ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য বৃহস্পতিবার (১৪ মে) সরকারের আইসিটি বিভাগের কাছে সেসব উদ্ভাবন উপস্থাপন করা হয়।
এর আগে করোনা আক্রান্ত মানুষের জীবন বাঁচাতে ভেন্টিলেটর বা অক্সিজেন সরবরাহকারী যন্ত্র, ফেস প্রোটেকটিভ শিল্ড, সেফটি গগলস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ইত্যাদি তৈরি করেছে বাংলাদেশি ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটন।
বৃহস্পতিবার এক ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠানে ওই চিকিৎসা সরঞ্জামগুলোর ফাংশনাল প্রোটোটাইপ উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ওয়ালটনের নির্বাহী পরিচালক লিয়াকত আলী, ইলেকট্রনিক্স অ্যাপ্লায়েন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল রানা, আরঅ্যান্ডডি প্রকৌশলী আলিম হাসান ফেরদৌস প্রমুখ।
ভিডিও কনফারেন্সে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ওয়ালটন মেডিকার্ট রোবট এবং জীবাণুনাশক আল্ট্রা ভায়োলেট সিস্টেম তৈরি করেছে। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। করোনার বিরুদ্ধে আমাদের যে যুদ্ধ, তাতে এ ডিভাইসগুলো কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে।
তিনি বলেন, ওয়ালটন দেশের গর্ব। তারা অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ওয়ালটনের এ দুটি নতুন প্রযুক্তিপণ্য উদ্ভাবন ও উৎপাদনের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো বাংলাদেশ এখন আর শুধু ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারকারী দেশ নয়, বরং উৎপাদন ও উদ্ভাবনকারী দেশ হিসেবে সারা বিশ্বের কাছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে নেতৃত্বদানকারী দেশ হিসেবে আবিভূত হয়েছে।
ইলেকট্রনিক্স অ্যাপ্লায়েন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, মেডিকার্ট রোবট, রিমোট কন্ট্রোল ইউভি-সি সিস্টেমসহ তিনটি চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরিতে ওয়ালটন ইলেকট্রিক অ্যাপ্লায়েন্স, মেশিন মেইকিং ও ওয়ার্কশপ এবং ওয়ালটন সায়েন্স অ্যান্ড রিচার্স সেন্টারের সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।
ভিডিও কনফারেন্সে গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন কারখানা থেকে ওই চিকিৎসা সরঞ্জামগুলো প্রদর্শিত হয়।
প্রকৌশলীরা জানান, ওয়ালটনের তৈরি মেডিকার্ট রোবট ডিভাইসটির মডেল ‘ডব্লিউআরএমসি-৪০০ এপি-২০২০’। এটি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি নিয়ন্ত্রিত একটি অটোমেটিক রোবট। যা ৪০০ মিটার বা ১৩০০ ফুট ব্যাস নিয়ে বিচরণ করতে পারে এবং স্বয়ংক্রিভাবে খাদ্য, ওষুধ, চিকিৎসা কিংবা অন্যান্য সরঞ্জাম বহন করতে পারে। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি চালিত এ রোবট একবার পূর্ণ চার্জে ছয় ঘণ্টা চলতে পারে।
এ রোবট ব্যবহার করে আইসোলেশনে থাকা করোনা ভাইরাস কিংবা অন্যান্য ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া যাবে। চিকিৎসক তার কক্ষে বা অন্যত্র বসে কম্পিউটার, মোবাইল ফোন বা রিমোটের মাধ্যমে এ রোবট পরিচালনা করতে পারবেন। এতে বিশেষ ক্যামেরা, মাইক্রোফোন ও স্পিকার যুক্ত রয়েছে। এর মাধ্যমে চিকিৎসক এবং রোগী পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন।
চিকিৎসাক্ষেত্র ছাড়াও এ রোবট অফিস-আদালত, শিল্প-কারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, জনসাধারণ সমাগমের স্থান যেমন বিমান কিংবা নৌ বন্দর, বাস-রেল স্টেশন, শপিং মল ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে।
জীবাণুনাশক রিমোট কন্ট্রোল ইউভি-সি সিস্টেম সম্পর্ক প্রকৌশলী আলিম হাসান ফেরদৌস বলেন, এর একটি হলো ইউভি (আল্ট্রা ভায়োলেট) ট্রলি। যার মডেল ডব্লিউইউভি-টি১৫০। এটি ২৫৩ দশমিক ৭ ন্যানোমিটার রশ্মি যা যেকোনো বস্তুর পৃষ্ঠতলের ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারে। রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে দূর নিয়ন্ত্রিত এ ইউভি ট্রলি হাসপাতাল, বাসাবাড়ি ও অফিসে ব্যবহার করা যাবে। ওয়ালটনের তৈরি এ ইউভি ট্রলিতে মানবদেহের জন্য আধুনিক সুরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে।
ওয়ালটন আরও তৈরি করেছে জীবাণুনাশক রিমোট কন্ট্রোল ইউভি-সি থার্মাল জার্মিসাইডাল চেম্বার। যার মডেল ‘ডব্লিউ ইউভি-টি২৬০এল’। এটি দুইভাবে জীবাণু ধ্বংস করে। ইউভি রশ্মি এবং তাপের মাধ্যমে। এতে রিসাইডুয়াল হিটার ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে এটি ৯০ ডিগ্রি পর্যন্ত আদ্রতামুক্ত তাপ সৃষ্টি করতে পারে। এতে স্বয়ংক্রিভাবে তাপ ও সময় নিয়ন্ত্রণ করা যায়। রয়েছে মানবদেহের জন্য আধুনিক সুরক্ষা ব্যবস্থা। এর বিশেষ সেন্সর মানুষ কিংবা প্রাণীর উপস্থিতি থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এই ইউভি-সি থার্মাল চেম্বার দিয়ে পিপিই, মাস্ক, গ্লাভস, বাসনপত্র, খাদ্যদ্রব্য ইত্যাদি জীবাণুমুক্ত করা যাবে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ওয়ালটনের তৈরি মেডিকার্ট রোবট ও জীবাণুনাশক রিমোট কন্ট্রোল ইউভি-সি সিস্টেম করোনা মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশে তৈরি এসব গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সরঞ্জাম বিদেশে রপ্তানিরও সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২০
আরআইএস