ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ২ থেকে ৩ শতাংশ নেমে আসবে। সরকার অবশ্য বলছে, এ বছর ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।
এদিকে করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধার কার্যক্রম ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে প্রতিফলিত হবে বলে জানিয়েছে অর্থবিভাগের একাধিক সূত্র। আর এজন্য দেশের শিল্প খাতকে আবার চাঙ্গা করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। একইভাবে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান ধরে রাখতে হলে আবাসন খাতে সরকারি সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। কেননা এ খাতেই প্রায় অর্ধকোটি শ্রমিকের কর্মসংস্থান। এছাড়া এ খাত থেকে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করে থাকে।
কোভিড-১৯ পরবর্তী ধসে পড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে হলে, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান ঠিক রাখতে হলে আবাসন খাতের পাশাপাশি শিল্প-বাণিজ্য, কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতকে চাঙ্গা করতে হবে। একইভাবে অপ্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এবং নারী উদ্যোক্তা যারা ব্যাংক ঋণের বাইরে রয়েছেন তাদেরকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে হবে। এর পাশাপাশি বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির নতুন বাজার অনুসন্ধান করতে হবে। বৈদেশিক শ্রমবাজার পুনরুদ্ধার করতে হবে। যেসব প্রবাসী দেশে ফিরে এসেছেন কোভিড-১৯ পরবর্তী তাদেরকে ফেরত পাঠাতে হবে। আর যাদের ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে না তাদের জন্য দেশেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। একইভাবে আসছে বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ খাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
সূত্রমতে, চলমান এই সংকট দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে। এই প্রভাব মোকাবিলায় সরকার ইতিমধ্যে আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এটির সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করতে পারলে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের হারানো গতি ফিরে আসবে বলে মনে করেন সরকার সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশের মানুষের হাতে যে বিপুল পরিমাণ অপ্রদর্শিত টাকা রয়েছে সেগুলোকে বিনিয়োগে আনতে হবে। এজন্য আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ১৯বি ও ১৯বিবি ধারা পুনঃপ্রবর্তন করার দাবি জানানো হয়েছে। ২০১৩ সালে আয়কর অধ্যাদেশের ওই ধারা সংযোজন করায় সে বছর দেশের আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত ব্যাপক টাকার বিনিয়োগ হয়েছিল। সে সময় ৫০ হাজার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এ সুযোগ নিয়েছিল। এতে ওই বছর এ খাতে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ ঘটে।
এনবিআর সূত্র জানায়, বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে টেনে তুলতে বাজেটে কার্যকর উদ্যোগ থাকবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বৈধভাবে উপার্জিত অপ্রদর্শিত টাকা বিনা প্রশ্নে আবাসন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ। এই উদ্যোগ আবাসন খাতকে চাঙ্গা করবে। এছাড়া সরকারি কর্মচারীরা স্বল্প সুদে গৃহনির্মাণের যে ঋণ পেয়ে থাকে এ সুবিধা বেসরকারি চাকরিজীবী ও প্রবাসী বাংলাদেশির জন্য উন্মুক্ত করার কথা ভাবছে এনবিআর। এতে একদিকে মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে, অন্যদিকে সরকারেরও বিপুল রাজস্ব বাড়বে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, করোনা-পরবর্তী দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে হলে দেশীয়ভাবে যেমন বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, একইভাবে বিদেশি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতে হবে। হুন্ডির মাধ্যমে দেশ থেকে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে যায় সেটা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠালে প্রবাসীরা অতিরিক্ত ২ শতাংশ প্রণোদনা পাচ্ছেন সরকারের এমন উদ্যোগ সত্ত্বেও একটি চক্র হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমনকি আমদানি-রপ্তানির আড়ালে একটি চক্র দেশ থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করছে।
গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) প্রতিবেদন অনুযায়ী- গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। করোনা-পরবর্তী ব্যাংকিং খাতের জন্য কার্যকর কিছু পদক্ষেপ নেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে। খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা, অর্থ পাচার, ব্যাংকের পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের অনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করা জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি এ কে খান অ্যান্ড কোম্পানির পরিচালক আবুল কাশেম খান বলেন, সরকার চাইলে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আরও অনেক পদক্ষেপ নিতে পারে। দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নয়নে কাজ করতে হবে। অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে হবে। চীন থেকে যেসব দেশ তাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করছে সেসব দেশকে আমাদের দেশের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে হবে। এটাই অবশ্যই আমাদের জন্য একটা বড় সুযোগ। তা কাজে লাগাতে পারলে কোভিড-১৯ পরবর্তী আমাদের বিদেশী বিনিয়োগ বাড়বে। এ ছাড়া দেশের অনেকের কাছেই কালো টাকা রয়েছে সে টাকাটা বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলে দেশ থেকে পাচার হয়তো কিছুটা কমানো সম্ভব হবে।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন
বাংলাদেশ সময়: ০০৫৬ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০২০
এইচএডি/