দীর্ঘদিন ক্ষতিগ্রস্ত থাকার পর ২০১৯ সাল থেকে কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে আবাসন শিল্প। ১৬-১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধিও অর্জন করে।
এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আবাসন শিল্পের ৪৫৮টি খাতে প্রায় ৩৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত। তাদের অধিকাংশই দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করতেন। করোনার প্রভাবে লকডাউন পরিস্থিতির কারণে নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে তারা এখন কর্মহীন। পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
আবাসন শিল্প স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে অন্যান্য খাতও ক্ষতির মুখে পড়বে। ফলে অর্থনীতিতে লম্বা সময়ের জন্য নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, করোনা ভাইরাসের কারণে ঝুলে গেছে আবাসন খাতের ৫৮ হাজার কোটি টাকার বাজার। এ খাতে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১৫-১৭ শতাংশ। বছরে চাহিদা ১ লাখ ২০ হাজার ফ্ল্যাটের।
এ শিল্পের সঙ্গে সিভিল ওয়ার্ক রড-সিমেন্ট খাতের ১১টি, ইলেকট্রিক খাতের ৩০টি, উড বা কাঠের আসবাবপত্র খাতের ২৫টি, প্লামবিং ওয়ার্ক খাতের ২০টি, টাইলস খাতের ১৩টি, স্যানিটারি খাতের ৩৩টি, পেইন্ট বা রংয়ের খাতের ৬টি, সাইট মেইনটেইনেন্স খাতের ৬টি, হার্ডওয়্যার খাতের ৯৭টি, ইলেকট্রিক মেইনটেইনেন্স ইক্যুইপমেন্ট খাতের ১৮টি, সাব কনট্রাক্ট ৬৪টি, কনসট্রাকশন ইক্যুইপমেন্ট খাতের ১৯টি, লেবার কনট্রাক্ট খাতের ২৬টি, ল্যান্ড ডেভলপমেন্ট খাতের ১০টি, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ওয়ার্ক খাতের ১৫টি, হোম অ্যাপ্লায়েন্স খাতের ৮টি, অফিস স্যানিটারির ৫৭টিসহ মোট ৪৫৮টি খাতের ব্যবসায়ীরা আবাসন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। সবগুলো খাতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
আবাসন খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, অতীতে কখনোই এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি কেউ। করোনার কারণে আবাসন শিল্পের কি পরিমান ক্ষতি হবে তা ধারণা করা কঠিন। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের যে কয়টি শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তার মধ্যে অন্যতম আবাসন শিল্প।
আবাসন ব্যবসায়ী মালিকদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং সোসাইটি অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের কারণে যে ক্ষতি হয়েছে, অতীতের কোনো কিছুর সঙ্গে তার তুলনা করা যাবে না। আমরা ধরে নিয়েছি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ অতিক্রম করছি। সবাই এখন চোখে অন্ধকার দেখছি। ফ্ল্যাট বিক্রি তো দূরের কথা, নির্মাণ কাজই সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। কতদিন এ অবস্থা চলবে বলা যাচ্ছে না। ’
আবাসন ব্যবসায়ীদের দাবি, মধ্যবিত্তের আয় বৃদ্ধি, ভূমি রেজিস্ট্রেশন ফি কমানো, ঋণের সুদ কমানো, সরকারি কর্মকর্তাদের গৃহ ঋণ ও কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ থাকায় আবাসন শিল্পে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হয়েছিল। এসব কারণে গত অর্থবছরে ফ্ল্যাট বিক্রি ২০ শতাংশের মতো বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু করোনার ভয়াল থাবায় সবকিছু থমকে গেছে।
রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রিয়েল এস্টেট খাত। কারণ এই খাতের সঙ্গে অনেকগুলো লিংকেজ শিল্প জড়িত। আবাসন শিল্পের সঙ্গে ৩৫ লাখ নাগরিকের কর্মসংস্থান জড়িত। দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে এখানে কয়েক লাখ শ্রমিক কাজ করেন। আবাসন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে অন্য খাতেও এর প্রভাব পড়বে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘আবাসন ব্যবসায়ীদের বিদ্যমান ঋণের সুদ ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত মওকুফ ও সহজ শর্তে পুনঃতফসিল করা খুবই জরুরি। বর্তমান পরিস্থিতিতে দীর্ঘ মেয়াদী সংকট নিরসনে আবাসন শিল্পে ২০০৭-০৮ সালের মতো হাউজিং রি-ফিন্যান্সিং স্কিম পুনঃপ্রচলন অতি আবশ্যক। রিহ্যাব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, এফবিসিসিআই এবং এনবিআরের সমন্বয়ে গঠিত ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় বাংলাদেশের আবাসন শিল্পের সমস্যা সমাধান এবং সার্বিক উন্নয়নের নিমিত্তে গৃহীত সুপারিশসমূহ অবিলম্বে বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা কামনা করছি। ’
রিহ্যাব সভাপতি বলেন, ‘এই পদক্ষেপ গ্রহণ করলে আমাদের রিয়েল এস্টেট খাত আবার ঘুরে দাঁড়াবে। অন্য লিংকেজ শিল্প আবার গতিশীল হবে এবং বিস্তার লাভ করবে। ফলে অর্থনীতি স্বাবলম্বী হবে। দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য আমরা রিহ্যাবের পক্ষ থেকে জোর দাবি জানাই। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৪ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০২০
এসই/এজে