এ ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনেই ব্যাংকগুলো গ্রাহক সেবা প্রদান করছে।
থার্মোমিটার দিয়ে গ্রাহকের শরীরের তাপমাত্রা মাপার পর হাতে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করে ব্যাংকের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে।
চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে সুদের হার ৯-৬ শতাংশ বাস্তবায়ন এবং করোনা ভাইরাসের কারণে আয় কমে গেছে ব্যাংকগুলোর। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বেশ কয়েকটি ব্যাংক কর্মী ছাঁটাই করেছে। তবে অধিকাংশ ব্যাংক কর্মী ছাঁটাই না করে অন্যান্য খরচ কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে।
এ বিষয়ে বেসরকারি ব্যাংক এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, খরচ কমানোর অংশ হিসেবে রাজধানীর গুলশান লিংক রোডের এমটিবি স্কয়ার নামে পরিচিতি ভবনটি ছেড়ে দিয়েছি। যেসব শাখায় অতিরিক্ত জায়গা আছে সেগুলো ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। গ্রাহকের নিরাপত্তায় শাখায় আসার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের তাপমাত্রা মেপে হাত স্যানিটাইজড করে ভেতরে প্রবেশ করানো হচ্ছে। শাখার ভিতরে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে লেনদেন করা হচ্ছে।
করোনা ভাইরাসের কারণে একটানা দুইমাস সরকারি বেসরকারি সব অফিসের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও সীমিত আকারে চালু ছিল ব্যাংক। এ সময় দায়িত্ব পালনে কর্মীদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ মেনে লেনদেন চলে ব্যাংকগুলোতে। তারপরও অনেক ব্যাংকার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শেষ না হলেও অফিস আদালত পুরোদমে চালু হওয়ার সঙ্গে বেসরকারি ব্যাংক মালিকরা কর্মীদের বেতন কমানোর উদ্যোগ নেন। বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবি চলতি বছরের ১৪ জুন চিঠি দিয়ে খরচ কমানোর পরামর্শ দেয়।
বিএবির নির্দেশনার পর বেসরকারি খাতের চারটি ব্যাংকে বেতন কমানোর পরে কর্মীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। ফলে বাকি ব্যাংকগুলো বেতন না কমিয়ে অন্যান্য খরচ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বেতন না কমানোর নির্দেশ না দিলেও কর্মীদের উজ্জীবিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
খরচ কমানোর অংশ হিসেবে নতুন করে নিয়োগ, পদোন্নতি বন্ধ, বিলাসবহুল শাখার ভাড়া ভবন ছেড়ে দেওয়া, সিএসআর, গাড়ি বিল, আপ্যায়ন বিলসহ অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে ব্যাংকগুলো। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও অন্যান্য সভা করা হচ্ছে অনলাইনে।
কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে অনেক ব্যাংকের কর্মীদের শিডিউল করে বাসা থেকে অফিস করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কর্মীদের একটানা ১৫ কর্মদিবস অফিস করার পরবর্তী ১৫ কর্মদিবস বাসা থেকে কাজের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার বলেন, কর্মীদের বেতন-ভাতা কমালে গ্রাহক সেবার মান কমে যাবে। তাই বেতন-ভাতা না কমিয়ে আমরা অন্যান্য খরচ কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। গ্রাহকদের ব্যাংকে আসার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের তাপমাত্রা মেপে হ্যান্ড স্যানিটাইজড করে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। লেনদেন করা হচ্ছে শারীরিক দূরত্ব মেনে।
সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভেতরে প্রবেশের আগেই হাত ধুতে হচ্ছে কর্মী ও গ্রাহকদের। একটি বেসরকারি ব্যাংকের শাখায় গিয়ে দেখা গেছে, লেনদেনের সময় ব্যাংকার ও গ্রাহক উভয়ই নিরাপদ দূরত্ব মেনে চলছেন।
এ বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার এহতেশামুজ্জামান বলেন, অপ্রয়োজনে কাউকে ব্যাংকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। যারাই আসছেন নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে কাজ সেরে অফিস ত্যাগ করছেন। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব না যাওয়া পর্যন্ত সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করার অভ্যাস তৈরি করতে হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০২০
এসই/এজে