ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘লাখ টাকার গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে তিনশ’ টাকায়’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০২০
‘লাখ টাকার গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে তিনশ’ টাকায়’

ঢাকা: বাংলাদেশের তৃতীয় প্রধান গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানিপণ্য কাঁচা চামড়ার বাজার ধ্বংসের পথে। ২০১২ সাল পর্যন্ত বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের এ পণ্য প্রতাপের সঙ্গে নিজের জায়গা দখল করে রেখেছিল, কিন্তু ২০১৩ সাল থেকে হঠাৎ করেই রপ্তানিমুখি চামড়া ব্যবসায়ে ধস নামে। দুই-তিন হাজার টাকা মূল্যের একেকটি চামড়ার দাম মুহূর্তের মধ্যে এক হাজারের নিচে নেমে যায়। দাম কমতে কমতে সেই ধস এমন জায়গায় এসেছে যে, বর্তমানে এক লাখ টাকা মূল্যের গরুর চামড়াও বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে তিনশ’ টাকায়।

বুধবার (১৫ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবে ধ্বংসের কবল থেকে চামড়া শিল্প রক্ষার দাবিতে জাতীয় ওলামা পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান বক্তারা।  

বিভিন্ন পরিসংখ্যানের কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, ২০১৩ সালে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা।

পরের বছর তা কমে হয় ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। ২০১৫ সালে সেই দাম কমিয়ে রাখা হয় মাত্র ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। পরের বছর দাম একই থাকেলেও, ২০১৭ সালে এর দাম সর্বনিম্ন ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর ২০১৯ সালে তা নির্ধারণ করা হয় মাত্র ৩০ টাকা।

ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, বর্তমানে সারা দেশ থেকে বছরে ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪.৮৩ শতাংশ গরুর, ৩১.৮২ শতাংশ ছাগলের, ২.২৫ শতাংশ মহিষের ও ১.২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া। এই চামড়ার বেশিরভাগই সংগ্রহ করা হয় কোরবানির ঈদের সময়। কিন্তু ৫৫ জন মানুষের সিন্ডিকেটের হাতে গত ছয় বছর ধরে দেশের সমগ্র চামড়াশিল্প কুক্ষিগত। এদের কারণে এতিম ও দরিদ্র জনগণ তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কওমি মাদ্রাসাগুলো।

সংবাদ সম্মেলনে ওলামা পরিষদের মহাসচিব মাওলানা সাইফুল্লাহ বলেন, সারাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোতে লাখ লাখ এতিম, গরিব, অসহায় শিক্ষার্থীদের থাকা, খাওয়া ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার বিনামূল্যে ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। এসব মাদ্রাসার প্রধান আয়ের উৎস কোরবানির ঈদের পশু, বিশেষ করে গরুর চামড়া থেকে আসে। কিন্তু বর্তমানে গরুর চামড়ার দাম কম থাকায় কওমি মাদ্রাসাগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে চামড়া শিল্প ধ্বংস করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থা হলো, যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। তার হস্তক্ষেপ ছাড়া জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো সমস্যার সমাধান হয় না। ২০১৯ সালে দেশের তৃতীয় প্রধান রপ্তানিমুখী চামড়াপণ্যের এমন মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে গেল, অথচ এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কোনো মাথাব্যথা নেই। এই বিপর্যয়ের পেছনের কারণ কী? কারা এর নেপথ্যে ষড়যন্ত্র করছে? তাদের শাস্তি তো দূরের কথা এ ব্যাপারে কোনো তদন্ত কমিটিও হয়নি। এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। দেশ কী অভিভাবকহীন হয়ে গেল?

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- নূর হোসাইন কাসেমী, সংগঠনের সভাপতি আল্লামা আব্দুল হামিদসহ অন্য নেতারা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০২০
পিএস/এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।