বর্তমানে মুরগির খাবারের অতিরিক্ত দাম ও করোনা মহামারির কারণে পরিবহন বন্ধ থাকায় ডিম অন্যত্র পাঠাতে না পারায় প্রাথমিকভাবে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি খামারিদের।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার নাজিরপুরে ২০৩টি লেয়ার ও ১৪৪টি সোনালি, মঠবাড়িয়ায় ৩৫টি লেয়ার ও ৬৩টি সোনালি, ভান্ডারিয়ায় ৪টি লেয়ার ও ৩৮টি সোনালি, কাউখালীতে ২০টি লেয়ার ও ৫টি সোনালি, ইন্দুরকানীতে ৩৮টি লেয়ার ও ২৯টি সোনালি, নেছারাবাদে ৬২৮টি লেয়ার ও ২৭০টি সোনালি এবং জেলার সদর উপজেলায় ৭০টি লেয়ার ও ৩০টি সোনালি মুরগির খামার রয়েছে।
নাজিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের পোল্ট্রি খামারি মলয় বেপারী জানান, তার খামারে প্রায় ২ হাজার মুরগি রয়েছে। প্রতি হাজার মুরগির বাচ্চা ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। আর এ খামার দেখাশোনার জন্য কাজ করছেন দুই জন কর্মচারী। তাদের প্রত্যেকের বেতন বাবদ মাসে ১৫ হাজার টাকা করে ৩০ হাজার টাকা দিতে হয়। তাছাড়া তাকেও নিয়মিত সময় দিতে হয়। প্রতিমাসে ২ হাজার মুরগির জন্য দৈনিক প্রায় ৫ বস্তা খাবার দিতে হয়। প্রতি বস্তা খাবারের দাম ১৮৫০ টাকা। এতে দৈনিক ৯২৫০ টাকা করে মাসে প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার টাকার খাবার খরচ হয়, এছাড়া ১০ হাজার টাকার ওষুধ, ১ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিলসহ প্রতি মাসে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়।
তিনি আরও জানান, খামারের এসব মুরগি হাজার প্রতি দৈনিক ৮০০ থেকে ৮৫০টি ডিম দেয়। খামারে থাকা ২ হাজার মুরগি থেকে দৈনিক ১৬০০ থেকে ১৭০০ ডিম পান তিনি। আর মাসে পান গড়ে ৫০ হাজার ডিম। এ সব ডিম প্রতিটি এখন সাড়ে ৪ টাকা থেকে ৫ টাকা দরে বিক্রি করেন। এতে তিনি প্রতি মাসে সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা পান। এ ডিম বিক্রির পরও প্রতিমাসে তার লোকসান হয় প্রায় ৭০ হাজার টাকা।
একই কথা জানালেন স্থানীয় খামারি মো. আক্রাম আলী শেখ। তার খামারে ৩ হাজার ২০০ মুরগি রয়েছে। এতে প্রতিমাসে প্রায় সোয়া ১ লাখ টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে। তাছাড়া পরিবহন সমস্যায় নিয়মিত খাবারও পাচ্ছেন না। এ মুহূর্তে এ লোকসান থেকে বাঁচতে মুরগিগুলো মাংসের মুরগি হিসেবে বিক্রি করলে আপাতত বড় ধরনের লোকসানের হাত থেকে বাঁচতে পারি।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার সুদেব সরকার বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলায় থাকা প্রায় ৩৪৭টি পোল্ট্রি খামারিদের নিয়মিত খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। তাদের খামারের ডিম বিক্রিতে যাতে বাজারের সর্বোচ্চ দাম পান সেজন্য জেলার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন মোকামে (বাজার) খোঁজ নিয়ে খামারিদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে বিক্রির ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা যাতে কোনো হয়রানি ছাড়া সহজে ঋণ পান সেজন্য যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার এসএম আইয়ুব আলী বাংলানিউজকে জানান, জেলার প্রতিটি উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্ট উপজেলার খামারিদের সঙ্গে সার্বিক যোগাযোগ রেখে সর্বপ্রকার উপকারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে, এ শিল্পের খামারিদের ক্ষতির পরিমাণসহ ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। খামারিদের বার্ষিক শতকরা ৪ টাকা সরল সুদে ঋণ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার তফসিলি ব্যাংকগুলোকে মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিয়েছে। আর এ ঋণ পেতে খামারিদের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২০
আরএ