গতবছর ভালো ফলন হওয়ায় অনেকে উৎসাহিত হয়ে এ বছর ঋণ করে বেশি জমিতে তরমুজ চাষ করেছিলেন। ফলনও হয়েছে বাম্পার।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার দাকোপের বেশ কয়েকজন চাষি ও ক্ষেত মালিকের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের।
তরমুজ ক্ষেত মালিক দাকোপের বাজুয়া বড়ইতলার সোনার বাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক উজ্জ্বল গাইন বলেন, নিসন্দেহে এবার তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন ফল কাটার সময়। কিন্তু বাজারজাত করতে না পারায় গরমে তরমুজগুলো পচে উঠেছে। আবার অনেক তরমুজ বেশি পেকে যাওয়ায় ফুটে যাচ্ছে। ব্যাপারী না আসায় ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে তরমুজ।
‘সম্প্রতি যশোরের রূপদিয়ার এক ব্যাপারী ৫০ হাজার টাকায় আমার জমির তরমুজ কিনতে চেয়েছিলেন। এজন্য মোবাইলে ১০ হাজার টাকায় বায়নাও দেন তিনি। তরমুজ নিতে ওই ব্যাপারী ট্রলার নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু ঘাট থেকে প্রশাসনের লোক ও বাজার কমিটির লোকজন তাকে ট্রলার থেকে নামতে দেয়নি। বাধ্য হয়ে তিনি অনেক কান্নাকাটি করে ফিরে গেছেন। তার বায়নার টাকা আমাকে ফেরত দিতে হয়েছে। ’
এই স্কুল শিক্ষক বলেন, ব্যাপারীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে গ্রামে আসতে হয়। এটা অনেক ব্যাপারী ঝামেলা মনে করেন। তাই তারা আসছেন না। এছাড়া মধ্যস্বত্বভোগীরাও চাচ্ছে না গ্রামে কোনো ব্যাপারী আসুক। এলেও যেন তাদের মাধ্যমে আসে।
দাকোপের ছিটাবুনিয়া গ্রামের তরমুজ চাষি গৌতম বলেন, আমার চার বিঘা জমিতে তরমুজ চাষে খরচ হয়েছে ৭২ হাজার টাকা। এখন তরমুজ বিক্রি করতে পারছি না। ব্যাপারীরা গ্রামে আসতে হলে ইউএনও-এর কাছ থেকে কাগজপত্র নিয়ে ও করোনার পরীক্ষা করে আসতে হচ্ছে। সবাইরে তো ঢুকতে দিচ্ছে না। তাই তরমুজ ক্রেতারা আসতে পারছে না। তরমুজ পেকে গেছে। প্রতিদিন দু’একটা ফেটে নষ্ট হচ্ছে।
তিনি জানান, তার এলাকায় আড়াইশ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। অনেকের তরমুজ দু’দিন পর পাকা শুরু হবে।
বাজুয়ার তরমুজ চাষি মনোরঞ্জন বৈদ্য বলেন, ভরা মৌসুমে আগে কখনো এমন করুণ দশায় পড়তে হয়নি আমাদের। এবছর তরমুজ কিনতে ব্যাপারীরা আসছেন খুবই কম।
ভয়াবাহ মাহামারি করোনার কারণে অচল সারাদেশ। করোনার বিস্তার রোধে মানুষকে ঘরমুখী করে দিয়েছে সরকার। চলছেনা সড়ক অথবা নৌ-পরিবহনও। এ কারণে বিপাকে দাকোপের হাজারও তরমুজ চাষি।
দাকোপের জমির মাঠজুড়ে রয়েছে রসালো ফল তরমুজ। করোনা দুর্যোগের কারণে যথাসময়ে এ ফল কাটতে পারছেন না চাষিরা। যার ফলে অতিরিক্ত গরমে ক্ষেতেই পচছে হাজারো চাষির স্বপ্ন। দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষিনির্ভর এই অঞ্চলের তরমুজ চাষিরা। ট্রলার ও ট্রাক চলাচল না করায় ঢাকা,চট্টগ্রামসহ দেশের অন্য স্থানে তরমুজ পাঠানো যাচ্ছে না। মানুষ ঘরমুখী হওয়ায় স্থানীয় বাজারগুলোতেও তরমুজের কদর নেই।
এছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির বৈধ কাগজপত্র, আইডি কার্ড এবং স্বাস্থ্যসনদ প্রদর্শনের শর্তে খুলনা, যশোর, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা এলাকার পরিবহন ও চালকদের দাকোপে আসার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। অনুরূপ শর্তে একই অঞ্চলের ক্রেতা বা ব্যাপারীদের দাকোপে এসে তরমুজ কেনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দাকোপের ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে বাজুয়া, দাকোপ, কৈলাশগঞ্জ, লাউডোপ ও বানীশান্তা ইউনিয়নে ব্যাপকহারে তরমুজ চাষাবাদ হয়েছে। দাকোপে এবার ১৫৩৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি।
দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান বাংলানিউজকে বলেন, দাকোপে ১৫৩৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। টার্গেট ছিল ৭শ হেক্টর। ৩৩ শতকের এক বিঘা জমির তরমুজ গতবছর বিক্রি হয়ে ৮০ হাজার টাকা। এবার দাম কিছুটা কম। এবার বিক্রি হচ্ছে এক বিঘা ৫০-৬০ হাজার টাকায়। বিক্রি হচ্ছে না বলে তরমুজ ক্ষেতে পচে নষ্ট হচ্ছে এটা সঠিক নয়। গত কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়ায় কিছু তরমুজ নষ্ট হতে পারে।
তিনি দাবি করেন, ব্যাপারী ট্রাক নিয়ে এসে তরমুজ নিয়ে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৫ ঘণ্টা, মে ০১, ২০২০
এমআরএম/এএ