রাজশাহী জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় আম বাগান রয়েছে ১৭ হাজার ৬৮৬ হেক্টর জমিতে। এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন।
বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী ১৫ মে থেকে সব ধরনের গুটি আম নামানো শুরু হয়েছে। কিন্তু রাজশাহীর কোনো বাগানের গাছ থেকে এদিন আম নামানো হয়নি। গত ২০ মে থেকে গোপালভোগ এবং ২৫ মে থেকে রানীপছন্দ ও লক্ষণভোগ বা লখনা এবং ২৮ মে থেকে হিমসাগর বা খিরসাপাত নামানোর সময় শুরু হয়েছে। এছাড়া ল্যাংড়া ৬ জুন, আম্রপালি ১৫ জুন এবং ফজলি ১৫ জুন থেকে নামানোর জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়। সবার শেষে ১০ জুলাই থেকে নামানোর সময় বেঁধে দেওয়া আছে আশ্বিনা এবং বারি আম-৪ জাতের আম।
রাজশাহীর বাঘা-চারঘাট, পবা-মোহনপুরসহ আশপাশের উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত মৌসুমের তুলনায় এবার আম দেরিতে পরিপক্ব হচ্ছে। তাই চাষিরা আম নামাচ্ছেন না। করোনার সংকটকালেও বাজার না পাওয়ার আশঙ্কায় চাষিদের তড়িঘড়ি আম নামানোরও ব্যস্ততা নেই। ফলে এখনো জমে ওঠেনি আমের বাজার।
আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, পরিপক্বতা না আসায় তারা আম নামাচ্ছেন না। গত মৌসুমের তুলনায় এবার আমের আঁটি দেরিতে শক্ত হচ্ছে। দেরিতে গুটি আসা, বৈরী আবহাওয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আম নামাতে সময় লাগছে।
এছাড়া আমচাষিদের রঙিন স্বপ্নে এবার হানা দিয়েছে আম্পান। গত ২২ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে রাজশাহীতে ঝড়-বৃষ্টিতে প্রচুর আম ঝরে যায়। কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়ে গাছের ১৫ শতাংশ আম ঝরে পড়েছে। এতে চাষিদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১২০ কোটি টাকার।
সোমবার (১ জুন) রাজশাহীর সবচেয়ে বৃহত্তম আমের হাট বানেশ্বরে কয়েকজন চাষি অল্প পরিমাণে আম নিয়ে বিক্রির জন্য আসেন। রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে শুক্রবার (২৯ মে) থেকে বসছে এই হাট। এটিই রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের হাট। কিন্তু বাগানগুলো থেকে পুরোদমে থেকে আম না ভাঙা শুরু হওয়ায় জমছে না রাজশাহীর সর্ববৃহৎ এই হাট।
এদিন সকালে হাটে গিয়ে দেখা যায়, ভ্যানের ওপর ঝুড়ি আর প্লাস্টিকের ক্যারেটে সাজিয়ে রাখা হয়েছে গুটি, রানিপছন্দ আর গোপালভোগ জাতের আম। তবে পুরো হাট এখনও ভরেনি। স্বল্পসংখ্যক ব্যবসায়ী হাটে আম তুলেছেন। হাটে যেমন বিক্রেতার সংখ্যা কম তেমনি কম ক্রেতার সংখ্যাও। তাই তুলনামুলক কম আমের দামও।
মানভেদে গুটি জাতের আম ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করা হচ্ছে। আর গোপালভোগ বিক্রি করা হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ টাকা মণ দরে। তবে আকারে একটু বড় গোপালভোগের দাম ব্যবসায়ীরা ২ হাজার টাকা পর্যন্ত হাঁকছেন। ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে সেসব আম। তবে হাটে হিমসাগর বা খিরসাপাত দেখা যায়নি।
জানতে চাইলে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ভাল্লুকগাছি গ্রামের চাষি আবুল হোসেন বলেন, প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী এখন কয়েক প্রজাতির আম পাড়া যাবে। তবে আম এখনও পাড়ার মতো হয়নি। এবার বাজারের যে অবস্থা তাতে আম কখন নামালে ঠিক হবে সেটাও বুঝতে পারছি না। আবার এবার আম পাড়ার সময়টাও ঠিকমতো নির্ধারণ হয়নি। আম পাড়ার সময় কিছুটা আগেই নির্ধারণ করা হয়েছে।
আমের ক্রেতা আবু সিদ্দিক ওসমানী জানান, প্রতিবছরই আম কিনে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠানো লাগে। সে জন্য এবারও হাটে এসেছেন। কিছুদিন পর হাটে প্রচণ্ড ভিড় দেখা দিতে পারে। তাই তিনি আগেভাগেই আম কিনতে এসেছেন। আমের দাম নিয়ে অভিযোগ নেই বলেও জানান তিনি।
এদিকে, করোনাকালে বাজারজাত নিয়ে যেন সমস্যা না হয় সে জন্য এবারই প্রথম শুধু আমের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রয়োজনীয়সংখ্যক ট্রেন চলবে। ট্রেনে দেড় টাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এবং এক টাকা ৩০ পয়সা কেজি ভাড়ায় রাজশাহী থেকে আম ঢাকায় নেওয়া যাবে। ঢাকায় গিয়ে ব্যবসায়ীদের সুবিধামতো স্টেশনে আম নামানো হবে। এছাড়া, কুরিয়ার সার্ভিসগুলোও আম পাঠাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বলেন, রাজশাহীর এমন আম ঝড়-শিলাবৃষ্টির মাঝেই টিকে থাকে। তাই আপাত দৃষ্টিতে চাষিরা লোকসানের আশঙ্কা করলেও শেষ পর্যন্ত ক্ষতি খুব একটা হবে না।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক বলেন, গাছ থেকে পরিপক্ব আম নামানো, বিষমুক্ত আম বাজারজাতকরণ, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আম বিপণন ও দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের জন্য এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে।
রাজশাহীর প্রতিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এখন বিষয়গুলো মনিটরিং করছেন। আর নতুন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না আসলে এই ক্ষতি সামলিয়ে ওঠা যাবে। এখন জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময় মেনে পুরোদমে আম নামানো শুরু হলে ব্যবসায়ীরা এত প্রতিকূলতার পরও লাভের মুখ দেখতে পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন- রাজশাহী জেলা প্রশাসক।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৬ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০২০
এসএস/এএ