বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) পোল্ট্রি শিল্পবান্ধব বাজেট পেশ করায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিপিআইসিসি’র সহ-সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, করোনা সংকটে মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত পোল্ট্রি খাতে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ সময়ে একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চার সাপ্তাহিক উৎপাদন ১ কোটি ৭০ লাখ থেকে ১ কোটি ১০ লাখ এবং লেয়ার বাচ্চার উৎপাদন ১৪ লাখ থেকে ৯ লাখে নেমে এসেছে।
‘সার্বিক বিচারে এ খাতে বিনিয়োগকৃত প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল নিঃশেষ হয়ে গেছে। ১৫ থেকে ২০ লাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়ার ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে। এমন সংকটকালে পোল্ট্রি ও প্রাণিসম্পদবান্ধব বাজেট তৃণমূল খামারিদের মাঝে নতুন করে আশা জাগিয়েছে। সরকারের এ আন্তরিক সহযোগিতা পোল্ট্রি শিল্পকে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি যোগাবে। ’
ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এফআইএবি) সভাপতি এহতেশাম বি. শাহজাহান বলেন, সার্বিক বিচারে প্রস্তাবিত বাজেটে আমরা খুশি। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ প্রস্তাবিত বাজেটের পর ইতোমধ্যেই বেশ কিছু ফিড কোম্পানি পোল্ট্রি ও ফিস ফিডের দাম কমিয়ে দিয়েছে। আশা করছি অন্যরাও ক্রমান্বয়ে এ পথ অনুসরণ করবে।
ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএবি) সভাপতি মো. রকিবুর রহমান টুটুল বলেন, করোনার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ও ২০২৫ সাল নাগাদ পোল্ট্রি রপ্তানি শুরু করার প্রয়োজনীয় শক্তি সঞ্চয়ের লক্ষ্যে আমরা ২০৩০ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি সুবিধাসহ সব ধরনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলাম। প্রস্তাবিত বাজেট সে প্রত্যাশা শতভাগ পূরণ না করলেও আশা জাগিয়েছে।
এফআইএবি সাধারণ সম্পাদক মো. আহসানুজ্জামান বলেন, এ মুহূর্তে মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তৃণমূল খামারিদের উৎপাদনে ফিরিয়ে আনা। মূলধন সংকটের কারণে খামারিরা উৎপাদন শুরু করতে পারছেন না। তাই প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনার দিকে আমরা তাকিয়ে আছি। তৃণমূল খামারিরা যেন প্রণোদনার সুবিধা থেকে কোনোভাবেই বঞ্চিত না হন, সে জন্য ভর্তুকি মূল্যে ফিড ও বাচ্চা দেওয়ার প্রস্তাব করছি। ফিড মিল ও ব্রিডারদের মাধ্যমে এ সুবিধা খুব সহজেই পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।
এগ প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইপিএবি) সভাপতি তাহের আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, বাজেটের সুফল যেন প্রান্তিক খামারিদের কাছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া যায় সেটাই এ সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশশের বাংলাদেশ শাখার (ওয়াপসা-বিবি) সভাপতি ফজলে রহিম খান শাহরিয়ার বলেন, প্রণোদনার আওতায় খামারিদের দক্ষতা বৃদ্ধি, উন্নয়নমূলক কার্যক্রমকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। জীব-নিরাপত্তা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে। কাঁচা বাজারে জীবন্ত মুরগি বিক্রি বন্ধ করতে হবে। খামারিদের মাঝে বিনামূল্যে জীবাণুনাশক ও পানি বিশুদ্ধকরণ ওষুধ বিতরণসহ রোগ প্রতিষেধক টিকা সহজলভ্য করতে হবে।
বাংলাদেশ এগ্রো ফিড ইনগ্রেডিয়েন্টস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফিটা) সভাপতি সুধীর চৌধুরী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট পেশ হওয়ার পর থেকে স্থল ও সমুদ্র বন্দরে আমদানিকৃত কাঁচামাল ছাড়করণে জটিলতা হচ্ছে। কর ও শুল্ক সুবিধা থাকা সত্ত্বেও কিছু কিছু পণ্যে কর-শুল্ক দাবি করা হচ্ছে। সৃষ্ট জটিলতায় সীমান্তে পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়ছে, ফলে জরিমানা গুনতে হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমদানিকৃত পণ্যের সর্বোচ্চ মূল্য এমনকি কয়েকগুণ বেশি মূল্য ধরে অ্যাসেসমেন্ট করা হচ্ছে, শুল্ক দাবি করা হচ্ছে।
সাফটা চুক্তির আওতাভুক্ত সুবিধায় পণ্য আমদানিতেও জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। উদ্ভূত এ সব জটিলতা নিরসনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, করোনা মহামারিতে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জীবাণুর বিরুদ্ধে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা। সে জন্য দরকার ডিম, দুধ, মাছ, মাংসের মতো পুষ্টিকর খাদ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত করা। প্রস্তাবিত বাজেট সে বিবেচনায় পোল্ট্রি, মৎস্য ও ডেইরি শিল্পের জন্যই শুধু নয় বরং ভোক্তা সাধারণের জন্যও আশীর্বাদ স্বরূপ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৬ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২০
ইএআর/এইচজে