ঈদুল ফিতরের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি থাকলেও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বন্ধ রয়েছে মতিঝিলের দোকানপাট। বন্ধ রয়েছে বেচাকেনা।
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি চলছে ২৫ মার্চ থেকে। চলবে ৩০ মে পর্যন্ত। ১০ মে থেকে সীমিত পরিসরে দোকানপাট খোলার জন্য সরকারের নির্দেশনা থাকলেও অধিকাংশ বড় বড় বিপণিবিতান বন্ধ রয়েছে। ঘরের বাইরে মানুষের আনাগোনা কম। স্থবির হয়ে পড়েছে ব্যবসাবাণিজ্য।
ঈদের আগে মতিঝিলের শাপলা চত্বর ও আশপাশের এলাকায় ফুটপথে বেশ কিছু জামা-কাপড় ও থান কাপড়ের দোকান বসলেও এ বছর পুরো এলাকাই রয়েছে ফাঁকা। মতিঝিলের দোকানপাট ও ফুটপথে বেচাকেনার হিড়িক পড়ে যায়। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সব শ্রেণীপেশার মানুষ মতিঝিল থেকে কেনাকাটা করেন। করোনা ভাইরাসের কারণে ফুটপথের চায়ের দোকান, ফলের দোকান, খাবার হোটেল বন্ধ হয়ে গেছে। সবাই নিরাপদ স্থানে অবস্থান করছেন। সবকিছু মিলিয়ে রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকা এখন থমকে আছে।
শাপলা চত্বর এলাকার ফল ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ ফুটপথে দোকান বসাতেন। এ বছর বসাতে পারেননি। ভ্যানে করে তরমুজ ও বাঙ্গি বিক্রি করছেন।
তিনি বলেন, এ ভাইরাসের কারণে সবকিছু বন্ধ হয়ে গেছে। খাবার ও ফলের দোকান চালু আছে। তবে ফুটপথে বসতে দিচ্ছে না। তাই ভ্যানে করে বিক্রি করছি।
একমাস আগেও সকাল ৮টা বাজার আগেই জনারণ্য হয়ে যেত রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল। যানবাহনের চাপে দৈনিক বাংলার মোড় থেকে শাপলা চত্বর যেতে পেরিয়ে যেত প্রায় ঘণ্টাখানেক সময়। সেই মতিঝিল এখন জনশূন্য হয়ে থমকে আছে।
করোনা ভাইরাসের কারণে এ ভুতুড়ে অবস্থা তৈরি হয়েছে ঢাকার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র মতিঝিল এলাকার।
এ এলাকায় দেশের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়, অধিকাংশ সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, বীমার প্রধান কার্যালয়, পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ একচেঞ্জ কমিশন, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, ডিসিসিআইসহ বহু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
বেসরকারি এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে সবকিছু স্থবির হয়ে গেছে। সীমিত পরিসরে দোকানপাট খুললেও অপ্রয়োজনে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। এতে ব্যবসাবাণিজ্য কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে ব্যাংকগুলোতেও। ছোট ছোট আমানতকারীরা টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। জমা হচ্ছে কম।
মতিঝিলের একটি ব্যাংকের নিরাপত্তাপ্রহরী হাবিবুর রহমান বলেন, অফিস, আদালত ও ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ থাকায় মতিঝিলে মানুষের আগমন নেই। কিছু মানুষ জরুরি প্রয়োজনে ব্যাংকে এলেও যত দ্রুত সম্ভব কাজ সেরে বেরিয়ে পড়ছেন। সন্ধ্যার পরে এক ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয় মতিঝিলে।
সোমবার (১৮ মে) সকালে মতিঝিল এলাকাঘুরে ও দায়িত্বরত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণ ছুটির কারণে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় ফুটপথের বহু মানুষের জীবিকা বন্ধ হয়ে গেছে। আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে তারা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এরা সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পেলেও অনেকেই আবার পাচ্ছেন না। ফলে সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে অসহায় মানুষদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৮ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২০
এসই/আরবি/