বিলের বদলে তাদের অনেককে দেওয়া হয়েছে পাটজাত পণ্য। যা আবার বাজারে বিক্রি করতে হয়েছে লোকসানে।
ব্যবসায়ী ও বিজেএমসি’র শাখাগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাগুরায় বিজেএমসি’র চারটি ক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে জেলা সদরে তিনটি এবং শ্রীপুর উপজেলার লাঙ্গলবান্ধে একটি কেন্দ্র রয়েছে। এখানে পাটের মৌসুমে ব্যবসায়ীরা পাট দিয়ে থাকেন। চারটি ক্রয় কেন্দ্রে ব্যবসায়ীদের প্রায় ১০ কোটি টাকার বিল পাওনা রয়েছে। ব্যবসায়ীদের চাপে বিজেএমসি কর্তৃপক্ষ একদিকে বিলের বদলে তাদের বাজারে বিক্রির জন্য শতকরা ১৬ ভাগ ছাড়ে পাটজাত পণ্য দিয়েছে। অন্যদিকে একই পণ্য ২০ ভাগ মূল্য ছাড়ে বাজারে ছেড়েছে বিজেএমসি। ফলে পাট ব্যবসায়ীদের পাটজাত পণ্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লোকসানে বিক্রি করতে হয়েছে।
মাগুরা শহরের পাট ব্যবসায়ী উদয় সাহা বাংলানিউজকে বলেন, বিজেএমসি’র কাছে আমার এক কোটি টাকার বিল বাকি রয়েছে। এর মধ্যে তাদের অনুরোধে আমি ৫০ লাখ টাকার পাটজাত পণ্য নিয়েছিলাম। বাজারে সেসব বিক্রি করতে গিয়ে দেখি, বিজেএমসি আগেই ২০ ভাগ কমিশনে ওই পণ্যগুলো বাজারে ছেড়েছে। পরে বাধ্য হয়ে লোকসানে তা বিক্রি করেছি।
পাট ব্যবসায়ী বিধান সাহা বাংলানিউজকে বলেন, অধিকাংশ পাট ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কৃষকের কাছ থেকে পাট সংগ্রহ করে তা বিজেএমসিকে দেয়। শুধু বিগত বছর নয়, পুরনো বিল বাকি আছে অনেক। বিজেএমিস বিল দিতে যদি এতো দেরি করে, তাহলে ব্যাংক সুদও বাড়তে থাকে। আমি বেশ কিছু টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পাট দিয়েছিলাম বিজেএমসিকে। কয়েক বছর ধরে সুদ টানছি। পাটজাত পণ্য বিক্রি করেছি লোকসানে। তারপরও এখনো নগদ সাত লাখ টাকার বিল পাইনি।
মাগুরা নতুন বাজার এলাকার পাট ব্যবসায়ী টিপু সুলতান বাংলানিউজকে বলেন, আমি এ পর্যন্ত প্রায় এক কোটি টাকার পাট দিয়েছি বিজেএমসি’র নতুন বাজার কেন্দ্রে। এ পর্যন্ত ৮০ লাখ টাকার বিল বাকি রয়েছে। আবার পাটের মৌসুম চলে এলো। আমার ক্ষমতা, মানসিকতা কোনোটাই নেই নতুন করে পাট দেওয়ার।
এদিকে, বকেয়া বিলের দাবিতে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা রাজপথে নেমে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে একদিন মানববন্ধনও করেছেন তারা।
মাগুরা পাট ও ভূষিমাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুস সালাম বলেন, বিভিন্ন কেন্দ্রে মাগুরার পাট ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকার বিল বাকি রয়েছে। কেন্দ্র থেকে পাট মিলে পাঠানো শুরু হয়েছে এরই মধ্যে। আমরা সম্প্রতি কাশিনাথপুরে বিল না দিয়ে পাট নিয়ে যাওয়ার সময় বিক্ষোভ করেছি। পর্যায়ক্রমে আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব।
মাগুরার কৃষি ও প্রকৃতি বিষয়ক বেসরকারি সংস্থা পল্লী প্রকৃতির নির্বাহী পরিচালক শফিকুর রহমান পিন্টু বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর মাগুরায় ৩৫ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সেখানে চাষ হয়েছে ৪৩ হাজার ৮৫ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে বলা যায়। এবার আবহাওয়াও অনুকূলে। আশা করা যায়, উৎপাদনও বাম্পার হবে। কিস্তু ব্যবসায়ীরা যদি বকেয়া বিলের কারণে পাট কিনতে আগ্রহী না হন, বাজার দর তখন কমে যাবে। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা দেশের পাট শিল্পের জন্য আশঙ্কার কারণ হতে পারে। সরকারের এখনই বিষয়টি দেখা দরকার।
বিজেএমসি মাগুরা নতুন বাজার ক্রয় কেন্দ্রের সহকারী ম্যানেজার মশিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, অনেক ব্যবসায়ীর বিল বাকি আছে, এটা সত্য। তবে আমরা পর্যায়ক্রমে বিলগুলো দিয়ে দেই। এ মুহূর্তে আমাদের তহবিলের অবস্থা খুবই খারাপ। আবার গোডাউনে বিপুল পরিমাণ পাটজাত পণ্য অবিক্রিত রয়ে গেছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করি, একটা সমাধান হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০২০
এনটি/এসআই