এদিকে করোনা ভাইরাসকালে এবার কোরবানিতে পশুর চাহিদার পরিমাণ অনেকটাই কমে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে হিসাব কষেছেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। তারপরও শঙ্কিত খামারিরা।
বরিশাল বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গোটা বিভাগে গত বছর চাহিদা অনুযায়ী কোরবানিযোগ্য পশুর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ৪৩ হাজার। এর মধ্যে গৃহস্থালি এবং বিভাগের ১৫ হাজার ১৪৪ জন খামারির কাছ থেকে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৬শ’ পশু স্থানীয়ভাবে সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছিল। বাকি পশু বিভাগের বাইরে থেকে বিশেষ করে কুষ্টিয়া, বাগেরহাট, ঝিনাইদহসহ অন্য জেলা থেকে আনা হয়েছিল।
তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে এবার লক্ষ্যমাত্রার পরিমাণই প্রায় ১ লাখ কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেই হিসাবে এবার প্রায় সাড়ে ৩ লাখ পশু কোরবানি হওয়ার কথা জানিয়েছে বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এবারও আড়াই লাখের মতো পশু গৃহস্থালি এবং বিভাগের ১৯ হাজার ৮০৬ জন খামারির কাছ থেকে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। চাহিদা সাপেক্ষে বাকি পশু বিভাগের পাশের জেলা মাদারীপুর, ফরিদপুর, বাগেরহাট, কুষ্টিয়া এবং ঝিনাইদহসহ অন্য জেলা থেকে সংগ্রহ করা হবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. কানাই লাল স্বর্ণকার বলেন, ‘লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী পশু কোরবানি হলে, সব মিলিয়ে ২০-২৫ শতাংশ পশু বিভাগের বাইরে থেকে আনা প্রয়োজন হবে। ’
তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে এবার পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটেছে। তাই কোরবানির লক্ষ্যমাত্রা কমে গেছে। তবে এতে করে খামারিরা ভালো দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা করলেও লোকসান হওয়ার কোনো কারণ নেই। স্থানীয় উৎপাদনের চেয়ে গতবারের মতো এবারও লক্ষ্যমাত্রা বেশি রয়েছে। ’
এদিকে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কার্যালয়ের প্রধান ডা. মো. নুরুল আলম বলেন, ‘বরিশালে সাধারণ মানুষ কোরবানির পশু দেখে-শুনে কিনতে পছন্দ করেন। সেইসঙ্গে স্থানীয় খামারি ও গৃহস্থালির পশুর প্রতি মানুষের আগ্রহটাও বেশি থাকে। তুলনামূলকভাবে হাটের আগে খামারি ও গৃহস্থালির গরু বেচা-কেনা হয়ে যায়। তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করলে খামারিদের লোকসানের কোনো শংঙ্কা নেই। ’
এদিকে খামারিরা বলছেন, ‘করোনা ভাইরাসের কারণে গত চার মাস ধরে গো-খাদ্যের দাম অনেকটাই চড়া রয়েছে। সেই হিসাবে পশু পালনে গত চার মাসে খরচও বেড়েছে। আর সেই খরচ মিলিয়ে পশুর দামও কোরবানিতে কিছুটা বাড়াতে হবে। আর সেই দর না পেলে লোকসান গুনতে হবে খামারিদের। ’
যদিও লোকসানে পশু বিক্রি করবেন না বলে জানিয়েছেন বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ইল্লা এলাকার খামারি জিয়াউল হক। তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক নিয়মে যারাই লালন-পালন এবং মোটাতাজা করেন, তাদের পশুর স্বাস্থ্য যেমন ভালো হয়, তেমনই আয়ুও দীর্ঘ হয়। তবে গেলো চার মাসে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় পশুর দাম কিছুটা বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। নয়তো লোকসানে খামারিদের গরু বিক্রি করতে হবে। কিন্তু কোনো খামারির পক্ষেই সেটা সম্ভব নয়। ’
যদিও স্থানীয় স্থায়ী হাট ইজারাদাররা বলছেন, ‘কোরবানির ক্ষেত্রে ভালো ও সুস্থ-সতেজ পশু হলে দাম নিয়ে চিন্তার কোনো বিষয় থাকে না। সেক্ষেত্রে আকার-আকৃতি অনুযায়ী দাম কিছুটা বাড়লেও তাতে ক্রেতারা ভ্রুক্ষেপ করেন না। ’
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২০
এমএস/এফএম