ঢাকা: করোনা সংকটের ফলে সৃষ্ট অর্থনীতি ও শ্রম বাজারের অভিঘাত মোকাবিলায় শ্রমজীবী মানুষ এবং এসএমই উদ্যোক্তাদের টিকিয়ে রাখতে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের চিত্র এর ব্যতিক্রম নয় বলে জানান তিনি।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, করোনার প্রভাবে বৈশ্বিক এসএমইখাতে উৎপাদন ও বিপণন সবেচেয়ে বেশি বাধাগ্রস্ত হয়েছে এবং এ খাতের হাজার হাজার মানুষের জীবন ও জীবিকা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) এসএমই ফাউন্ডেশন এবং ফ্রাইডরিচ-ইবার্ট-স্টিফটাং এর বাংলাদেশ কান্ট্রি অফিস আয়োজিত ‘করোনা মহামারি ও এসএমই: অভিঘাত প্রশমন নীতিমালা এবং ভবিষ্যত বিতর্ক-বাংলাদেশে প্রভাব এবং বিশ্বের প্রতিক্রিয়া থেকে শিক্ষা’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন শিল্পমন্ত্রী।
তিনি বলেন, করোনার ফলে এসএমইখাতের অভিঘাত মোকাবিলায় সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। এ খাতের শিল্প উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের উজ্জীবিত করে নিরবচ্ছিন্ন সাপ্লাই চেইন অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এ প্রণোদনা কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে দেশে ধীরে ধীরে এসএমইখাত ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, চিত্তাকর্ষক ডিজাইনের পাশাপাশি গুণগতমান ও মূল্যের বিচারে সাশ্রয়ী হওয়ায় বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের এসএমই পণ্য বিশ্ববাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সক্ষমতা বেশি। বিশেষ করে, বাংলাদেশে এসএমই শিল্পখাতকে জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। এখাত কর্মসংস্থান, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, নারীর আর্থিক ক্ষমতায়ন এবং রপ্তানি আয় বাড়াতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।
ওয়েবিনারে ফ্রাইডরিচ-ইবার্ট-স্টিফটাং এর বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ টিনা ব্লম বলেন, কোভিড-১৯ এর প্রভাবে সারা বিশ্বেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খুব শিগগিরই এ রোগের প্রাদুর্ভাব কমে যাবার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না বলে অর্থনীতিতে এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হবার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে দৈনন্দিন কাজ ও ব্যবসা পরিচালনার ধরন বদলে যেতে শুরু করেছে। করোনার অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের প্রয়োজন ও চাহিদার আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেন টিনা ব্লম।
ওয়েবিনারের মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, এসএমই খাতের অর্ধেক শিল্প প্রতিষ্ঠানই দেশের বড় দুটি শহরে অবস্থিত। অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা ও টেকসই উন্নয়নের জন্য এসএম ইখাতকে সম্প্রসারিত করার কোন বিকল্প নেই।
এসএমই ফাউন্ডেশনে চেয়ারপার্সন ড. মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেনে এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম এবং ফ্রাইডরিচ-ইবার্ট-স্টিফটাংর-এর বাংলাদেশ কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ মিজ টিনা ব্লম।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনানারি প্রফেসর ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অরিজিৎ চৌধুরী, অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ, চিটাগাং উইম্যান চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মনোয়ারা হাকিম আলী, ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল করিম মুন্নাসহ দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তা, এসএমই বিশেষজ্ঞ, বরেণ্য অর্থনীতিবিদরা অনলাইনে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২০
জিসিজি/এমজেএফ