ঢাকা: করোনা পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সুবিধা গ্রহণে শিল্পায়ন কৌশল এবং বাণিজ্য কৌশলের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ‘কমপ্রিহেনসিভ ইকোনোমিক ট্রিটি’ স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা মনে করেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করতে ইকোনোমিক ডিপ্লোমেসিতে গুরুত্ব দিয়ে এফটিএ, পিটিএ ও টিকফা প্রভৃতি চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিল পরিশোধ পদ্ধতি যুগোপোযোগী করে ‘ফ্রি ট্রেড ওয়ারহাউজ জোন’ চালু করার প্রস্তাব করেন তারা।
শনিবার (২৫ জুলাই) রিসারজেন্ট বাংলাদেশ আয়োজিত ‘কোভিড-১৯ সময়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য: বাংলাদেশে-এর প্রভাব এবং উত্তরণ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ। ওয়েবিনার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি শামস মাহমুদ।
স্বাগত বক্তব্যে বিজনেস ইনিশিয়েটিভ ফর লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড)-এর চেয়ারপার্সন আবুল কাসেম খান বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের টিকে থাকার জন্য ব্যবসা পরিচলনার সব সূচকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য উন্নতি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এজন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। যদি আমরা করতে ব্যর্থ হই, করোনা পরবর্তী সময়ের বাণিজ্য সুবিধা অর্জনে আমরা ব্যর্থ হবো।
মূল প্রবন্ধে ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, বিশ্বের বেশ কিছু বড় কোম্পানি চীন থেকে তাদের কারখানা এবং ক্রয়াদেশ সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। যেটি আমাদের দেশের জন্য বড় সুযোগ এবং এ ধরনের সুযোগ গ্রহণে আমাদের কার্যকর উদ্যোগ এখনই নিতে হবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে ইকোনোমিক ডিপ্লোমেসির উপর আরও গুরুত্ব দেওয়া এবং এফটিএ, পিটিএ ও টিকফা প্রভৃতি চুক্তির দ্রুততম বাস্তবায়নের আহ্বান জানান ডিসিসিআই’র সভাপতি।
প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে তোফায়েল আহমেদ বলেন, করোনার ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে এবং তার প্রভাব আমাদের অর্থনীতিতেও এসেছে। গত অর্থবছরে আমাদের রপ্তানি আয় ছিল ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এ বছর সেবাখাতসহ রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ৬৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর সম্মানিত ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, স্বল্পন্নোত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ হলে আমাদের পণ্যের উপর ১২ শতাংশ শুল্কারোপ করা হবে। যেখানে ভিয়েতনাম শূণ্য শুল্ক সুবিধা নিয়ে পণ্য রপ্তানি করবে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং একটি বিষয়। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিল্পায়ন কৌশল এবং বাণিজ্য কৌশলের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে যা আমাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সক্ষমতা বাড়াবে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ‘কমপ্রিহেনসিভ ইকোনোমিক ট্রিটি’ স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধির প্রস্তাব করেন।
এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের অব্যবস্থাপনার ফলে আমাদের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। সেখানে আমাদের অবশ্যই উন্নতি করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারের বাংলাদেশি পণ্যের অভিগম্যতা বাড়ানো এবং স্থানীয় চাহিদা বাড়ানোর উপরও জোরারোপ করেন।
মুক্ত আলোচনায় এমসিসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবীর বলেন, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের বিদ্যমান সমস্যা দ্রুত সমাধানকল্পে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব এবং ব্যবসায়িক নেতাদের নিয়মিত বৈঠক আয়োজনের প্রস্তাব করেন।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সেচেঞ্জ-এর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে এর বহুমুখীকরনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পসমূহ দ্রুত বাস্তবায়ন এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন করতে হবে। বেসরকারি খাতে দীর্ঘময়োদী ঋণ সহায়তা নিশ্চিতকল্পে পুঁজিবাজারের বিদ্যমান নীতিমালা সংষ্কার ও সক্ষমতা বাড়ানো। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের ব্রান্ডিং বাড়ানোর জন্য বিশেষ করে বিদেশে নিয়োজিত বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
এছাড়া এনার্জি প্যাক গ্রুপ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন রশিদ, ডিজিকন টেকনোলোজিস লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের সভাপতি ওয়াহিদুর রহমান শরীফ, পলিসি এক্সেচেঞ্জয়ের চেয়ারম্যান ড. এম মাশরুর রিয়াজ এবং উত্তরা মটরস্ লিমিটেড-এর হেড অব বিজনেস প্ল্যানিং নাইমুর রহমান অনুষ্ঠানে নির্ধারিত আলোচক হিসেবে অংশ নেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০২০
জিসিজি/এনটি