ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বেনাপোল স্থলবন্দরে চালু হচ্ছে রেলকার্গোতে আমদানি-রফতানি

উপজেলা করসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৬ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০২০
বেনাপোল স্থলবন্দরে চালু হচ্ছে রেলকার্গোতে আমদানি-রফতানি বেনাপোল স্থলবন্দরে চালু হচ্ছে রেল কার্গো

বেনাপোল (যশোর): করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে দীর্ঘদিন দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে পণ্য আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। এ পথে আমদানি-রফতানি সচল রাখতে বিকল্প পথ হিসেবে রেলপথে চালু হচ্ছে সাইডডোর রেল কার্গো। খুব দ্রুত এ রুটে এফসিএল কন্টেইনারও চালু হবে বলে জানা গেছে।

শনিবার (০৬ জুন) বেনাপোল কাস্টমস হাউজের কমিশনার বেলাল হোসেন চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া তিনি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, বন্দর ও রেল কর্তৃপক্ষকে সাথে নিয়ে ইতোমধ্যে রেলপথের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

জানা যায়, এর আগে বেনাপোল রেলপথে ভারত থেকে সরাসরি শিল্পকারখানার কিছু কাচামাল, পাথর ও জরুরি কিছু খাদ্যদ্রব্য আমদানি হয়ে আসছে। যা স্থলপথে বাণিজ্যের মাত্র ৫ শতাংশ। আমদানি পণ্য বেনাপোল স্টেশনে পৌঁছানোর পর সরাসরি তা নওয়াপাড়া নিয়ে ব্যবসায়ীদের খালাস করতে হতো। ফলে দীর্ঘ সময় আর খরচ বৃদ্ধির কারণে এপথে ব্যবসায়ীদের আমদানিতে আগ্রহ ছিল কম।

এখন সাইডডোর রেলকার্গো সিষ্টেমের ফলে সব ধরনের পণ্য বন্দরে আনলোড ও এখান থেকে ব্যবসায়ীরা খালাসের সুযোগ পাবেন। এতে যেমন বাণিজ্যে গতি ফিরবে তেমনি সরকারের রাজস্ব আয়ও কয়েকগুণ বাড়বে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, স্থলপথে আমদানি বন্ধ থাকায় কেবল ব্যবসায়ীরা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন না, সরকারও শত শত কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বেনাপোল রেলপথে সাইডডোর কার্গো চালুর ফলে ব্যবসায়ীরা সব ধরণের পণ্যের আমদানি বাণিজ্যে সুবিধা পাবে। এতে ব্যবসায়ীরা যেমন উপকৃত হবেন তেমনি সরকারেরও রাজস্ব আয় স্বাভাবিক থাকবে।

ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট এক্সপোর্ট কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান জানান, দেশের স্থলপথে যে পণ্য আমদানি বাণিজ্য হয় তার ৭০ শতাংশ হয়ে থাকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। করোনা ছাড়াও স্থলপথে হরতাল, অবরোধ, শ্রমিক অসন্তোষসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় সময়মতো পণ্য সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে প্রায়ই বাণিজ্য ব্যাহত হয়। সাইডডোর রেলকার্গো ও এফসিএল কন্টেনার চালু ব্যবসায়ীদের এমন সমস্যা থেকে মুক্তি দেবে।

ব্যবসায়ীরা বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধের লক্ষ্যে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষের লকডাউনে প্রায় আড়াই মাস যাবৎ স্থলপথে আমদানি, রফতানি বন্ধ রয়েছে। এতে একদিকে যেমন চরমভাবে লোকসানের কবলে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা, তেমনি আমদানি বন্ধ থাকায় প্রয়োজনীয় কাচামাল সরবরাহ করতে না পারায় দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো সচল করা সম্ভব হচ্ছে না। এ মুহূর্তে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টায় বেনাপোল রেলপথে সাইডডোর রেলকার্গো এবং এফসিএল কন্টেইনার চালুকরণ বাণিজ্যিক ক্ষতি কমাতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসেন চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ভারত অংশে পার্কিংয়ের নামে এক শ্রেণীর মানুষের অবৈধ অর্থবাণিজ্যের কারণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে স্থলপথে বাণিজ্যে নানান প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছিল। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে এ সমস্যা আরও তীব্রতর হচ্ছে। আটকে থাকা পণ্যের কারণে কোটি কোটি টাকা লোকসানের শিকার হচ্ছিল বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। করোনা প্রতিরোধে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও বারবার কথা দিয়েও ভারতীয়রা পণ্য দেয়নি। এসময় আমাদের বিকল্প ভাবনা নিতে হয়।

তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের দাবিতে বাণিজ্য সচল ও সরকারের রাজস্ব আয় স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্যিক বিভিন্ন সংস্থার সাথে যোগাযোগ করি। এসময় সরকারী সংস্থাগুলো সাইডডোর রেল কার্গো চালু এবং বেনাপোল রেলপথে এফসিএল কন্টেনার চালুর গুরুত্ব অনুধাবন করে বাণিজ্যে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।  আশা করা যাচ্ছে দুই একদিনের মধ্যে এ প্রক্রিয়ায় বাণিজ্য চালু হবে। এছাড়া এফসিএল কন্টেইনারও খুব দ্রুত চালু হবে জানান তিনি।

বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার জানান, তার জানা মতে খুব দ্রুত বেনাপোল বন্দরে রেল পথে সব ধরনের পণ্যের আমদানি বাণিজ্য শুরু হবে। রেলপথে পণ্য প্রবেশের পর তা আপাতত বন্দরের হেফাজতে থাকবে। পরে কাস্টমস ও বন্দরের কার্যক্রম শেষে শুল্ক পরিশোধের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা পণ্য খালাস নিতে পারবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০২০
এমকেআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।