বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে এ ধরনের প্রত্যাশার কথা উঠে এসেছে।
বৈশ্বিক মহামারির কারণে দুই মাস পুঁজিবাজার বন্ধ থাকার পর লেনদেন চালু হলেও বাজারে সূচকের নেতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আতাউল্লাহ নাঈম বলেন, গত এক দশক ধরে দেশের অর্থনীতির আয়নায় পুঁজিবাজার অস্থিরতার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। স্টেক হোল্ডাররা কথার ফুলঝুরি দিয়ে চেষ্টা করেছেন পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল করার। কিন্তু তারল্য যোগানের ক্ষেত্রে প্রকৃত সিদ্বান্ত কেউ দিতে পারেননি। বর্তমানে যোগ হয়েছে করোনাজনিত দুর্যোগ। যার ঢেউ লেগেছে পুঁজিবাজারেও। তারল্যের অভাবে ধুঁকছে পুঁজিবাজার, যা দৃশ্যমান কয়েকদিনের লেনদেনে।
তিনি আরো বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের বর্তমান অসহনীয় অবস্থা ও সার্বিক দিক বিবেচনায় আসন্ন বাজেটে আকর্ষণহীন অবহেলিত পুঁজিবাজারে কোনরূপ শর্তারোপ বা বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগে সুযোগ দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ হলে দীর্ঘ মন্দা অবস্থায় পতিত পুঁজিবাজারে তারল্য যোগানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বাজারের গতিশীলতা ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি আরো সচল হবে।
করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্যের মতো পুঁজিবাজারেও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে ভঙ্গুর পুঁজিবাজারকে সচল ও গতিশীল রাখতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের প্রস্তাব জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ)।
এ ব্যাপারে সংগঠনের সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, এই সংকট মুহূর্তে বাজারে ফান্ড দরকার আর এক্ষেত্রে বিনা শর্তে বা সামান্য ট্যাক্সের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব আমরা সরকারকে জানিয়েছি। আশা করছি তারা আমাদের এই প্রস্তাবটা বিবেচনায় নেবেন। এতে করে বাজারে যারা বিনিয়োগ করবেন তারা কম দামে শেয়ার কিনে লাভবান হবেন এবং বাজারের গতি সঞ্চয় হবে।
ন্যূনতম কর প্রদান সাপেক্ষে অপ্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য সরকারকে লিখিত প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএমবিএ)।
এ ব্যাপারে সংগঠনটির সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, করোনার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত বিনিয়োগের সুযোগ দিতে হবে। এর মাধ্যমে পুঁজিবাজার গতিশীল হবে এবং দেশের অর্থনীতির মূলধারা উন্নতি হবে।
বৈশ্বিক মহামারির কারণে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সেক্টর ঠিক করে দেওয়া ঠিক হবে না। এটি বিনিয়োগের সুযোগ সব সেক্টরে দিতে হবে বলে জানালেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ডিএসই পরিচালক রকিবুর রহমান।
তিনি বলেন, আমরা জানি আগামী বাজেটে ১০ শতাংশ ট্যাক্সের সুযোগ দিয়ে অপ্রদর্শিত টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হবে। করোনা ভাইরাসের কারণে এই সুযোগটি দেওয়া হচ্ছে। তবে ওই অর্থ বিনিয়োগের জন্য কোন সেক্টর নির্দিষ্ট করে দেওয়া ঠিক হবে না। সবাইকে সবার সুবিধা মতো সব সেক্টরে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে হবে। এতে করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়বে, যা বাজারকে গতিশীল করবে।
আগামী বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বৈশ্বিক মহামারির কারণে পুঁজিবাজারে লেনদেনে স্থবিরতা দেখা গেছে। ২০ থেকে ৩০ বছর আগেও ১০০ কোটি টাকা চেয়ে অনেক বেশি লেনদেন হয়েছে। বর্তমানে লেনদেন ৫০ কোটি টাকাও হচ্ছে। অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দিলে অনেকেই এই সময়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবেন। বাজারে কিছুটা তারল্য বাড়বে। অতীতেও দুইবার অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আশানুরূপ কিছু দেখা যায়নি। তবে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে কর্পোরেট কর কমানোর কোনো বিকল্প নেই। বাজেটে করপোরেট কর কমানোর হলে ভালো কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্তিতে আগ্রহী হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০২০
এসএমএকে/এজে