এমন সংকটে আসছে ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে আগামী পাঁচ বছরের জন্য বিনা প্রশ্নে বৈধভাবে অর্জিত অপ্রদর্শিত টাকা বিনিয়োগের সুযোগ চায় রিহ্যাব। এজন্য নিশ্চিত করতে হবে ভয়মুক্ত পরিবেশ।
আবাসন শিল্পের সঙ্গে জড়িত ৪৫৮টি বিভিন্ন খাতে প্রায় ৩৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। এসব শ্রমিকদের অধিকাংশই দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করতেন। করোনা ভাইরাসের কারণে নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে কর্মহীন শ্রমিকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আবাসন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে অন্যান্য খাতেও এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। ফলে অর্থনীতিতে লম্বা সময়ের জন্য নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের কারণে ঝুলে গেছে আবাসন খাতের ৫৮ হাজার কোটি টাকার বাজার। এ খাতে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১৫-১৭ শতাংশ। বছরে চাহিদা ১ লাখ ২০ হাজার ফ্ল্যাটের। এই খাতে জড়িত ২১১টি ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ বা সহযোগী শিল্প খাত রয়েছে। আর ১৮ খাতে বিভক্ত পণ্যভিত্তিক উপখাত হলো ৪৫৮টি। এসব খাতের মধ্যে অন্যতম সকল প্রকার কাঠ, কাঠের দরজা, পিভিসি দরজা, দরজার ক্লাম, হ্যান্ডেল লক, রাউন্ড লক, সিকিউরিটি লক, ডোর নকার, ডোর ক্লোজার, ডোর ভিউয়ার, টাওয়ার বোল্ট, ম্যাগনেটিক ডোর স্টপার, ব্রাস হিংস, এএস হিংস, এএস স্ক্রু, ব্রাসস্ক্রু, উডেন স্ক্রুনসহ ২৫টি উপখাতে কাঠের সামগ্রী তৈরি করা হয়।
বাংলাদেশ ইলেক্ট্রনিক্স সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোতাহার হোসেন খান বলেন, আবাসনশিল্প ও অন্যান্য শিল্প খাতের কনস্ট্রাকশন কাজ বন্ধ থাকায় বিপর্যয় নেমেছে ইলেক্ট্রনিক্স সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি ব্যবসায়। আবাসন ও কনস্ট্রাকশনখাত ঘুরে দাঁড়ালেই ইলেক্ট্রনিক্স সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি খাত বাঁচবে। জিআই পাইপ, জিআই ফিটিংস, জিআই গেট ভেল্ভ, থ্রেট পাইপ, পিভিসি পাইপ ও ফিটিংস, সলভেন্ট সিমেন্ট, ইউপিভিসি পাইপ অ্যান্ডফিটিংস, পিপিআর পাইপ অ্যান্ড ফিটিংস, পিপিআর গেট ভেল্ভ, সিপিভিসি পাইপ অ্যান্ডফিটিংস, অ্যাডভাইস সলিশন, ম্যানহোল কভার, পানির পাম্পসহ ২০টি উপখাতের প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
বাংলাদেশ এমএস পাইপ অ্যান্ড ফিটিংস ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ শাহবুদ্দিন চৌধুরী বলেন, সাধারণ ছুটি শেষে ১ জুন আমাদের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানগুলোখোলা হলেও কোনো বেচা বিক্রি নেই। পুরো অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। ব্যাংকগুলো থেকেও কোনো প্রকার সহযোগিতা পাচ্ছি না। সামনের দিনগুলোতে আবাসনের অবস্থা আরও খারাপ হবে মনে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে এমএস পাইপ অ্যান্ড ফিটিংস খাতে চরম বিপর্যয় নামতে পারে।
এছাড়াও টাইলস, রাস্টিক টাইলস, মার্বেল, গ্রেনেট, ইয়োলো স্টোন, হোয়াইট সিমেন্ট, মোজাইক চিপস, ক্লাডিং টাইলস, ফেসিং ব্রিকসখাতের ১৩টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যাদের বেচাকেনা একদমই বন্ধ হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশনঅব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল বলেন, করোনা ভাইরাসে আবাসন শিল্প উদ্যোক্তাদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। কাজ নেই, তবুও শ্রমিকদের বেঁচে থাকার স্বার্থে টাকা দিতে হচ্ছে। ২১১টি সহযোগী শিল্প এখন অচল। পুরো খাতজুড়ে করুণচিত্র। এমন পরিস্থিতিতে অর্থনীতিতে নতুন টাকার সরবরাহ ও সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। কারণ এ খাতে এখন টাকার সরবরাহ নেই। ব্যাংকও সহযোগিতা করছে না। অনেক ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার হুমকিতে পড়েছে। সত্যিই ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন। এমন সংকটে আসছে ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে আগামী পাঁচ বছরের জন্য বিনা প্রশ্নে বৈধভাবে অর্জিত অপ্রদর্শিত টাকা বিনিয়োগের সুযোগ চাই। নিশ্চিত করতে হবে ভয়মুক্ত পরিবেশ। অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগে বাড়বে কর্মসংস্থানে গতি আসবে অর্থনীতিতে ঘুঁরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২০
এসই/এজে