেবে।
রেলওয়ের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালের এপ্রিলে ট্রেন পরিচালনা বাবদ আয় হয়েছিল ১৬৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে যাত্রী পরিবহন করে আয় হয়েছিল ৮৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা। মালামাল ও পার্সেল পরিবহন করে আয় হয়েছিল ৪১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। বাকি প্রায় ৪২ কোটি টাকা আয় হয়েছিল বিবিধ খাত থেকে।
রেলসূত্র বলছে, রাজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে চলতি অর্থবছর ৮ কোটি যাত্রী পরিবহনের পরিকল্পনা করেছিল রেলওয়ে। পাশাপাশি মালামাল পরিবহনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩২ লাখ টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে (এপিএ) যাত্রী, মালামালসহ রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১০ শতাংশ।
চলতি অর্থবছর যাত্রী পরিবহন বাবদ রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ। একইভাবে মালামাল পরিবহনে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ। অর্থবছরে একাধিক নতুন ট্রেন চালুও নতুন কোচ সংযোজনের কারণে রাজস্ব আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধির আশায় ছিলেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।
২০০৮-০৯ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত রেলওয়ে ১৪ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার ৬৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে রেলওয়ে। চলমান রয়েছে আরও ৪৮টি প্রকল্প, এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৮ হাজার কোটি টাকা। উন্নয়নে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ সত্ত্বেও গত ১০ বছরে রেলওয়ের লোকসানের পাল্লা কেবল ভারীই হয়েছে।
রেলের অর্থ দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০০৯-১০ অর্থবছরে রেলওয়ের লোকসান হয়েছিল ৬৯০ কোটি টাকা। পরের অর্থবছর তা বেড়ে ৮৬২ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। একইভাবে ২০১১-১২ অর্থবছর ৯৬৩ কোটি, ২০১২-১৩ অর্থবছর ৭৫৮ কোটি, ২০১৩-১৪ অর্থবছর ৮০১ কোটি, ২০১৪-১৫ অর্থবছর ৮৭২ কোটি, ২০১৫-১৬ অর্থবছর ১ হাজার ৩২৫ কোটি, ২০১৬-১৭ অর্থবছর ১ হাজার ৫৩১ কোটি ও ২০১৭-১৮ অর্থবছর ১ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা লোকসান করে রেল। গত অর্থবছর (২০১৮-১৯) সংস্থাটির লোকসানের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭৩৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, করোনার প্রভাব শুধু রেল নয়, সব সেক্টরেই পড়ছে। এ অবস্থায় রেলের ক্ষতি কমাতে পণ্য পরিবহন বাড়ানোর চিন্তা-ভাবনা চলছে। শিগগিরই পণ্য পরিবহনের জন্য চারটি বিশেষায়িত ট্রেন চালু করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০২০
টিএম/ওএইচ/