বরিশাল: প্রবাসে থাকাকালীন দেশের বাড়িতে বাবার সহায়তায় বেশ কয়েকবার সৌদি আরবের খেজুরের গাছ লাগিয়েছিলেন, তখন তিনি কোনো আশার আলো দেখাতে পারেননি। এরপর দীর্ঘ ১৭ বছরের প্রবাস জীবন শেষে বাড়ি ফিরে নিজেই চেষ্টা শুরু করেন সৌদির বিশেষ জাতের খেজুরচাষ।
সেই খবর পেরে স্থানীয়দের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ও কৃষিসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রায়ই ভিড় করছেন আল মামুন হাওলাদারের বাড়িতে।
উৎসুক মানুষ ওই বাড়িতে গিয়ে গাছটিতে ধরা কাঁচা খেজুরগুলো দেখে বিমোহিত হচ্ছেন। পরিপক্ক হওয়ার পরে খেজুর খাওয়ানোর যেমন বায়না ধরেছেন, তেমনি আবার অনেকে আল মামুনের কাছ থেকে খেজুরের গাছ নিতে আগ্রহও প্রকাশ করেছেন।
আল মামুনের ভাগিনা শাওন সরদার বাংলানিউজকে জানান, দীর্ঘ ১৭ বছর পরে দেশে এসেছেন তার মামা। পরে তিনি ব্যবসার পাশাপাশি দেড় একর জমিতে আবাদ ও পুকুরে মাছচাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। একইসঙ্গে আম্বার, আজুয়া, সুক্কারি ও মরিয়ম জাতের খেজুর গাছ লাগানোর শুরু করেন। এসব গাছ লাগিয়ে প্রায় সাড়ে চার বছর পর এবারে সর্বপ্রথম মে মাসে আম্বার জাতের খেজুর গাছটিতে ফলন ধরতে শুরু করেছে। গাছে সাতটি ছড়ায় খেজুর ধরেছে। যা এই সাড়ে চার বছরের সাধনার সফলতা হিসেবেই দেখছে সবাই। আর এখন খেজুরগুলোতে কিছুটা পরিপক্ক হওয়ার রং ধরেছে। অল্প সময়ের মধ্যে খেজুরগুলো খাওয়ার উপযোগী হবে বলে তিনি আশাবাদী।
আল মামুন বলেন, সৌদি আরব থেকে এসে কৃষি ব্যবস্থপনার মধ্য দিয়ে নিজেকে সাবলম্বী রাখি। তাতে বেশ সফলতাও পেয়েছি। আমার ক্ষেতের ৪০ হাজার টাকার শুধু ঢেঁড়সই বিক্রি করেছি। এখন পুকুরে মাছ, ক্ষেতে শসাসহ বিভিন্ন ফসল রয়েছে।
ওই চাষি বলেন, বাড়ির সামনের একটি অংশ, যেখানে প্রায় দেড়শ আজুয়া এবং অর্ধশতাধিক আম্বার জাতের খেজুরগাছ ও চারা রয়েছে। এরমধ্যেই এবারে একটি গাছে থোকায় থোকায় মদিনার আম্বার জাতের খেজুর ঝুলছে। এককথায় আমার শ্রমের বিনিময়ে সফলতা এলো। আশা করছি আগামীতের আরও বেশি গাছে খেজুর ধরবে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে শুনেছি যে, সৌদির খেজুরগাছ বালুতে না লাগালে টিকে না। কিন্তু, আমি মাটির সঙ্গে শুধু গোবর ব্যবহার করেছি। আর গোবর দিয়ে মাটিতে লাগানো এসব খেজুর গাছের অনেকগুলোরই ড্যাম বের হয়েছে। যেখান থেকে হওয়া গাছে এর থেকেও অল্প সময়ে ফল ধরবে।
মামুন আরও বলেন, সৌদি আরবের মদিনা শহরের বিশেষ জাতের এই খেজুরের দাম প্রতিকেজি ১৫শ থেকে তিন হাজার টাকা এবং প্রতিটি চারাগাছ দুই থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে সূত্র বলছে, এর আগে ময়মনসিংহের ভালুকায় একচাষি সৌদির খেজুরচাষ করে সফল হয়েছেন। বৃহত্তর দক্ষিণাঞ্চলে এই প্রথম আল-মামুন হাওলাদার সৌদির খেজুরচাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন। যদিও বরিশাল হর্টিকালচার সেন্টারে গেলো কয়েকবছর ধরে সৌদির বিভিন্ন জাতের খেজুর উৎপাদনের চেষ্টা করলেও এখনও সাফল্যের মুখ দেখতে পারেনি।
আল-মামুন হাওলাদার বলেন, অত্যন্ত সুস্বাদু ফলটিকে দেশের মানুষের কাছে সহজলভ্য করাটাই হচ্ছে আমার মূল উদ্দেশ্য।
তবে সরকারি সহায়তারও প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, আধুনিক ও একজন সফল কৃষক হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে। কিছু স্বল্পতার কারণে পিছিয়ে রয়েছি। যেমন এ মুহূর্তে একটি ট্রাক্টর ও সেচ মেশিনের প্রয়োজন। স্থানীয় কৃষিবিভাগকে বলেছি, তারাও আশ্বস্ত করেছেন তবে যত দ্রুত পাবো ততোই আমি সামনে এগোতে পারবো।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্ত মো. জাকির তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, এসব খেজুরের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হলে, আমদানি কমে যাবে এবং আমাদের দেশের কৃষি আরও সমৃদ্ধি ও সাফল্যের পথে এগোবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০২০
এমএস/এএটি