ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

করোনায় কৃষকের ক্ষতি ৫৬৫৩৬ কোটি টাকা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫০ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০২০
করোনায় কৃষকের ক্ষতি ৫৬৫৩৬ কোটি টাকা

ঢাকা: করোনা ভাইরাসের কারণে সারাদেশের কৃষকের ক্ষতি হয়েছে ৫৬ হাজার ৫৩৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এসব কৃষকের ৯৫ শতাংই এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি কোনো ধরনের সহায়তা পাননি। খাতভিত্তিক হিসাব করলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মাছচাষিরা।

টানা দু’মাসের ছুটিতে দেশের কৃষকদের পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত বন্ধ থাকা এবং দেশের খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে ব্র্যাকের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

বৃহস্পতিবার (৪ জুন) এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।



এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের গবেষণাদলের সদস্য নাহরিন রহমান স্বর্ণা।

করোনা ভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকার কৃষকদের যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তা কৃষকবান্ধব, কৃষকের উৎপাদিত পণ্য সরকার কিনে ওএমএস এর মাধ্যমে বিক্রি ও ত্রাণ হিসেবে বিতরণ করা এবং মানসম্পন্ন বীজ দিয়ে সহায়তা করারও প্রস্তাব দিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক।

সারাদেশের সব কৃষক ও খামার বিবেচনায় আনলে কৃষকের আয় কমেছে ৫৬ হাজার ৫৩৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। পোল্ট্রিখামারিদের তিনজনের দু’জনই জানিয়েছেন তাদের আয় কমেছে। খাতওয়ারি হিসাব করলে মাছচাষিদের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি।

প্রতি তিনজন কৃষকের একজন বলেছেন তাদের আয় কমে গেছে। চারটি সাব সেক্টরে গড়ে আয় কমেছে ২ লাখ ৭ হাজার ৯৭৬ টাকা।

কৃষকদের ক্ষতি, বাজার বন্ধ থাকা এবং দাম কমে যাওয়া-  এসব চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণের জন্য আসলে কি  উদ্যোগ নিয়েছেন কৃষকরা। ৪২ শতাংশ কৃষক কিছুই করতে পারেননি। দেড়মাসে বাজারের এত পরিবর্তন হয়েছে যে তারা কোনো উদ্যোগ নেওয়ার সুযোগই পাননি। ২২ শতাংশ কৃষক তাদের সঞ্চয় থেকে খরচ করেছেন এবং উৎপাদন করেছেন। এতে ভবিষ্যতে আরও বেশি ঝুঁকির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
১১ শতাংশ কৃষক খাদ্য উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছেন। ২ শতাংশ কৃষক উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছেন। ৯৫ শতাংশ কৃষক এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি কোনো ধরনের খাদ্য সহায়তার আওতায় আসেনি। ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা অনিশ্চয়তায়। ৮২ শতাংশ কৃষক মনে করেন এই সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে না। সমস্যা চলমান থাকলে তারা কী করবেন জানতে চাইলে ৪১ শতাংশ কৃষক বলেছেন তারা ঋণ নেবেন বিভিন্ন উৎস থেকে। ১৮ শতাংশ কৃষক তাদের সঞ্চয় পুঁজি করে জীবনধারণ করবেন। ১৮ শতাংশ আসলে জানেনই না উৎপাদনবিমুখ হতে হলে তারা কী করবেন। ১৪ শতাংশ কৃষকের আয়ের অন্য উৎস রয়েছে।
৬৮ শতাংশ কৃষক সহজ শর্তে ঋণ সহায়তা চান। ৫৬ শতাংশ চান তাদের পণ্যমূল্য আগের অবস্থায় ফিরে যাক। ৪৮ শতাংশ কৃষক চান কম এবং ন্যায্যমূল্যে সার এবং কীটনাশক পেতে পারেন। বারবার দেখা যাচ্ছে ঋণের প্রতি কৃষকের একটি চাহিদা রয়েই যাচ্ছে।

৬৪ শতাংশ কৃষক জেনেছেন তাদের জন্য সরকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। আবার ৭৯ শতাংশ কৃষক জানেন না কীভাবে এই প্যাকেজ থেকে ঋণ পাওয়া যাবে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ১৫৮১ জন কৃষকের ৩৯ শতাংশের কোনো ব্যাংক হিসাব নেই। এবং ৭১ শতাংশ বর্গাচাষি বা ভূমিহীনের কোনো ব্যাংক হিসাব নেই।  

২০ শতাংশ কৃষকের আগে ঋণ নেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ব্যাংকের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক নেই তারা কতটুকু ঋণ পাবেন সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

মার্চের শেষ থেকে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত। সাধারণ ছুটি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রব্যমূল্য প্রায় ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছিল। এসময় ত্রাণের জন্য মোটা চাল ও লাল মশুরের ডালের দাম ৩০ থেকে ৩২ শতাংশ বেড়ে যায়। আবার মে মাসের শুরুর দিকে যখন মানুষের কাছে অতিরিক্ত পণ্য ও ত্রাণের পণ্য মজুদ করা হয়ে গেছে। তখন মোটা চাল, মশুরের ডালের দাম ও চাহিদা দুটোই নিচের দিকে নামতে শুরু করেছে। এসময় হোলসেলাররা তাদের পণ্য লোকসানেও ছেড়ে দিয়েছেন।  

এপ্রিলের শুরুর দিতে নিত্যপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিপরীত চিত্র দেখা যায় পোল্ট্রি ও দুধের বাজারে। চাহিদা না থাকায় দাম কমেছে ১০ থেকে ১২ শতাংশ। ১৭ শতাংশ পোল্ট্রি খামারি উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছিল। ২ শতাংশ পুরো উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন।  

মে মাসে পোল্ট্রির দাম ২৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। যেটা এখনো বিদ্যমান। বাজারের ঊর্ধ্বমুখী প্রভাবটা কৃষকের কাছে পৌঁছায়নি।  

মাছচাষিদের ১০০ শতাংশই কোনো না কোনো সমস্যায় পড়েছেন। পোল্ট্রি পণ্যের দাম কমেছে ৪৪ শতাংশ। দুধের দাম কমেছে ২২ শতাংশ। ৩৮ থেকে ৯০ শতাংশ কম দামে সবজি বিক্রি করতে হয়েছে কৃষককে।

অপরদিকে সার, বীজ, ফিডের দাম অনেকাংশে বেড়েছে। গমের ভুসির দাম বেড়েছে ১৯ শতাংশ। খৈল এর দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ এবং পোল্ট্রি মেডিসিনের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৭ শতাংশ। ৬৬ শতাংশ কৃষক কম দামে তাদের পণ্য বিক্রি করেছেন।  

এসব তথ্য সংগ্রহ করার জন্য ব্র্যাকের গবেষণাদল সারাদেশের ১৫৮১ জন কৃষক ও ১১ জন কৃষকের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন। এছাড়াও খুচরা, পাইকারি বিক্রেতা ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।
 
ব্র্যাকের সিনিয়র ডাইরেক্টর কেএএম মোর্শেদের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও অংশ নেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক উপাচার্য ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এমএ সাত্তার মন্ডল, প্রাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াছ মৃধা, এসিআই এগ্রি বিজনেসের এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর ড. এফ এইচ আনসারী ও ব্র্যাক ডেইরি অ্যান্ড ফুড এন্টারপ্রাইজের পরিচালক মোহাম্মদ আনিসুর রহমান।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০২০
এসই/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।