রোববার (৭ জুন) তামাকমুক্ত বাংলাদেশ মঞ্চ আয়োজিত ‘আসন্ন বাজেট: জনস্বাস্থ্য ও তামাক কর, রাজস্ব বৃদ্ধি ও আমাদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এই কর বৃদ্ধির পরামর্শ দেন সংসদ সদস্যরা।
সংসদ সদস্যরা বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের কর বৃদ্ধি ও করোনা মোকাবিলায় অতিরিক্ত ৩ শতাংশ সারচার্জ আরোপ করা হলে সরকার অতিরিক্ত ১১ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব পেতে পারে।
তামাকমুক্ত বাংলাদেশ মঞ্চের সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীর সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সংসদ সদস্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আব্দুল মতিন খসরু, অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, আশেক উল্লাহ রফিক, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, খাদিজাতুল আনোয়ার, অধ্যাপক মাসুদা এম. রশীদ চৌধুরী, ওয়াসিকা আয়শা খান ও অপরাজিতা হক। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক প্রমুখ।
ওয়েবিনারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জনাব জাহিদ মালেক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নে কাজ করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। দেশে তামাক ব্যবহার কমলেও এখনো পৌনে ৪ কোটি লোক তামাক ব্যবহার করে। সরকার তামাকখাত থেকে যে পরিমাণ রাজস্ব পায়, তার চেয়ে বেশি অর্থ তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায় ব্যয় হয়ে যায়। তাই তামাকজাত দ্রব্যের কর বাড়াতে হবে। আর কর বাড়ালে অনেকে উচ্চ মূল্যস্তরের পরিবর্তে নিম্ন মূল্যস্তরের সিগারেট ব্যবহার শুরু করেন। এজন্য সিগারেটের মূল্যস্তর ৪টা থেকে কমিয়ে ২টা করতে হবে। অন্যদিকে অনেক জর্দা-বিড়ি কারখানা করজালের আওতায় নেই, বিধায় তাদেরকেও কার্যকর উপায়ে করজালের আওতায় আনা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় এখনো আমাদের দেশে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ অনেক কম। তাই তামাক থেকে আয় হওয়া রাজস্বের একটি অংশ স্বাস্থ্যখাতে দিতে হবে।
ওয়েবিনারের শুরুতে তামাক কর বৃদ্ধির বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে পাঠানো সুপারিশের আলোকে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ মঞ্চ’-র পক্ষ থেকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয় । এতে তামাক-কর ও মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
প্রস্তাবে বলা হয়, সিগারেটের চারটি মূল্যস্তরের পরিবর্তে ২টি মূল্যস্তর ও সবধরনের তামাকজাত দ্রব্যে সম্পূরক শুল্কের পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট শুল্ক আরোপ করতে হবে। এটি বাস্তবায়ন করা হলে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট বাবদ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত রাজস্ব অর্জিত হবে। অন্যদিকে তামাক ব্যবহার করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই তামাকজাত দ্রব্যের ওপর অতিরিক্ত ৩ শতাংশ সারচার্জ আরোপ করা যেতে পারে, যা থেকে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আয় করা সম্ভব হবে।
ওয়েবিনারে অংশ নেওয়া সংসদ সদস্যরা তামাক কর বৃদ্ধির বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে সমর্থন জানান। তামাক কর বৃদ্ধির পাশাপাশি তারা কৃষকদের তামাক চাষের পরিবর্তে অন্যান্য খাদ্যশস্য ও অর্থকরী ফসল চাষে উৎসাহ ও প্রণোদনা দেওয়া ও তামাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের পুনর্বাসনের জন্য অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে মত ব্যক্ত করেন। এছাড়া তামাকের ক্ষতিকর বিষয়ে জনসচেতনতা গড়ে তোলার জন্য কার্যকর তামাকবিরোধী ক্যাম্পেইন ও ই-সিগারেট নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়েও দাবি জানান।
বাংলাদেশ সময়: ০৩০১ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০২০
ডিএন/টিএম/এমএইচএম