করোনা সঙ্কটের মধ্যে সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি অর্জনে ভারত ছাড়া বাংলাদেশের ধারে কাছেও কেউ নেই। বড় অর্থনীতির দেশগুলো তো প্রবৃদ্ধি অর্জনে মাইনাস অবস্থায় চলে গেছে।
২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে দেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছিলো ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৯০৯ ডলার।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সূত্র জানায়, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম আট মাসের (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) তথ্য বিশ্লেষণ করেছে বিবিএস। সংস্থাটির প্রাথমিক হিসেবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির এ প্রাক্কলন করা হয়েছে।
এবার প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হবে। এর ফলে জিডিপির আকার দাঁড়াবে ২৮ লাখ ৫ হাজার ১২১ কোটি টাকা। আর মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ দাঁড়াবে ১ হাজার ৯৬৮ দশমিক ৭৩ ডলার (প্রতি ডলার ৮৫.০৯ টাকা ধরে)। মাথাপিছু আয়ের এই গড় হিসাবের ক্ষেত্রে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৭৪ লাখ ধরা হয়েছে। ৮ মাসের প্রাক্কলন করেছে বিবিএস। যা মে মাসের চলতি সপ্তাহে প্রকাশ করা হবে।
করোনা ভাইরাসের কারণে ২০২০ সালে বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশগুলো ভুগবে বলে মনে করছে আইএমএফ। তাদের মতে ২০২০ সালে এশিয়ার মধ্যে ভারতের প্রবৃদ্ধি বেশি হবে ৪ দশমিক ৮ থেকে ৫ শতাংশ।
সংস্থাটির পূর্বাভাস হলো, প্রায় সব দেশের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়ে যাবে। যেমন- যুক্তরাষ্ট্র (মাইনাস ৫ দশমিক ৯ শতাংশ), জার্মানি (মাইনাস ৭ শতাংশ), জাপান (মাইনাস ৫ দশমিক ২ শতাংশ), যুক্তরাজ্য (মাইনাস সাড়ে ৬ শতাংশ), কানাডা (মাইনাস (৬ দশমিক ২ শতাংশ), ব্রাজিল (মাইনাস ৫ দশমিক ৩ শতাংশ) ও রাশিয়া (মাইনাস সাড়ে ৫ শতাংশ)। তবে চীনের ১ দশমিক ২ শতাংশ ও ভারতে ১ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে।
বড় দাতা সংস্থাগুলোও বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ২ থেকে ৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এর আগে বলেছে, করোনার কারণে বাংলাদেশের জিডিপির দশমিক ২ শতাংশ থেকে দশমিক ৪ শতাংশ ক্ষতি হতে পারে। দ্য ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট মনে করে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশের নিচে নেমে আসতে পারে। অবশ্য এসব সংস্থা অর্থবছরের হিসাবে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। তবে বিবিএস বলছে, বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ যা বিশ্বের কোনো দেশ অর্জন করতে পারবে না।
বিশ্বব্যাংক আরও বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশের মধ্যে চলতি অর্থবছরে (নিজ নিজ দেশের) চারটি দেশের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়ে যাবে। দেশগুলো হলো- আফগানিস্তান (মাইনাস ৫ দশমিক ৯ থেকে মাইনাস ৩ দশমিক ৮ শতাংশ), মালদ্বীপ (মাইনাস ১৩ শতাংশ থেকে মাইনাস সাড়ে ৮ শতাংশ), পাকিস্তান (মাইনাস ২ দশমিক ২ শতাংশ থেকে মাইনাস ১ দশমিক ৩ শতাংশ) ও শ্রীলঙ্কা (মাইনাস ৩ শতাংশ থেকে মাইনাস দশমিক ৫ শতাংশ)। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ হতে পারে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। এ ছাড়া নেপালে ১ দশমিক ৫ থেকে ২ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ভুটানে ২ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। সেই হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে।
বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পত্র পত্রিকায় দেখেছি জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ মাসের একটা প্রাক্কলন করা হয়েছে। করোনাকালে সাড়ে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিঃসন্দেহে বিরাট ব্যাপার। আমরা দেখছি সর্বক্ষেত্রে নেগেটিভ। এক্সপোর্ট নেগেটিভ ও ঋণ প্রবাহ সিঙ্গেল ডিজিটে। রেমিট্যান্স প্রবাহ ২০ শতাংশ থেকে নেমে ১০ শতাংশ হয়েছে। বিনিয়োগের অবস্থা শোচনীয়। শুধু কৃষিতে বোরো ভালো হয়েছে। কৃষি খুব ভালো হলে সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার শতাংশের বেশি হয় না। এরমধ্যে মাছ, মুরগী, দুধ ও ডিমের অবস্থা ভালো না। অনেক কিছু নষ্ট হচ্ছে। তারপরও সাড়ে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি খুবই আশার।
তবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অবশ্য বলেছেন, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কোনোভাবেই ৬ শতাংশের কম হবে না।
বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত ‘সাউথ এশিয়া ইকোনমিক ফোকাস’ প্রদিবেদনে বাংলাদেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের হার (জিডিপি) নিয়ে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি বছর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়াবে ২ থেকে ৩ শতাংশ।
এই প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জিডিপি নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের এ পূর্বাভাস সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, কেননা এখনই এটা বলার সময় আসেনি। বিশেষ করে অঙ্ক ধরে বলার উপযুক্ত সময় এটা নয়। আমাদের সামনে তো ৮ মাসের তথ্য রয়েছেই। বিশ্বব্যাংকের এই পূর্বাভাসকে আমি সময় উপযোগী বা পরিপক্ক কোনটাই মনে করি না। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সারাবিশ্বের মত আমাদেরর জিডিপিও কমবে। তবে আমাদের এতোটা কমবে না। কমপক্ষে ৬ শতাংশের ওপরে জিডিপি এ বছরও আমরা অর্জন করতে সক্ষম হবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২০
এমআইএস/এজে