সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার কারণে ধস নেমেছে দেশের হোটেল ব্যবসায়। নতুন করে বুকিং দিচ্ছেন না কেউ।
তথ্য মতে, গত জানুয়ারি থেকেই হোটেল খাতে করোনার প্রভাব পড়তে শুরু করে। বিশেষ করে তখন থেকেই বিদেশি অতিথি শূন্য হয়ে পড়ে হোটেলগুলো। আর গত ৮ মার্চ দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে পুরোপুরি অতিথি শূন্য হয় হোটেলগুলো। আর গত ২৬ মার্চ থেকে দেশে অঘোষিত লকডাউন চলছে। এটার শেষ কবে, তা-ও বলতে পারছেন না কেউ। ফলে অনিশ্চয়তায় মধ্যে দিন কাটছে এ খাতের উদ্যোক্তাদের।
বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএইচএ) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি থেকে আগামী জুন ২০২০ পর্যন্ত পূর্বানুমান হিসেবে তাদের অন্তর্ভুক্ত হোটেলগুলো এবং অন্যান্য ৫০০টি হোটেল প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
বিআইএইচএ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে বিদেশি অতিথিদের বেশিরভাগই আসেন চীন, জাপান, ভারত, ফ্রান্স, ডেনমার্ক ও শ্রীলঙ্কা থেকে। সাধারণত বছরের এ সময়ে ৭০ শতাংশের বেশি রুমে অতিথি থাকলেও করোনার প্রভাবে সেটি ২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।
তারকা হোটেলগুলোর কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, বছরের প্রথম চার মাসে ব্যবসায়িক কাজে বিদেশিরা বেশি আসেন। তারকা হোটেলে তারা থাকার পাশপাশি ব্যবসায়িক মিটিং করেন। এছাড়া পর্যটকরাও ঘুরতে এসে অনেকে তারকা হোটেলে ওঠেন।
অন্যদিকে হোটেলের বলরুমগুলোতে হয় নানা রকম মেলা, সভা, সেমিনার ও অনুষ্ঠান। প্রায় প্রতিটি হোটেলেই এ সময়ে ৭০-৮০ শতাংশ রুমে অতিথি থাকেন। কোনো কোনো হোটেলে শতভাগ রুম অতিথিতে পরিপূর্ণ থাকে। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবে ক্রমাগত বুকিং বাতিল হয়েছে। নতুন করে অতিথিরা বুকিং করছেন না।
রাজধানীর প্রাচীনতম পাঁচতারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল এরই মধ্যে তাদের সুইমিংপুল, জিমনেশিয়াম ও বারসহ বেশ কিছু সেবা সীমিত করে এনেছে। কর্মীদের অনেককে ছুটিও দিয়েছে।
আরেক পাঁচতারকা হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলমগীর জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হোটেলটির ৩০ শতাংশ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
হোটেল স্যারিনার নির্বাহী পরিচালক মাশকুর সারওয়ার বাংলানিউজকে বলেন, পরিস্থিতি খুবই খারাপ। অবস্থার উন্নতি না ঘটলে বড় ধরনের বিপর্যয়ে পড়তে হবে।
বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সচিব মহসিন হক হিমেল বাংলানিউজকে বলেন, যেখানে ৮০ শতাংশ অতিথি থাকতো সেখানে কমে মাত্র ৫ শতাংশে পৌঁছেছে। হোটেল চালানো কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএইচএ) প্রেসিডেন্ট এইচএম হাকিম বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হোটেলগুলো পড়েছে চরম সংকটে। কোনো কোনো হোটেলের অকোপেন্সির হার ১ শতাংশ থেকে ২ শতাংশ। এরূপ অবস্থা বহাল থাকলে হোটেলগুলোর পক্ষে অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হবে না।
বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করে বিআইএইচএ বলছে, তাদের অন্তর্ভুক্ত হোটেলগুলোর শ্রমিক ও কর্মচারীদের ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত বেতন বাবদ প্রতি মাসে প্রত্যেক কর্মচারীদের ৫০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। এছাড়া হোটেলগুলোর মাসিক বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল ও পানির বিল ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত মওকুফ এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার ওপর আয়কর মওকুফ করা প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে পর্যটন সচিব মো. মহিবুল হক বলেন, করোনায় আমরা আর্থিকভাবে সব সেক্টরেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমরা সবার জন্যই কাজ করছি। প্রণোদনা প্রদান বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবো।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২০
টিএম/এইচএডি/