ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পাটকল বিষয়ে সংলাপের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে মেননের আহবান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪১ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০২০
পাটকল বিষয়ে সংলাপের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে মেননের আহবান ওয়েবিনার

ঢাকা: পাটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীদারদের সঙ্গে সংলাপ করে রাষ্টায়ত্ব পাটকল বন্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এবং ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন।

শনিবার(১৮ জুলাই) ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত ‘রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকলের আধুনিকায়ন, না ধ্বংস সাধন? পাটখাত সুরক্ষায় ভাবনা ও করণীয় শীর্ষক’ ওয়েবিনার সভায় তিনি এই আহবান জানান।  

ওয়েবমিনারে বক্তারা বলেন, পাটশিল্প বন্ধ করার মধ্য দিয়ে সমস্ত পাট খাতই ধ্বংস হবে।

শুধু শ্রমিকই নয়, পাটচাষী, কৃষক এবং দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাটকল বন্ধ করে আধুনিকায়নের নামে যে সময় নেওয়া হবে, তাতে বাংলাদেশ বিশ্বে পাট পণ্যের বাজার হারাবে অন্যরা সে বাজার দখল করে নেবে সেটা আর ফিরে পাওয়া যাবেনা।  

সভাপতির বক্তৃতায় রাশেদ খান মেনন পাটকল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, কেবল কতিপয় আমলা- ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে নয়, পাটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল অংশিদারদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।  

ওয়েবমনারে মূলপত্র উপস্থাপন করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত পরিপুর্ণ রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক নয়। পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে পাটই ছিল আমাদের রাজনৈতিক দাবির কেন্দ্রবিন্দু। সংবিধানে মালিকানার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়াত্ব খাতের যে প্রাধান্য রয়েছে এই সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে তাও নাকচ হয়ে গেল।

প্যানেল আলোচক জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক, আত্মঘাতি এবং অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকারক। বিশ্ব যখন পরিবেশবান্ধব অর্থনীতি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেখানে পাটখাতের সম্ভাবনা রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারেও চাহিদা বাড়বে। ‘পিপিপি’র পরিক্ষা বাদ দিয়ে রাষ্ট্রের নিজস্ব উদ্যেগে বিদ্যমান পাটকলগুলোর উন্নয়ন সাধনের আহবান জানান তিনি।  

ঐক্য ন্যাপ সভাপতি পঙ্কজ ভট্টচার্য্য বলেন, লোকশানের কথা বলা বজ্রপাত তুল্য। সত্যটা হলো দুর্নীতি, যার কারণ লোকশান। পাটকল ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও অযোগ্যতা পর্যালোচনা হওয়া প্রয়োজন।  

পাট কমিশনের সাবেক সদস্য খালেদ রব বলেন, পাটকল বন্ধকরার সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক। যদিও সরকার তার জোট সঙ্গিদের সঙ্গে এ নিয়ে কোনো্ আলোচনা করেছে বলে মনে হয় না। তবে পাটের বাজার টিকিয়ে রাখতে হলে কারখানা চালু রাখতে হবে। বাজার একবার হারালে আর ফিরে পাওয়া যাবে না।  


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, পাট
কোনো ‘অস্তগামী’ শিল্প নয়। বিশ্বব্যাংককে সন্তুষ্ট করার জন্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত।

প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা শহিদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, পাটশিল্প আধুনিকিকরণে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের একটি লিখিত প্রস্তাব আমরা সরকার প্রধানের কাছে দিয়েছিলাম, তা নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনাই তারা করলেন না। আমাদের প্রদত্ত সূত্রে বর্তমান উৎপাদনের চাইতে তিনগুন বেশি উৎপাদন এবং শ্রমিক ছাটাইয়ের পরিবর্তে নতুন কর্মস্থানের সুযোগ হতো।

জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কামরূল আহসান বলেন, পাটকল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত আমাদের স্বাধীনতার অঙ্গিকারের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকা। এই সিদ্ধান্ত একেবারেই আমলাতান্ত্রিক পরামশে একক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। পাটখাত রক্ষায় জোরদার রাজনৈতিক আন্দোলন চাই।

শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, জনগনের সম্পদ লুণ্ঠনের প্রক্রিয়া আমরা প্রত্যক্ষ করলাম। এটা লুটপাটের অর্থনীতির ফল। এক প্রজ্ঞাপনে প্রায় ৫২ হাজার শ্রমিককে বেকার করে দেওয়া হলো।  

আলেচনায় আরও অংশগ্রহণ যশোর জুটমিলের সিবিএর সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন রশিদ মল্লিক, হাফিজ জুট মিলের সিবিএ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম, খুলনার প্লাটিনাম জুটমিলের সিবিএ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান, ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টিও পলিটব্যুরোর সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক, সুশান্ত দাস, মাহমুদুল হাসান মানিক, নুর আহমেদ বকুল, কামরূল আহসান, আমিনুল ইসলাম গোলাপ, হাজি বশিরুল আলম, এনামুল হক এমরান, নজরুল ইসলাম হাক্কানী প্রমুখ।


বাংলাদেশ সময়: ০০৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০২০
আরকেআর/এসআইএস


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।