ব্যবসায়ীরা জানান, করোনার কারণে প্রায় দেড় মাস তাদের ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ থাকলেও ঈদের বাজার ধরতে সব দিক থেকে তারা প্রস্তুত। কারণ প্রতিবছর রমজানের দুই মাস আগে থেকেই ঈদের প্রস্তুতি নিতে হয়।
তারা বলেন, পাঁচ রোজা চলে যাচ্ছে। অন্যান্য বছর এ সময় উৎসবের আমেজ থাকলেও এবার অবস্থা একেবারে ভিন্ন। দেড় মাস ধরে সব ধরনের দোকান পাট ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাই সব ধরনের নির্দেশনা মেনেই তারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে চান।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, সাধারণত রোজা শুরুর কয়েক মাস আগেই সব ব্যবসায়ী রোজা ও ঈদের জন্য প্রস্তুতি নেয়। এবার ৭০ শতাংশ প্রস্তুতি সম্পন্ন করতেই করোনার হানা সবকিছু উলট পালট করে দিয়েছে। প্রায় দেড় মাস ধরে সবধরনের দোকান পাট বন্ধ। এখন সবচেয়ে ভয়ানক বিষয় হচ্ছে আমাদের বেঁচে থাকা।
তিনি বলেন, আমরা সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে দোকান পাট, বিপণিকেন্দ্রে, মার্কেট খুলে দেওয়ার জন্য আবেদন করেছি। আশা করছি সরকার আমাদের প্রয়োজন অনুভব করে শিগগিরই এ বিষয়ে ভালো খবর দেবে।
সরকার যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে, তা বড় ব্যবসায়ী ছাড়া কেউ পাবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রণোদনার দিকে তাকিয়ে থাকলে আমাদের কোনো লাভ হবে না। আমরা এখন অনিশ্চিত গন্তব্যের পথে আছি। কোথায় গিয়ে শেষ হবে জানি না। বিশেষ করে ক্ষুদ্র পুঁজির ব্যবসায়ীদের বেঁচে থাকটাই বড় বিষয়।
ইয়োলো ফ্যাশনের জেনারেল ম্যানেজার (হেড অব রিটেল অপারেশন) হাদি এস এ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, করোনার জন্য প্রায় দেড় মাস আমাদের ব্র্যান্ডশপগুলো বন্ধ থাকলেও রোজা বা ঈদ উপলক্ষে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। করোনার কারণে আমরা ব্যবসায়ীক পরিকল্পনায় কিছু পরিবর্তনও এনেছি। আমরা এখন প্রতিটি শোরুমে সামাজিক দূরত্ব বাজায় ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখছি। ঈদের বাজার ধরার জন্য আমরা সব দিক থেকে প্রস্তুত। তবে সরকারের তরফ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। আমরা আশা করছি ৫ মের পর ভালো কোনো সিদ্ধান্ত আসবে। কারণ সারা বছরের ৪০ শতাংশ বিক্রি হয় এ সময়।
তিনি বলেন, ঈদের বাজার ধরার জন্য এখনও কিছু সময় রয়েছে। যদি দেরি হয় তাহলে সেটাও হারাবো। তবে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য ও কর্মচারীদের বেতন ভাতা দেওয়ার জন্য ব্র্যান্ডশপগুলো খোলার অনুমতি দেওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে আমরা সরকারের নির্দেশমতো সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুত আছি।
স্নোটেক্সের সহকারী ব্যবস্থাপক (পিআর) শেখ রাহাত অয়ন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা রোজা শুরুর দুই থেকে তিন মাস আগে থেকেই ঈদের প্রস্তুতি নিয়ে থাকি। আমরা সব দিক থেকে প্রস্তুত আছি। সরকার ঘোষণা দিলে সবাই ব্যবসা শুরু করলে আমরাও করবে। কিন্তু মানুষের ক্ষতি হয় এমন কোনো পদক্ষেপ আমরা নেবো না।
তিনি বলেন, আমাদের আয় বন্ধ হয়ে গেছে কিন্তু ব্যয় বন্ধ হয়নি। এভাবে কতো দিন চলা যায়। তারপরও সরকার অনুমতি না দিলে আমরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার চিন্তা করব না।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বাংলানিউজকে বলেন, রমজানে আমাদের দেশে ফ্যাশন শিল্প খুব জোরদার থাকে। এবার তাদের ব্যবসা একেবারেই কম হবে। ইতোমধ্যেই তাদের একটা বড় ক্ষতি হয়েছে। এজন্য ই-কমার্সকে জোরদার করা হচ্ছে। আমরা যাতে ই-কমার্সকে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের সাথে যুক্ত করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ও ওষুধ গ্রাহকদের অনলাইনে পৌঁছে দিতে পারি তা নিয়ে এফবিসিসিআইও কাজ করছে। যাতে তারা ঈদের বাজারটা ধরতে পারে বা রমজানে বিক্রি করতে পারে। তবে নিরাপত্তায় সরকারের নির্দেশনা অনুয়ায়ী কাজ করা হচ্ছে। কারণ এবারের রমজানটা অন্য ১০টা রমজানের মতো না। এজন্য মন্দের যতোটা ভালো করা সম্ভব হয়। তাই করা হচ্ছে।
সিনিয়র বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, করোনার মধ্যেও রমজানে ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য সরকার সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় একটি গ্রুপ আছে ই-ক্যাপ। তারা কাজ করে যাচ্ছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তারা বড় পরিসরে আরো কার্যক্রম চালু করতে যাচ্ছে। শপিংমলসহ দোকানপাট খোলার বিষয়টি কেন্দ্রীয়ভাবে দেখা হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে আমার বলাটা উচিত হবে না।
বাণিজ্য সচিব বলেন, রমজান উপলক্ষে আমাদের দুই দিকে প্রস্তুতি ছিল। একটা হলো সাপ্লাই চেইন সচল রাখা সেটা টিসিবির মাধ্যমে ও বাজারে যাতে দ্রব্যমূল্য না বাড়ে সেটা ভোক্তা অধিকারের মাধ্যমে মনিটরিং জোরদার করা। আমরা সে অনুযায়ী কাজ করছিলাম। মাঝে করোনা ভাইরাস এসে পরিকল্পনায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। সেটা হলো রোজা এবং করোনা দুইটা মাথায় রেখেই কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের সকল ধরনের পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। রোজা ও রোজার পরে কোন পণ্যের ঘাটতি হবে না। আমাদের আমদানি রপ্তানি চলমান রয়েছে। তবে আগের মতো পুরোপুরি না। রমজানের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য তেল, ডাল, ছোলা, চিনি, খেজুর ও পিঁয়াজ পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। ভোক্তা অধিদপ্তরের টিম আরও শক্তিশালী করে মাঠে নামানো হয়েছে। তারা ঢাকাসহ সারা দেশে সব সময় মাঠে আছে।
টিসিবিও ঢকায় ৯০টি স্থানসহ সারা দেশের ৪০০ স্থানে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এছাড়া জেলা পর্যাযে যে অনিয়ম হয়েছে সেটা মাথায় রেখেই মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২০
জিসিজি/এজে