ফেনী: আর্থিক সংকট ও মাঠ পর্যায়ে কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ করছেন ফেনীর পরশুরাম উপজেলার আখ চাষিরা।
চাষিদের তথ্যমতে, মাঠ পর্যায়ে কৃষি বিভাগের সহযোগিতা বা তদারকি তারা পাননি।
উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের গদানগর গ্রামের আখ চাষি মো. আজম বলেন, দীর্ঘ ২৩ বছর তিনি আখ চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে কখনো কৃষি বিভাগ থেকে কেউ এসে আমার আখের ক্ষেত পরিদর্শন করেননি। এমনকি কোনো ধরনের ভর্তুকিও পাইনি। আখ ক্ষেতে রোগবালাই দেখা দিলে স্থানীয় বাজার থেকে ওষুধ প্রয়োগ করি।
তিনি জানান, চলতি মৌসুমে ৩৬ শতক জমির আখ কাটার খরচ বাদ দিয়ে ২০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। নতুন মৌসুমে ৬০ শতক জমিতে রোপণের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন তিনি। তবে লাভের পরিমাণ নিয়ে হতাশা তিনি।
বেছু মিয়া নামে অপর এক চাষি জানান, তিন বছর ধরে আমন চাষ ছেড়ে আখ চাষ করছেন নিজের ৪০ শতক জমিতে। এর মধ্যে এক বছর গুড় তৈরির জন্য কাজ করলেও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও অর্থ সংকটের জন্য তাকে লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে। পর্যাপ্ত অর্থ সহযোগিতা ও কৃষি বিভাগের তদারকি পেলে আগামীতে গুড় তৈরি করা আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।
আখের বাজার নিয়ে উপজেলার বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের চাষি আব্দুল মমিন বলেন, এখানে আখ চাষিদের স্থানীয় বাজারই আখ বিক্রির একমাত্র ভরসা।
মাঠ পর্যায়ে চাষিদের সহযোগিতা প্রসঙ্গে উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সামসুল হুদা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা পরিদর্শন করে বিভিন্ন রোগবালাই সম্পর্কে চাষিদের অবগত করে ওষুধ প্রয়োগের পরামর্শ দিয়ে থাকি।
পরশুরাম উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, উপজেলার তিন ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় চলমান মৌসুমে ১৮ হেক্টর আখ কর্তন করা হচ্ছে। এর অর্ধেক আখই চাষ হয়েছে মির্জানগর ইউনিয়নে।
সূত্র আরও জানায়, কৃষি বিভাগের হিসেব মতে নতুন মৌসুমে উপজেলায় এবার ২০ হেক্টর জমিতে আখ লাগানো হবে।
চাষিরা জানান, প্রতি কানিতে (৪০ শতক) গড়ে খরচ হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। প্রতি কানিতে আখের সংখ্যা হয় প্রায় এক হাজার। প্রতিটি আখের বর্তমান দাম ৩৫ থেকে ৮৫ টাকা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, কৃষির অন্যান্য খাতে প্রণোদনা থাকলেও উপজেলায় আখ চাষে এখনো এমন কোনো প্রকল্প নেই। তবে চাষিদের পরামর্শ ও মাঠ পর্যায়ে সহযোগিতা করতে আমরা সর্বদা প্রস্তুত আছি।
আখ চাষিদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তোফায়েল আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, চাষিরা যদি কৃষি বিভাগ থেকে কৃষক কার্ড সংগ্রহ করে তাহলে তারা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি বিভাগ আখ চাষের উপর প্রশিক্ষণ দিতেও প্রস্তুত আছে।
তিনি আরও জানান, আখ চাষিদের জন্য জেলায় নির্দিষ্ট করে এখনো প্রণোদনামূলক কোনো প্রকল্প নেই। তবে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আলাদা একটি প্রকল্প করার সম্ভাবনা আছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০২০
এসএইচডি/আরআইএস