ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সিংড়ায় দ্বিতীয় দফা বন্যায় ক্ষতি প্রায় ২০০ কোটি টাকা

মোঃ মামুনুর রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০২০
সিংড়ায় দ্বিতীয় দফা বন্যায় ক্ষতি প্রায় ২০০ কোটি টাকা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা। ছবি: বাংলানিউজ

নাটোর: নাটোরের সিংড়া উপজেলায় দ্বিতীয় দফার বন্যায় মৎস্য, কৃষি, প্রাণিসম্পদ, রাস্তা-ঘাটসহ অবকাঠামো খাতে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।  

স্থানীয়দের এসব ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে সরকারিভাবে বৃহৎ কর্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে যথাযথ প্রকল্প গ্রহণ ও আর্থিক প্রণোদনার মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান কিছুটা করা সম্ভব হবে।  

মঙ্গলবার (০৬ অক্টোবর) দুপুরে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি), সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), স্থানীয় কৃষি ও মৎস্য বিভাগ বাংলানিউজকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।  

সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাসরিন বানু বাংলানিউজকে জানান, দ্বিতীয় দফার বন্যায় গত বুধবার মধ্য রাতে সিংড়া পৌর শহরের শোলাকুড়া এলাকায় বাঁধ ভেঙে ১৯টি বাড়ি সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়। এসময় ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরো ২৫টি বাড়িঘর। ইতোমধ্যেই ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী। পর্যায়ক্রমে আরো সহায়তা দেবেন তিনি। এজন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন রয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয়ে সব সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে পুনর্বাসিত হন সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।  

এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বন্যার পানির স্রোতে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় শোলাকুড়া, সোহাগবাড়ি, কতুয়াবাড়ি, মহেশচন্দ্রপুরসহ কয়েকটি গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে। একইভাবে তাজুপর ইউনিয়নের হিয়াতপুর এলাকায় বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম। এতে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি জীবনযাপন করছেন। এছাড়া বাঁধ ভেঙে অর্ধশত ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।  

তবে তাদের জন্য উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মোট ৩৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রে সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। তবে অনেকেই আত্মসম্মানের কারণে এসব খাদ্য সহায়তা নিচ্ছেন না। ফলে তারা মানবিক জীবনযাপন করছেন।  

নাটোর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহা. শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, দুই দফা বন্যার কারণে তাদের ইতোমধ্যে প্রায় ৫০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি সাধন হয়েছে বলে প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের সঠিক তালিকা প্রস্তুত করার কাজ চলমান রয়েছে। আর এ পর্যন্ত  প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে তারা জানতে পেরেছেন। আরো সঠিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নির্ণয়ের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।  

অন্যদিকে এ বছর বন্যায় সড়ক ও জনপথের অধীনে সিংড়া-বলিয়াবাড়ি, সিংড়া-তাজপুর সড়কের বিভিন্ন অংশে ভাঙনে প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে জানিয়েছেন নাটোর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহিম। তারা আরো সঠিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা নির্ণয় করছেন। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার উন্নয়নে আর্থিক চাহিদা পাঠাবেন।      

নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু রায়হান বাংলানিউজকে জানান, এবারের বন্যায় আত্রাই নদী, গুরনই, বারনই, নাগর ও গোদাই নদীর বিভিন্ন বাঁধ ভাঙনে অন্তত ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। বন্যার পানি নেমে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলো মেরামত করা হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ক্ষয়ক্ষতি হিসাবসহ মেরামত বা উন্নয়ন কাজের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ চাহিদা পাঠানো হবে।  

সিংড়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. সাজ্জাদ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এই উপজেলায় বন্যায় ৩ হাজার ২০০ হেক্টর রোপা আমন এবং ৩০ হেক্টর সবজি ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।  

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ওয়ালী উল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, প্রথম দফায় এই উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার পুকুরের মাছ ভেসে যায়। দ্বিতীয় দফার বন্যায় আরো দেড় হাজার পুকুর ভেসে গেছে। এতে মৎস্যচাষিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেক মৎস্যচাষি পথে বসেছেন। অনেকের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। এ খাতে তার উপজেলায় প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে সঠিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নির্ণয় করার কাজ চলমান আছে।  

সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম শফিক বাংলানিউজকে জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী পক্ষ থেকে আর্থিক অনুদান ও খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করার কাজ চলছে। সঠিক সময়ে তাদের পুনর্বাসন করা হবে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য  ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বাংলানিউজকে জানান, ২০১৭ সালে যেভাবে বন্যা মোকাবিলা করা হয়েছে। ঠিক একইভাবে এবারের বন্যায় মোকাবেলা করা হবে। বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষের পুনর্বাসন ও খাদ্য সহায়তা দেওয়ার জন্য সরকার প্রস্তুত রয়েছেন। চলনবিল এলাকায় বন্যাদুর্গত ও ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে পুনর্বাসন করা হবে। সেই লক্ষ্য নিয়ে তিনি কাজ করছেন।    

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।