২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে পর্যালোচনার সূচনা বক্তব্যে শনিবার (১৩ জুন) সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান এসব কথা বলেন। এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় সানেম।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজেট প্রণয়নের চ্যালেঞ্জগুলোর ওপর আলোকপাত করে ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘অতীতের অভিজ্ঞতা বিবেচনায়, বরাদ্দ বাড়ানো হলেও সেটির বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় থেকে যায়। এক্ষেত্রে বাজেট বাস্তবায়নের ওপর, বিশেষ করে স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বাস্তবায়নের ওপর নিয়মিত তথ্য দেওয়া উচিত। স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাজেটের সঠিক ব্যবহারের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটিও গঠন করা যেতে পারে। ’
বাজেটে স্বাস্থ্যখাতের অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও সক্ষমতার অভাব নিয়ে আলোচনা করা দরকার ছিল বলে মনে করেন ড. সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন পাওয়া এবং জনগণের কাছে সেটি সহজলভ্য করে তোলার জন্যও বাজেটে বরাদ্দ থাকার দরকার ছিল। নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন যারা, তাদের জন্য বাজেটে বিশেষ কিছু নেই এবং এক্ষেত্রে আরও বিস্তৃতভাবে নগদ ও খাদ্য সহায়তা, বেকার ভাতা, ইত্যাদি পদক্ষেপ নেওয়া যেতো। ’
কালো টাকা সাদা করা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের পদক্ষেপ অতীতেও কোনো সুফল বয়ে আনে নি, বরং সৎ লোকদের নিরুৎসাহিত করেছে। তাছাড়া এ ধরনের পদক্ষেপ সংবিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা সেটিও ভেবে দেখা দরকার। আরেকটি বিষয় হলো, বাজেটে পোশাকশিল্পকে যে পরিমাণে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, অন্য রপ্তানি শিল্পকে সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় নি। ’
তিনি সানেমের প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে (এলডিসি) বাংলাদেশের উত্তরণ তিন বছর দেরি করানো দরকার। কারণ এলডিসি থেকে উত্তরণ হয়ে গেলে, বাংলাদেশ বেশ কিছু বাণিজ্য সুবিধা হারাবে, যা অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলতে পারে। ’ এ প্রসঙ্গে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অবাস্তব বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘বাজেটে শহরের ভাসমান দরিদ্রদের জন্য তেমন কিছুই নেই। অন্যদিকে যুব এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্যও যথেষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। প্রণোদনা দেওয়ার পরেও পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের ছাঁটাই হয়েছে। বাজেটে নারীদের জন্য, বিশেষ করে বর্তমান সংকটে দুরবস্থায় পড়া নারীদের জন্য সুর্নিদিষ্ট তেমন কিছু নেই। ’
সানেমের গবেষণা ফেলো মাহতাব উদ্দিন বলেন, ‘মহামারির পর শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার বেড়ে যেতে পারে। বাল্যবিয়েও বাড়তে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গ্র্যাজুয়েশনে দেরি হলে, সেটি তাদের সারা জীবন প্রভাবিত করবে। স্কুলভর্তি কমে গেলে প্রজন্মান্তরে এর প্রভাব পড়বে। এ চ্যালেঞ্জগুলো বাজেটের গতানুগতিক ধারার চিন্তা দিয়ে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। ’
সানেমের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ইশরাত শারমীন বলেন, ‘কালো টাকার জন্য আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। যে প্রবাসী শ্রমিকদের দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে, তাদের দেশীয় অর্থনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বাজেটে আরও মনোযোগ দেওয়া দরকার ছিল। ’
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২০
এসই/এফএম