ঢাকা: কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সারাদেশেই ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে এবং এসএমই খাতের উদ্যোক্তারা এখনও প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে আশাব্যঞ্জক পরিমাণে ঋণ সহায়তা পাননি। এ অবস্থা মোকাবিলায় এসএমই লিংকেজ নীতিমালা প্রণয়ন, দেশের অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের দ্রুততার সঙ্গে প্রণোদনার প্যাকেজ থেকে ঋণ সহায়তা নিশ্চিতকরণ এবং কোভিড সময়ে বকেয়া ট্যাক্স, ভ্যাট, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির বিল এক বছর স্থগিত রেখে পরবর্তী বছরে তা কিস্তিতে পরিশোধের আহবান জানিয়েছেন পুরোনো ঢাকার ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারা।
বুধবার (২২ জুলাই) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘পুরোনো ঢাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের অবদান বজায় রাখার লক্ষ্যে চলমান পরিস্থিতিতে সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সমাধানের জন্য করণীয় নির্ধারণে এলাকাভিত্তিক ও বিশেষায়িত ব্যবসায়ী সমিতিসমূহের সঙ্গে মতবিনিময়’ শীর্ষক ওয়েবিনারে ব্যবসায়ীরা এসব কথা বলেন।
এসময় ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি ও আনোয়ার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসেন খালেদ সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
ব্যবসায়ীরা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সারাদেশেই ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে এবং উদ্যোক্তারা এখনও সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণে ঋণ সহায়তা পাননি। এ অবস্থা মোকাবিলায় দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের দ্রুততার সঙ্গে প্রণোদনার প্যাকেজ থেকে ঋণ সহায়তা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি ট্যাক্স, ভ্যাট এবং বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির বিল কিস্তিতে পরিশোধের আহবান জানান।
এছাড়াও বক্তারা ব্যাংকের পাশাপাশি অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে উদ্যোক্তাদের ঋণ সহায়তা পাওয়ার উদ্যোগ গ্রহণের উপর জোরারোপ করেন।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে হোসেন খালেদ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চালিকাশক্তি চলমান রাখা, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছে এসএমই খাতের উদ্যোক্তাবৃন্দ এবং এ খাতের উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড চালু রাখতে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে হবে। এজন্য বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ট্যাক্স, ভ্যাট এবং বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি প্রভৃতির বিল কিস্তিতে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের সাপ্লাই চেইনে বাংলাদেশের এসএমই পণ্য ক্রয় করতে হবে।
তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ সহায়তা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃতহবিলের আওতায় ১.৫%-২% হারে ঋণ সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করলে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধা দিতে আরো উদ্যোগী হবে। একইসঙ্গে এসএমইদের প্রশিক্ষিত জনবল তৈরির জন্য একটি প্রশিক্ষণ একাডেমি স্থাপনেরও আহবান জানান। এ অবস্থা উন্নয়নে তিনি পার্শ্ববর্তীসহ অন্যান্য দেশ কি করছে, তা থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়ার আহবান জানান।
ডিসিসিআইর সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাবৃন্দ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারের ঘোষিত প্রণোদনার প্যাকেজ থেকে এখাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ সহায়তা প্রদানে ব্যাংক সমূহও তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের পুরোনো ঢাকার ব্যবসায়ীদের সার্বিক সহায়তা প্রদানে ব্যাংক ও সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি এসএমই লিংকেজ নীতিমালা প্রণয়ন এবং এ খাতের উদ্যোক্তাদের ট্যাক্স, ভ্যাট এবং বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির প্রভৃতির বিল এক বছর স্থগিত রেখে, পরবর্তী বছরের কিস্তিতে প্রদানের সুযোগ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ পোশাক প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি মো. আলাউদ্দিন মালিক, ঢাকা শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি হোসেন এ সিকদার, বাংলাদেশ লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মো. আব্দুর রাজ্জাক, বাংলাদেশ ব্রেড, বিস্কুট ও কনফেকশনারী প্রস্তুতকারী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন এবং বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো. গোলাম মওলা অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ পোশাক প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি ও ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সহ-সভাপতি মো. আলাউদ্দিন মালিক বলেন, পহেলা বৈশাখ ও ঈদুল ফিতর সময়ে লকডাউন থাকার কারণে বন্ধ ছিল, ফলে এখাতের উদ্যোক্তাবৃন্দ উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারেনি, যার কারণে এখাতের উদ্যোক্তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই এ খাতের উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে আর্থিক নিশ্চিতকরণসহ ঈদুল আজহা উপলক্ষে শপিংমল ও দোকানসমূহ সন্ধ্যা ৭টার পরিবর্তে এক ঘণ্টা বাড়িয়ে দেওয়ার আহবান জানান।
বাংলাদেশ লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের উদ্যোক্তারা ইতোমধ্যে উৎপাদিত পণ্য ও সেবা এখন বিক্রি করতে পারছে না। প্রণোদনার প্যাকেজ ঘোষণা করা হলেও এ বিষয়ক নির্দেশনা এখনও স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাংক কর্মকর্তাবৃন্দ অবগত না হওয়ার ফলে এ প্যাকেজ থেকে উদ্যোক্তারা ঋণ সহায়তা পাচ্ছে না এবং এমতাবস্থায় উদ্যোক্তাদের অন্তত এক বছরের জন্য ভ্যাট এবং বিদ্যুৎ বিল মৌকুফের প্রস্তাব করেন।
বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো. গোলাম মওলা বলেন, এখাতের উদ্যোক্তাবৃন্দ প্রণোদনার প্যাকেজ থেকে এখনও ঋণ সুবিধা পায়নি এবং বছরের শুরুতে সরকারের পক্ষ থেকে সিঙ্গেল ডিজিট ঋণ সুবিধা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হলেও উদ্যোক্তারা সেটা পেতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০০২৫ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২০
জিসিজি/আরএ